ফজরের আজানের পরপরই ঘুম থেকে উঠেছেন আয়শা বেগম। বিশ্রামের সুযোগ পাননি। দুপুরে ৩০ মিনিট খাবার বিরতি নিয়ে আবারো পানির কলসি (ধাবতজাতীয় পানির পাত্র) কাঁখে তুলেছেন। ছুটছেন দ্রুত পায়ে। ওপাশ থেকে আরেক কলসিতে পানি ভরে এগিয়ে দিচ্ছেন স্বামী রমজান। গত ১০ দিন ধরে গাবতলী গরুর হাটে এভাবেই পানি নিয়ে কারবার করছেন আয়েশা-রমজান দম্পতি। বৃস্পতিবার দুপুর নাগাদ এই দম্পতির পানি বিক্রি করে প্রায় ১ টাকা ২০০ টাকা আয় হয়। বেলা ২টার দিকের কথা। তাপ বাড়িয়ে সূর্য যেন অতি নিকটে চলে এসেছে। দেশের সর্ববৃহৎ গরুর হাট গাবতলীর অবস্থা একেবারেই কাহিল। গরমে ছটফট করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। গরমে অতিষ্ঠ হাটের মূল আকর্ষণ গরুগুলোও। দৃষ্টি যেদিক যায়, গরু ছাড়া কিছুই যেন চোখে পড়ে না। অসহনীয় গরমে হাঁপিয়ে ওঠা গরুর প্রাণ বাঁচাতে বিক্রেতেরাও হিমশিম খাচ্ছেন। এ সুযোগেই পানি ফেরি করে বিক্রি করে আয় করছেন অর্ধশত নারী। তাতে সহায়তা করছেন পুরুষরাও। হাটের কাছে পাম্প থেকে পানি এনে গরুর জন্য বিক্রি করা হয়। প্রতি কলসি ১০ টাকা দরে বিক্রি করে অনেকেই এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করেন প্রতিদিন। অন্যান্য সময় পানির ব্যবসা হলেও কুরবানির ঈদ উপলক্ষে তিন সপ্তাহ চলে জমজমাট। দিন শেষে কলসিপ্রতি একটি নির্দিষ্ট টাকা দিতে হয় পানির পাম্প মালিককে। পঞ্চাশ বছরের ওয়াজিফা বেগম। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল। সকাল থেকে পানি টেনে অনেকটাই ক্লান্ত। কলসি রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন মাটিতে বসেই। বলেন, ‘থাকি পাশের বস্তিতেই। বস্তির অনেকেই পানি বেঁচে এহানে। সারা বছরই এহানে গরুর জন্য পানি বিক্রি অয়। কুরবানি আইলে বেচা কয়েকগুণ বাইড়া যায়। বাড়ে পানির দামও। আজ দুপুরের দিকে আইছি। ২০০’র মতো টাকা বেঁচাইতে পারছি। সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো বেঁচতে পারুম।’ এএসএস/এএইচ/আরআইপি
Advertisement