আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস আজ। ১৯৬৫ সালের ৮-১৯ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোর উদ্যোগে ইরানের তেহরানে বিশ্ব সাক্ষরতা সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালনের প্রস্তাব করা হয়। পরে ১৯৬৫ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো প্রথম দিবসটি উদযাপন করলেও ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। তবে এবার দিবসটির সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হলো। এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘অতীতকে জানবো, আগামীকে গড়বো।’আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসটি ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এ জন্য যে কোনো বয়সের প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য জ্ঞান অর্জন আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ। জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর।’ সুতরাং বোঝা গেল শিক্ষার কোনো বয়স নেই, যে কোনো বয়সের লোকের জন্যই জ্ঞানার্জন আবশ্যক।আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সর্বপ্রথম ওহি ছিল শিক্ষাবিষয়ক। তাই তো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়ার প্রতি আদিষ্ট হয়েছিলেন। তার ওপর নাজিল হলো ঐশীবাণী- ‘(হে নবি!) আপনি পড়ুন! প্রতিপালকের নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক্ব)শুধু বিশ্বনবির ক্ষেত্রেই নয়, বরং আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে সব নবি এবং রাসুলদেরকে জ্ঞান বা শিক্ষার সঙ্গেই যুক্ত রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবি! আমি আপনাকে এমন সব জ্ঞান (শিক্ষা) দান করেছি; যা আপনিও জানতেন না এবং আপনার পূর্বপুরুষও জানতো না।’ (সুরা আন’আম: আয়াত ৯২)রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথাও নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান বা সেনাপতি হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি দুনিয়ারর মানুষকে উত্তম চরিত্র ও আদর্শবান হিসেবে গড়ে তুলতে এবং শিক্ষার গুরুত্ব বুঝাতে ঘোষণা করেছিলেন- ‘নিশ্চয়ই আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’ অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘আমি মানুষকে উত্তম চরিত্র শিক্ষা দিতেই প্রেরিত হয়েছি।’বিশ্বনবি সুশিক্ষিত জাতি গঠনে সমগ্র মানবজাতির সামনে শিক্ষার মৌলিক নীতিমালা পেশ করেছেন। তিনি নবুয়ত লাভের পর পবিত্র নগরী মক্কার সাফা পাহাড়ের সন্নিকটে ‘দারুল আকরাম’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যা পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রথম শিক্ষালয়।মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরতের পর বিশ্বনবি মসজিদে নববিতে তাঁর শিক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। যা আজও অব্যাহত রায়েছে। বিশেষ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মসজিদেই বাদ আসর নিয়মিত শিক্ষাদানে ব্যস্ত থাকতেন। সাহাবায়ে কেরাম তাঁর নিকটে থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে মসজিদে নববিতে বসে থাকতেন। এমনকি নারীদের জন্য তিনি আলাদাভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।বিশ্বনবির দুনিয়ার জীবনে মদিনা মুনাওয়ারায় ৯টি মসজিদ ছিল। প্রত্যেক মসজিদেই এলাকাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। যেখানে সব সময় কুরআন শিক্ষার পাশাপাশি হাদিস ও দুনিয়াবি প্রয়োজনীয় অন্যান্য কল্যাণমুখী শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।এক কথায়, নিরক্ষরতা মুক্ত সমাজ গঠনে বিশ্বনবির ভূমিকা ছিল অসপরিসীম। যেখানে কোনো বর্ণ-বৈষম্য ভেদাভেদ ছিল না। আরব-অনারব, ক্ষমতাশালী-নিরীহ, ধনী-গরিব সবাই সমভাবে জ্ঞানার্জনের সুযোগ পেতো। এমনকি বিশ্বনবির শিক্ষানীতির যুগোপযোগী অনুষঙ্গ ছিল অমুসলিমদের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা ব্যবস্থা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে অসংখ্য ইয়াহুদি ও অমুসলিমের শিক্ষা গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া যায়।বর্তমান সময়ে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমও নবুয়তি যুগের শিক্ষার একটি প্রচলিত ধারা। যেখানে কোমলমতি শিশু-কিশোররা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নিজস্ব ভাষা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে সহজেই। যা আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোক্তাদের প্রশংসনীয় উদ্যোগও বটে।তাছাড়া সরকারি তথ্য মতে, ‘বর্তমানে এ দেশে ৪৫ লাখ বয়স্ক নিরক্ষর রয়েছেন। যাদের সাক্ষর জ্ঞান দেয়ার জন্য ৫৫২ কোটি টাকা ব্যায়ে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষর জ্ঞানের হার ৭১ শতাংশ।’পরিশেষে…সাক্ষরতা দিবস শিক্ষার প্রসারে মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। আসুন এবারের সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘অতীতকে জানা এবং আগামীকে গড়া’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সফল করতে কুরআন-হাদিসের জ্ঞানের চর্চা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দিই। এটাই হোক সবার প্রত্যাশা।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজকের সাক্ষরতা দিবসে কুরআন ও হাদিসের তৎপর্য উপলব্দি করার তাওফিক দান করুন। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে সমাজের সর্বস্তরে গণমুখী কল্যাণকর উত্তম চারিত্রিক সুশিক্ষা বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement