হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন। প্রত্যেক আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যবানের ওপর হজ ফরজ। আর হজের অন্যতম আনুষ্ঠানিকতা হলো আরাফার ময়দানে অবস্থান, খুতবা শ্রবণ, দোয়া ও ইস্তিগফারে দিনযাপন করা। এ ময়দানের এক পাশে রয়েছে জাবালে রহমত। যেখানে দাঁড়িয়ে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেছিলেন। ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ কারণেই এ ময়দানে উপস্থিতির মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে মুসলিম উম্মাহ ক্ষমা লাভ করে।আগামীকাল ১১ সেপ্টেম্বর (সৌদিতে ৯ জিলহজ) হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হবে এ ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে। ৯ জিলহজ বাদ ফজর হতেই আরাফার ময়দানের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্যেক হাজিকে এ দিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার আগেই অর্থাৎ জোহরের পূর্বেই এসে হাজির হতে হয়।এ ময়দানে প্রদত্ত খুতবা শ্রবণ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করতে হয়। এ দিনটি আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য দিনগুলোর থেকে আলাদা এবং এ দিনের ইবাদাত-বন্দেগির সাওয়াব অন্য দিনের তুলনায় দিগুণ। এ দিনের কিছু করণীয় রয়েছে, যা পালন করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ, যা তুলে ধরা হলো-আরাফার দিনের করণীয়১. মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে একনিষ্ঠ তাওবার সঙ্গে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা হওয়া;২. সম্ভব হলে আরাফার ময়দানে আসার নিয়তে গোসল করা; নতুবা ওজু করে আরাফায় প্রবেশ করা;৩. জিলহজের ৯ তারিখ সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার পূর্বেই অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত (সন্ধ্যা) পর্যন্ত অবস্থান করা হজের গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম ফরজ কাজ;৪. নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে নামিরাসহ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা; সেখানেই নামাজ আদায় করা। অর্থাৎ জোহরের সময় জোহর এবং আসরের ওয়াক্তে আসর নামাজ আদায় করার এবং দোয়া ইস্তিগফার করা;
Advertisement
উল্লেখ্য, মসজিদে নামিরায় জোহর ও আসরের জামাআত এক আজানে দুই ইকামাতে (জময়ে’ তাক্বদিম) একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করা করা যাবে। কিন্তু তাঁবুতে বা অন্য কোনো স্থানে একত্রে আদায় না করে ওয়াক্ত মত আদায় করা;৫. আরাফার দিনে দু’হাত উত্তোলন করে বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ পূর্ববর্তী নবি-রাসুলগণ যে দোয়া পাঠ করেছেন, তা পাঠ করা। আরাফার ময়দানের অন্যতম দোয়া হলো-উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’৬. পঞ্চ ইন্দ্রিয় তথা চোক, কান, নাক, জিহ্বা তথা স্পর্শসহ যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা। হাদিসের পরিভাষায় যে ব্যক্তি তাঁর কান, চোখ ও জিহ্বাকে সঠিক কাজে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে ক্ষমা করে দেবেন।৭. বিশেষ করে কুরআন তিলাওয়াত ও বিশ্বনবির প্রতি দরূদ প্রেরণ হলো আরাফার ময়দানের সর্বোত্তম আমল।৮. সম্ভব হলে আরাফার ময়দানে আল্লাহ তাআলার সিজদায় দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা।৯. সূর্যাস্তের পর সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফার দিকে রওনা হওয়া;পরিশেষে…আরাফার ময়দানে মুসলিম উম্মাহ ‘লাব্বাইক আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারিকা লাক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে। এক স্বর্গীয় আবহ তৈরি হবে ময়দানজুড়ে।সকল হজ পালনকারীর পরনে থাকবে সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমতপ্রাপ্তি ও নিজের গোনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার আলিশান দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফরিয়াদ জানাবেন সমবেত মুসলমানরা।আল্লাহ তাআলা সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত মুসলিম উম্মাহকে তাঁর দরবারের রহমত, বরকত, কল্যাণ লাভ এবং গোনাহ থেকে পরিত্রাণ দান করুন। নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করুন। হজে মাবরূর কবুল করুন। হজ-পরবর্তী বাকি দিনগুলো সঠিক ইসলামের আলোকে পরিচালনা করে ইসলামের আলোকে আলোকিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি