খেলাধুলা

প্রথম দিনই পেসারদের ‘অভিভাবক’ ওয়ালশ

গর্ডন গ্রিনিজের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেক ক্যারিবীয় কিংবদন্তীর পথচলা হলো শুরু। সোমবার সকাল থেকেই টিম বাংলাদেশের প্র্যাকটিসে উপস্থিত হলেন কোর্টনি ওয়ালশ। সাধারণতঃ অন্যরা প্রথম দিন যা করেন, যে পথে হাটা শুরু হয়, ওয়ালশ তা করেননি। সে পথেও হাটেননি। বেশিরভাগ বিদেশি কোচই কোচিং করাতে এসে প্রথম দিনই ক্রিকেটারদের সামনে এক দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। তার নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানান; কিন্তু ওয়ালশের শুরুর প্রক্রিয়া সম্পূর্ন ভিন্ন। কোনরকম বক্তৃতাপর্ব নেই। সকালে মাঠে গিয়ে সব ক্রিকেটারদের সাথে পরিচয় পর্ব সেরে ফেললেন। হাই-হ্যালো আর কুশল বিনিময়- ব্যাস এটুকুতেই শেষ কথা-বার্তা। এর বাইরে পেসারদেও মধ্যে কে ডানহাতি আর কে বাঁ-হাতি তা জেনে নিলেন শুধু।সীমিত ওভারের ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে শেরে বাংলার সবুজ ঘাসেই দেখা হলো তার। হাই-হ্যালো পর্যন্তই সার। কথা হয়নি খুব একটা। এরপর মাশরাফি সোজা চলে গেলেন জিমে। আর ওয়ালশ গেলেন বাকি সবার সঙ্গে সেন্টার উইকেটে। সেখানে সবার বোলিং পাখির চোখে পরখ করলেন। যার নামের পাশে সোয়া পাঁচ‘শো টেস্ট উইকেট। সেই জীবন্ত কিংবদন্তী ফাস্ট বোলার সামনে দাড়িয়ে তাদের বোলিং দেখবেন- একটু হলেও বুক কেঁপে ওঠার কথা বাংলাদেশের তরুণ পেসারদের। নেটে বোলিং করতে যাওয়া রুবেল হোসেন, আল আমিন ও কামরুল ইসলাম রাব্বিরাও শুরুতে খানিকটা সময় একটু দ্বিধায় ছিলেন। কার গ্রিপ দেখে কি বলবেন তিনি? রানআপ, ডেলিভারি, ফলো থ্রু, লাইন-লেন্থ, গতি ও সুইং- সেসব নিয়ে না জানি কি বলবেন ওয়ালশ? তেমনই ধুরু ধুরু করে কাঁপছিল তাদেও বুক। কিন্তু সব দ্বিধার অবসান ঘটল কিছুক্ষণের মধ্যেই। যেমনটা বলেছেন, ঠিক তেমন অভিভাবকের মতই আচরণ করলেন। খুব গভীর দৃষ্টিতে সবার বোলিং দেখলেন। ভাল ও সমীহ জাগানো ডেলিভারিকে  ‘গুদ (গুড) বল’ বলতেও দ্বিধা করলেন না। কিছু কিছু ডেলিভারি দেখে হাত তালিও দিলেন। শর্ট অফ লেন্থে বল ফেললে তাই বলে ‘ব্যাড’ বলে কিন্তু চেঁচিয়ে ওঠেননি। খালি বলেছেন, আরও একটু ওপরে বল ফেল। মোদ্দা কথা, প্রথম দিন নেটে নতুন শিক্ষক ওয়ালশকে দেখে ভেতওে ভেতরে কম-বেশি একটু ভয় ও দ্বিধা-সংকোচ ছিল সবার মাঝেই।কিন্তু শিক্ষকের অভিভাবকসুলভ মানসিকতায় পেসারদের দ্বিধা কেটে গেছে মুহুর্তেই। প্রথম দিনই তারা বুঝে গেছেন, ‘সত্যিই তিনি শুধু বোলিং কোচ নন। আমাদের অভিভাবকও।’প্রথম দিনের প্র্যাকটিস শেষে কামরুল ইসলাম রাব্বির মুখে সে কথাই শোনা গেলো, ‘মাত্র একদিন তার সাথে কাজ করলাম। এ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কি করে বলি তিনি কেমন? তবে এটুকু বুঝে গেছি, তিনি মোটেই রাশভারী কিংবা রাগি নন। বক ঝকা না করে আমাদের উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার চেষ্টায়ই বেশি করবেন। তার প্রমাণ, কেউ একটা ভাল বল করলে, সঙ্গে সঙ্গে হাত তালি দিয়ে তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আবার আলগা বা বাজে ডেলিভারি দেখে রাগ করার বদলে বলে দিলেন ওপরে বল করতে।’    নেটে প্রথম দিন দেখে কাউকে কোনরকম টিপস বা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেননি। আল আমিন আর রুবেলের গ্রিপটা দেখেছেন মনোযোগ দিয়ে। কামরুল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘এর বাইরে আর কিছুই বলেননি। করেনওনি।  সবাইকে আগামীকালের (মঙ্গলবারের) প্র্যাকটিস ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিলেন বার বার। বললেন ম্যাচের কথা ভাবো সবাই। কাজের অনেক সময় ও সুযোগ পাবো আমরা।’ প্রথম দিন তার পদচারনা ও কাজের ধরন পরিষ্কার বলে দিল- তিনি যেমনটা বলেছেন, ঠিক তেমনটাই করবেন। অর্থাৎ তিনি শুধু কোচই নন। দলে তার ভুমিকাটা থাকবে অভিভাবকের মত। এখন তার দেখা ও অনুভবের পালা। শরীরি অভিব্যক্তি স্পষ্ট বলে দিল, সবে এসেছি। এখন আগে দেখি সবাইকে। হোক তা প্রস্তুতি ম্যাচ। ম্যাচে একজন বোলারকে দেখা আর নেটে দেখার মাঝে বিস্তর ফারাক। তাই মঙ্গলবারের প্র্যাকটিস ম্যাচের দিকেই আপাততঃ চোখ স্থির মাশরাফি, রুবেল, আল আমিনদের নতুন বোলিং কোচের। ম্যাচ কন্ডিশনেই জানা হবে, কে কেমন? কার দূর্বলতা কোথায়? ঘাটতির জায়গাগুলো কি? কার কোন অস্ত্র ধরালো? কার ভোতা? এসব দেখার, জানার ও বোঝার পরই হয়ত লিজেন্ডের আসবে প্রেসক্রিপশন।এআরবি/আইএইচএস/এবিএস

Advertisement