আজ জিলহজ মাসের প্রথম দিন। আর হিজরি বছরের ১২তম মাস হলো জিলহজ মাস। এ মাসের মর্যাদা ও ফজিলত অত্যাধিক। বরকতময় এ মাসে মুসলমানগণ তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ পালনে পবিত্র নগরী মক্কায় একত্রিত হয়। যার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সেতুবন্ধন তৈরি হয়।বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সেরা ইবাদাত ও ত্যাগ ‘কুরবানি’ পালন করেন। তাঁর এ আদর্শ (কুরবানি) আমাদের জন্য মহা পুরস্কার। যার সবই পালিত হয় এ মাসের প্রথম দশকে।এ জন্য জিলহজ মাসের প্রথম দশক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাসটির প্রথম দশককে পবিত্র শবে কদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে এ দশকের কসম করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘কসম ভোরবেলার এবং কসম দশ রাতের।’ (সুরা ফজর : ১, ২)হজরত ইবনে আব্বাসসহ প্রখ্যাত তাফসির কারকদের মতে, ‘দশ রাত’ বলতে জিলহজের প্রথম দশ রাতকে বুঝানো হয়েছে। এ দশকের প্রত্যেক দিনের রোজা বছরব্যাপী রোজা রাখার সমান এবং প্রত্যেক রাতের ইবাদত শবেকদরের রাতের ইবাদতের সমতুল্য।জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত বর্ণনায় হাদিসে আছে- হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন কোনো দিন নেই যার আমল জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করেলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চাইতেও কি বেশি প্রিয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, জিহাদ করা থেকেও বেশি প্রিয়। তবে যদি এমন হয়, যে ব্যক্তি জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হলো এবং এর কিছুই ফেরত নিয়ে এলো না।হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, বিশ্বনবি বলেছেন- এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় ও মহান কোনো আমল আর নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) তাকবির (আল্লাহু আকবার) এবং তাহমিদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে আদায় কর (পড়)।আমাদের করণীয়বছরের সকল মর্যাদাপূর্ণ দিনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন। এ দশকের প্রতিটি দিনই হলো সর্বোত্তম দিন। তাই বিশ্বনবি একাধিক হাদিসে এ দশদিন বেশি বেশি আমল করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে উত্সাহিত করেছেন। তিনি এ দশকে বেশি বেশি তাহলিল এবং তাকবির পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন।এ দশকেই আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য হজ ও কুরবানি বিধিবদ্ধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানগুলোতে হাজির হতে পারে এবং তিনি তাদের চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে। এরপর তোমরা তা থেকে খাও এবং গরিব ও অসহায়কে খেতে দাও।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৮)এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সামর্য্খ থাকলে হজ পালনে পবিত্র নগরী মক্কায় গমন এবং শুধুমাত্র তাঁর স্মরণে কুরবানি আদায় করার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।এ দশকে মানুষ আরাফার ময়দানে একত্রিত হয়। আরাফার দিনকে ক্ষমা ও মুক্তিলাভের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় বিশ্বনবি বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজা বিগত এক বছরের গোনাহ এবং সামনের এক বছরের গোনাহ মাফ হবে বলে আল্লাহ তাআলার কাছে আমার প্রত্যাশা।ইমাম বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, কুরআনে বর্ণিত দিনগুলো হলো জিলহজের প্রথম দশদিন এবং এ দশকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময় দুটি দিন রয়েছে। একটি হলো (৯ জিলহজ) আরাফার দিন এবং অপরটি হলো (১০ জিলহজ) কুরবানির দিন।পরিশেষে...জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের যে কোনো আমল, চাই তাহাজ্জুদসহ নফল নামাজ-রোজা হোক বা জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল হোক; তা আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় ও অতি পছন্দনীয়। তাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে দিনের বেলা রোজা পালন এবং রাতে নফল ইবাদত তথা তাহাজ্জুদ নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকারে ও দান-খয়রাত ইত্যাদি নেক কাজে অতিবাহিত করা অত্যন্ত জরুরি।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশারায়ে জিলহজ তথা জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন ইবাদাত-বন্দেগিতে মনোযোগী হয়ে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/পিআর
Advertisement