অস্ত্র মামলায় বিচারাধীন থাকাকালে ফেনী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী কারাগারে ১৩ ব্যাগ রক্ত দান করেছেন। এ কারণে তার সাজা (রেয়াত) কতদিন কমেছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এক মাসের মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে আগামী ৩ নভেম্বর এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।এই আদেশের ফলে ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকা, না থাকা প্রশ্নে উচ্চ আদালতে রায় প্রদান শুরু করার একদিন পর তা আবারো ঝুলে গেল।বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় দেওয়া মুলতবি করে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চায় আদালত।আদালতে এদিন রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্য রঞ্জন মণ্ডল। নিজাম হাজারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু।গত ৩ অগাস্ট হাইকোর্টের জারি রুলের ওপর শুনানি শেষ করে আদালত ১৭ অগাস্ট রায়ের দিন ঠিক করেন আদালত। ওইদিন নতুন একটি নথি চেয়ে ২৩ অগাস্ট রায়ের পরবর্তী দিন রাখা হয়। ওইদিন আদালতে আবারো শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবীরা। রক্তদান করে নিজাম হাজারী কারাবাস রেয়াতের অধিকারী হয়েছেন বলে আইনজীবীরা সেদিন আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন।শুনানির পর আদালত ৩০ অগাস্ট রায়ের দিন রাখেন। পরে ৩০ অাগস্ট রায় প্রদান শুরুও করে আদালত, বুধবার রায়ের বাকি অংশ দেওয়ার কথা ছিল। বুধবার বেলা দুইটার দিকে বিচারকরা এজলাসে এসে রায় প্রদান মুলতবির কথা জানান।নিজাম হাজারী কারাবাসকালে কত ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন, এর ফলে কতদিন কারাবাস রেয়াত পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন, ৩০দিনের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে দিতে জেল কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেন।নিজাম হাজারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, নিজাম হাজারী কারাগারে থাকার সময় মোট ১৩ বার রক্ত দিয়েছিলেন। যার বিপরীতে তিনি ৪৮৬দিনের কারাদণ্ড রেয়াত পেয়েছেন। এটা ধরা হলে তার সাজার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন।ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এক অস্ত্র মামলায় ‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তার ওই পদে থাকার বৈধতা নিয়ে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া রিট আবেদন করেন।রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।২০০০ সালের ১৬ অগাস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে।সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংসদ হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে।প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে।নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে সংসদ সদস্য পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে৷ পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাও দেন আদালত।ওই রুলের উপর শুনানি গ্রহণে গতবছরের ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি এবং পরে ২ ডিসেম্বর অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিব্রতবোধ করে।প্রধান বিচারপতি এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রুলের উপর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে রায় ঘোষণা শুরুর পর মঙ্গলবার রায় মুলতবি করেন। তারপরের দিন আবারো রায় না দিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।এফএইচ/এসএইচএস/এমএস
Advertisement