আমাদের চারপাশে নানা ধরনের প্রাণি আছে। আপাতদৃষ্টিতে অনেক প্রাণিকেই তেমন বিপজ্জনক মনে হয় না। কিন্তু এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু প্রাণি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক প্রাণির কথা তুলে ধরা হয়েছে। ১. মশাসামান্য মশার কামড়কে অনেকে কোনো গুরুত্বই দেন না। যদিও মশা আমাদের কত ক্ষতি করে তা জানলে আপনি হয়ত মশার দিকে আর সেভাবে তাকাবেন না। পৃথিবীতে মানুষের মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী প্রাণির নাম মশা। এ প্রাণিটি প্রতিবছর সাড়ে সাত লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগ হয়। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মশার কারণে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এই রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর সদ্যজাত শিশু মাইক্রোসেফেলি রোগে আক্রান্ত হয়। এতে শিশুদের মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির হয়। ২. মানুষমানুষই মানুষের বড় শত্রু। আর এ কথাটি যে মোটেই ভুল নয় তার প্রমাণ পরিসংখ্যান। প্রতিবছর মানুষের হাতেই প্রায় ৪ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ খুন হচ্ছে। ৩. সাপসাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে খুব স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাপের কামড়ে বছরে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। ৪. কুকুরকুকুর প্রভুভক্ত প্রাণি। তবে আপনি কিভাবে প্রাণীটিকে পুষছেন কিংবা রাখছেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কুকুর নিরাপত্তার কাজসহ নানা ধরনের জীবন রক্ষাকারী কাজে পারদর্শী। কিন্তু কুকুরই আবার আমাদের জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। কুকুরের জলাতঙ্ক হলে তা কোনো মানুষকে কামড়ালে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে। জলাতংক রোগে প্রতিবছর ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।৫. স্বাদুপানির শামুকস্বাদুপানির শামুক প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এটি মূলত প্যারাসাইটিক পরজীবী বহন করে। এটি মানুষের দেহে চলে এলে পেটের মারাত্মক ব্যথা তৈরি হয় এবং মানুষের মৃত্যু হয়। এ রোগে বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ৬. ছারপোকাঅ্যাসাসিন বাগ নামে এক ধরনের ছারপোকা খুবই বিপজ্জনক। একে কিসিং বাগও বলা হয়। এটি চ্যাগাস ডিজিজ নামে একটি রোগ বহন করে। এ রোগে বছরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।৭. টিসেটসি মাছিআফ্রিকার মাছি টিসেটসি মারাত্মক একটি রোগের জন্য দায়ী। স্লিপিং সিকনেস নামে এ রোগে মারাত্মক মাথাব্যথা, জ্বর, অস্থিসন্ধি ব্যথা, চুলকানি ইত্যাদি দেখা যায়। পরবর্তীতে মস্তিষ্কের আরও কিছু জটিলতা তৈরি হয়, যা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এ রোগে বছরে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ৮. গোলকৃমিগোলকৃমি মানুষের দেহের অভ্যন্তরে বাস করে এবং প্রচুর মানুষের মৃত্যু ঘটায়। প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী গোলকৃমি।৯. কুমিরআফ্রিকায় প্রতিবছর প্রচুর মানুষের মৃত্যু ঘটে কুমিরের কারণে। এই সংখ্যা প্রায় এক হাজার।১০. ফিতাকৃমিফিতাকৃমি এমন এক প্রাণি, যার দেখা পাওয়া মুশকিল। কিন্তু অন্তরালে থেকে এটি বহু মানুষের মৃত্যু ঘটায়। পেটের ভেতর এটি সংক্রমণ ঘটায় এবং বছরে প্রায় ৭শ’ মানুষের মৃত্যু ঘটায়।১১. জলহস্তিজলহস্তি একটি হিংস্র প্রাণি। এটি আফ্রিকায় প্রচুর মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এমনকি চলন্ত নৌকাকেও হামলা করতে ছাড়ে না এটি। প্রতিবছর প্রায় ৫শ’ মানুষের মৃত্যু হয় জলহস্তির আক্রমণে। ১২. হাতিহাতিকে শান্ত-শিষ্ট প্রাণী মনে হলেও হঠাৎ করেই হাতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। আর প্রতিবছর হাতির আক্রমণে পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা যায়। অবশ্য মানুষের আক্রমণে প্রতিবছর এর চেয়েও বেশি হাতি মারা যায়। ১৩. সিংহবনের রাজা সিংহ বিনা কারণে মানুষকে আক্রমণ করে না বলেই জানা যায়। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সিংহের আক্রমণে প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। পরিসংখ্যানে জানা যায় সিংহের আক্রমণে বছরে ২২ জনের বেশি মানুষ মারা যায়।১৪. নেকড়েবিশ্বের বিপজ্জনক প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম নেকড়ে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাস করে। প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ১০ জন মানুষ নেকড়ের আক্রমণে মারা যায়।১৫. হাঙরহাঙর বিশ্বের বিপজ্জনক প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। এ প্রাণির আক্রমণে গত বছর ছয়জনের মৃত্যু হয়। তবে হাঙর বিপজ্জনক প্রাণি হলেও খুব একটা যে আক্রমণ করে তা নয়। মূলত এদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলেই চলে।টিটিএন/এমএস
Advertisement