মানুষটিকে এই মুহূর্তে কাছে পেলে সামনে দাঁড় করিয়ে অনেকগুলো স্যালুট করতাম। ভাবছেন, কেন এতগুলো স্যালুট করতাম। কারণ অবশ্যই আছে। প্রথম কারণ হলো, ৬৩ বছর বয়সেও তিনি ব্যাপক ধৈয্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় হলো, জয়ী হওয়ার জন্য একজন মানুষ যে প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারেন সেটির কারণে। তৃতীয়ত হলো, বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। চতুর্থত হলো, তরুণ প্রজন্মকে দিয়ে ম্যাসেজ দিয়ে গেলেন কোনো কাজ করতে চাইলে মনোযোগ করো এবং শেষ পর্যন্ত লেগে থাকো জয় তোমার নিশ্চিত। আরো অসংখ্য কারণে এই মানুষটিকে স্যালুট জানানো যেতে পারে। এতগুলো স্যালুট যার প্রাপ্য সেই মানুষটি হলেন বিশ্ব ভ্রমণকারী আবদুস সাত্তার। সেই সঙ্গে খুব স্যালুট জানাতে ইচ্ছে করছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি। কারণ তিনিই আমলাতন্ত্রের সব জট খুলে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়িটি ছয় বছর পড়ে থাকার কারণে ৪৩ লাখ টাকা ভাড়া তিনি মওকুফ করে দিয়েছেন।বাংলাদেশ সরকারের প্রতি বিশেষে করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ২ হাজার ২৮৫ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে গত মঙ্গলবার আবার বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন আবদুস সাত্তার। যাওয়ার সময় বলে গেছেন যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করবেন। ৬৩ বছর বয়সেও বিশ্বভ্রমণের সাহস দেখানো আবদুস সাত্তারের এই উদ্যোগকে স্বাগতম জানাই। সেই সঙ্গে ক্ষমা চাই নিজ দেশে এসে হয়রানির শিকার হওয়ার জন্য।বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া কানাডার এই নাগরিক বিশ্বভ্রমণের উদ্দেশ্যে নিজের গাড়ি নিয়ে ২০১০ সালের মে মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন। পাকিস্তান সফর শেষে তিনি করাচি বন্দরে জাহাজে তুলে দেন তার গাড়ি। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়িটি বের করতে তার সময় লাগলো প্রায় ছয় বছর।প্রিয় সেই গাড়ি ছাড়াতে বছরের পর বছর বাংলাদেশের এই দফতর থেকে ওই দফতর ছুটতে হয়েছে আবদুস সাত্তারকে। ততদিনে তার বিশ্বভ্রমণের শখে ভাটা পড়ে যায়। এরপর জেদ চাপে তার, গাড়ি না নিয়ে তিনি ফিরবেন না। আর কারণেই এই ছয় বছরে একবারের জন্যও কানাডায় যাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে আবদুস সাত্তারের।গত ৪ মে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গাড়িটি খালাস করতে পেরেছেন তিনি। ৫৭ বছর বয়সে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছিলেন তিনি। এখন এই মানুষটির বয়স ৬৩ বছর। জাপানের তৈরি মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার গাড়ি নিয়ে ২০০৯ সালে আবদুস সাত্তার যখন বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়েন, তখন তার ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয়, নাম স্যাল বয়। তবে এখানে এসে ‘ধৈর্যহারা’ হয়ে তিনি কিছুদিন পর ফিরে যান কানাডায়।পেশায় হিসাবরক্ষক আবদুস সাত্তার কানাডার টরন্টো শহর থেকে ২০০৯ সালের ২ আগস্ট যাত্রা শুরু করেন। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ড, তারপর ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সার্বিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ ঘুরে তুরস্কে যান। তারপর ইরান ও পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ।গত ছয় বছরের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আবদুস সাত্তার আবার কৃতজ্ঞতা জানান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি। অর্থমন্ত্রীর প্রচেষ্টাতেই তিনি গাড়িটি পেয়েছেন বলে জানান।এমএএস/এসএইচএস/পিআর
Advertisement