জম্মু-কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর নিয়ে এ দুই দেশের টানাপড়েনও দীর্ঘদিনের। কিন্তু দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন জয় করলেন ভারতের এক তরুণ পুলিশ কর্মকর্তা। সীমান্ত যেন কোনো বাধা নয়; সীমান্তের বাধা হার মানতে বাধ্য হলো সেই পুলিশ কর্মকর্তার ভালোবাসার কাছে। কাশ্মীর উপত্যকায় যখন পাকিস্তানপন্থীদের দমনে নয়াদিল্লি সরকার ব্যস্ত; ঠিক সেই সময় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের এক পুলিশ কর্মকর্তা সাত পাকে বাঁধা পড়লেন পাকিস্তানের এক তরুণীর কাছে।জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের উপ-পরিদর্শক ওয়াইস গিলানি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদের তরুণী ফাইজা গিলানিকে বিয়ে করলেন। তবে কাশ্মীরের চলমান অস্থিরতার কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে কাছের আত্মীয়-স্বজন ছাড়া কাউকে অামন্ত্রণ জানানো হয়নি। অনাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। তবে পুলিশ কর্মকর্তা গিলানি ও তরুণী ফাইজা ছিলেন পূর্বপরিচিত এবং স্বজন। সীমান্তের বেড়াজালে দুই কাশ্মীরের বাসিন্দা হয়েছে এই দুই পরিবার।শনিবার ভারতীয় বার্তসংস্থা পিটিঅাইর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে মুজাফফারাবাদে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন সাব্বির গিলানি ও তার বাবা। সেই সময় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলেও কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। পরে বেশ কয়েকবার বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হলেও দুই দেশের উত্তেজনার কারণে তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। এর আগে শ্রীনগর ও মুজাফফারাবাদের মধ্যে বাস চলাচল বেশ কয়েকবার শুরু হলেও পরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুনরায় বাস সার্ভিস চালু হওয়ায় মঙ্গলবার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে যান গিলানি। সেখানে একটি হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। গিলানির বাবা পুলিশের জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন; ২০১৪ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি।কনে ফাইজা পাকিস্তানের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। এমন এক সময় তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো যখন স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা কাশ্মীরজুড়ে চলমান সহিংসতা দমনে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন। এ ছাড়া জঙ্গিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করা থেকে দূরে থাকার হুমকি দিচ্ছে। গত ৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে হিজবুল মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু সদস্যের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে কাশ্মীরের বিক্ষোভকারীরা। গিলানির বাবা গালফ নিউজকে বলেন, ‘১৯৪৭ সালে আমাদের পরিবার বিভক্ত হয়ে পড়ে; দেশভাগের পর শুধুমাত্র আমার বাবা এখানে (ভারতের কাশ্মীর) থেকে যান। এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা চলে যান পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। আমাদের পরিবারের অনেক জমি মুজাফফারাবাদে রয়েছে’। বর ওয়াইস গিলানি বলেন, মুজাফফারাবাদে থাকা দাদা ও অন্যান্য স্বজনদের সম্পর্কে অনেক বিষয়ে শুনেছি আমার বাবার কাছে। দাদার মৃত্যুর পর সীমান্ত পারাপারের অনুমতি না থাকায় বাবা তার শেষকৃত্যে যেতে পারেননি। সেজন্য আমার দাদার কবরে শ্রদ্ধা জানানোর আকাঙ্ক্ষা ছিল।গিলানির বাবার প্রত্যাশা, তার ছেলে যেভাবে সীমান্ত বাধাকে জয় করেছে; ঠিক সেভাবেই জম্মু-কাশ্মীরের বিভক্তি একদিন জয়ী হবে। সূত্র : গালফ নিউজ ও পিটিআই।এসআইএস/আরআইপি
Advertisement