দেশজুড়ে

শিগগিরই কাজ শুরু করবে ভূমি কমিশন

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিরাজমান ভূমি সমস্যা দূর করতে শিগগিরই কাজ শুরু করবে কমিশন। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কমিশনের বিদ্যমান আইনটির সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। এখন আর কাজ করতে কোনো সমস্যা থাকবে না।রোববার বেলা ১১টায় রাঙামাটি সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠক শেষে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের দেয়া ব্রিফিংয়ে কমিশন চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।  তিনি বলেন, সংশোধিত আইন অনুযায়ী এ অঞ্চলে ভূমি নিয়ে যেসব সমস্যা ও বিরোধ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কাজ করবে কমিশন। এসব বিষয় নিয়ে কমিশনের বৈঠকে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। কমিশনের সর্বপ্রথম কাজ হবে পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি নিয়ে বিরাজমান বিরোধপূর্ণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা। ভূমি বিরোধগুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এ অঞ্চলের অন্য সমস্যাগুলো সহজে সমাধান সম্ভব হবে।  এদিকে, ভূমি কমিশনের বৈঠকের প্রতিবাদে তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) স্থানীয় পাঁচ বাঙালি সংগঠন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করায় বৈঠকটি রাঙামাটির পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে হওয়ার কথা থাকলেও স্থান পরিবর্তন করে তা সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত হয়। তবে হরতালের পাশাপাশি বৈঠক স্থলটি ঘেরাও করে রাখার কর্মসূচি দেয়া হলেও প্রশাসনের বাধার মুখে পরে এ কর্মসূচি থেকে সরে যান বিক্ষোভকারীরা।সংশোধিত আইনে ভূমি কমিশন কাজ শুরু করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালিদের নিজ ভূমি থেকে চলে যেতে হবে এমন আশঙ্কায় স্থানীয় বাঙালিদের কিছু সংগঠন কমিশন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে নামলেও এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ভূমি কমিশন চেয়ারম্যান।এ বিষয়ে বলেন, এ অঞ্চলে বসবাসকারী কাউকে উচ্ছেদ করতে বা কারও জায়গা-জমি কেড়ে নিতে কমিশন কিছু করবে না। বরং এখানকার অধিবাসী সবার ভূমির অধিকার নিশ্চিতে এবং ভূমি নিয়ে যেসব বিরোধ রয়েছে সেগুলো দুর করে সবার শান্তি ও সম্প্রীতিপূর্ণ অবস্থান সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে কমিশন কাজ করবে। কমিশন চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজুরী মারমা, রাঙামাটির চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়সহ অপর দুই সার্কেল (খাগড়াছড়ির মং ও বান্দরবানের বোমাং সার্কেল) চিফ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মবিনুর রশিদ আমিন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও কমিশনের সচিব রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সংশোধিত আইন অনুযায়ী দ্রুত পার্বত্য ভূমি কমিশনের কাজ কিভাবে শুরু করা যেতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠক শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী পার্বত্য ভূমি কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।  বৈঠক সম্পর্কে দেয়া ব্রিফিংয়ে কমিশনের অন্যতম সদস্য ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বলেন, কমিশন দ্রুত কাজ শুরু করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী। এজন্য আইনটির সংশোধন হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী কাজ করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান ভূমি বিরোধগুলো পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন প্রসঙ্গত, ১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিয়মিত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনী অনুমোদন দেয়ার পর ৮ আগস্ট সংশোধিত আইনের অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ জারির পর কমিশনের এটাই প্রথম বৈঠক। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। কিন্তু বিদ্যমান আইনে নানা জটিলতার কারণে এর আগে কোনো কাজ করতে পারেনি কমিশন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আনোয়ারুল হক এ কমিশনের চেয়ারম্যান। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে সরকার। তার আগে ২০০৯ সালের ১৯ জুলাই অবসরপ্রাপ্ত বচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। চেয়ারম্যানের মেয়াদ তিন বছর। তবে চেয়ারম্যান না থাকলে কমিশন থাকে অকার্যকর। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির (ঘ) খণ্ডের ৪নং ধারা বলে ১৯৯৯ সালের ৩ জুন গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি (ল্যান্ড কমিশন) কমিশন আইন-২০০১ পাস হয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এতদিন যাবৎ কমিশনটি ছিল কার্যত অচল। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমি নিয়ে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবর্তে সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। স্পর্শকাতর এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অতীতে বিভিন্ন সময়ে তিন পার্বত্য জেলার অনেক জায়গায় অনাকাঙ্খিতভাবে ঘটনাও ঘটে। তাই বিষয়টি উপলব্দি করে কমিশনকে কার্যকর করে তিনটি পার্বত্য জেলায় ভূমিসংক্রান্ত বিরোধগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ভূমি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ও সাংঘর্ষিক ধারাগুলোর সংশোধন করেছে সরকার। সুশীল প্রসাদ চাকমা/এফএ/এমএস

Advertisement