সব ঘটনারই নাকি একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। কোনো ভালো ঘটনার বিপরীত প্রতিক্রিয়া যে সব সময় ইতিবাচক হয়- এমন নয়। এই যেমন আফগানিস্তানের সঙ্গে হঠাৎ চূড়ান্ত হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের বিপরীত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে নেতিবাচক। সে কি কথা? আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের সিরিজ আয়োজন তো খুবই ভালো ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তার আবার নেতিবাচক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া কী? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তো, করারই কথা। তাহলে শুনুন, আফগানিস্তানের সাথে ওয়ানডে সিরিজের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে বিসিএল। পিছিয়ে যাওয়া বলার চেয়ে আপাতত বিসিএল হচ্ছে না বলাই বোধ করি যুক্তিযুক্ত হবে। ক্রিকেট পাড়ার গুঞ্জন নয়, বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আকরাম খান ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর কথায় মিলেছে এমন ইঙ্গিত। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছে। তবে আকরামের কথা, ‘যদিও এটা টুর্নামেন্ট কমিটির বিষয়। তারাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে। তবে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমিও সব সময় টুর্নামেন্ট কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই বলছি, ধরে নিতে পারেন, আপাতত বিসিএল হচ্ছে না।’কেন হচ্ছে না? কারণ খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে এসেছে কিছু আনুষঙ্গিক তথ্য। মূলত বিসিএল হচ্ছে না আফগানিস্তানের সাথে অনির্ধারিত সিরিজ হঠাৎ চূড়ান্ত হওয়ায়। আফগানরা ঠিক যে সময় (২১ সেপ্টেম্বর আসছে, আর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যে সময়ে ( ২৫-২৮ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর) মাশরাফি বাহিনীর সাথে মোহাম্মদ নবীদের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ- ঠিক ঐ সময়ই বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ( বিসিএল ) হওয়ার কথা ছিল। জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচক কমিটি ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক ইংল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর সপ্তাহ দুয়েকের বেশি সময় আগে বিসিএল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, ২১ সেপ্টেম্বর থেকে বিসিএল মাঠে গড়ানোর কথা ছিল। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বারবার এটাকে ইংল্যান্ডের সাথে সিরিজের প্রস্তুতি বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ‘হোক চার দিনের ম্যাচ। তবু প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট তো। বিসিএলই হবে ইংল্যান্ডের সাথে হোম সিরিজের ওয়ার্ম-আপ।’ প্রধান নির্বাচক আরো বলেছিলেন, ‘যেহেতু তার আগেই ওয়ানডে দল ঘোষণা হবে, তাই ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া ক্রিকেটাররা বিসিএলের প্রথম রাউন্ড খেলবে। আর যারা শুধু টেস্টের জন্য বিবেচনায় থাকবে, তারা বিসিএলের দ্বিতীয় রাউন্ডও খেলার সুযোগ পাবে।’ কিন্তু সেই প্রধান নির্বাচকের মুখেই মঙ্গলবার ভিন্ন কথা। জাগো নিউজের সাথে আলাপে মিনহাজুল আবেদিনের সোজা সাপটা উচ্চারণ, ‘কী করে বিসিএল হয় বলুন? আমরা এবারের বিসিএলকে ইংলিশদের সাথে হোম সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলাম। যেহেতু অক্টোবরের প্রথম ভাগে ইংল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজ, তাই তরিঘরি করে এ আসর আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’যাদের কথা ভেবে বিসিএল আয়োজনের চিন্তা , তারাই যদি খেলতে না পারে, তাহলে আর এখন এ আসরের আয়োজনের স্বার্থকতা কী? এ বক্তব্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘২১ সেপ্টেম্বর আফগানরা রাজধানীতে পা রাখছে। তার একদিন আগে থেকেই বিসিএল। প্রথমে ২৪ তারিখ ফতুল্লায় প্রস্তুতি ম্যাচ। সেখানে স্থানীয় দলের হয়ে খেলতে অন্তত ১৩ জন ব্যস্ত থাকবে। এর বাইরে আরও ১৪ জন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে।সব মিলে ২৬ /২৭ জন জাতীয় ক্রিকেটার বিসিএলের একটি ম্যাচও খেলতে পারবে না। খেলার প্রশ্নই ওঠে না। এতগুলো জাতীয় ক্রিকেটারকে বাইরে রেখে এ সময় বিসিএল আয়েজনের যৌক্তিকতা ও স্বার্থকতা কী? তাই এ আসর আপাতত না হওয়াই উত্তম।’ প্রধান নির্বাচক ক্রিকেটীয় যুক্তি দিয়ে পুরো পরিস্থিতি খণ্ডন করেছেন। জাগো নিউজের সাথে আলাপে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খানও। তবে তার কথায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও বেড়িয়ে এসেছে। তা হলো- বিসিএল আর আফগানিস্তানের সাথে ওয়ানডে সিরিজ এক সাথে পড়ে যাওয়ার কারণেই নয়, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের তরফ থেকেও নাকি তেমন সাড়া মেলেনি এখনো। আকরাম খান জানান, ‘আমি যতটুকু জানি প্রাইম ব্যাংক আগে থেকেই এবার বিসিএলে দল নিতে আগ্রহী নয়। তারা বিসিবি সিইও’র কাছে চিঠি দিয়ে আগেভাগেই তা জানিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি ওয়াল্টনও নাকি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কথা দেয়নি। এখন ভাবুন, চার দলের একটি বিসিবিই ফ্র্যাঞ্চাইজি। বাকি দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি যদি বেঁকে বসে, তাহলে আয়োজন করা কঠিন বৈকি।’ ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধানের সেই কথার সূত্র ধরে বলা, প্রাইম ব্যাংক ও ওয়াল্টন আয়োজন ফ্র্যাঞ্চাইজি হতে না চাইলে নির্ধারিত সময়ে বিসিএল আয়োজন কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। তার সঙ্গে আফগানিস্তানের সাথে সিরিজ যোগ হওয়ায় অনিশ্চয়তার কালো অন্ধকার নেমে এসেছে বিসিএলের ভাগ্যে।এআরবি/এনইউ/আরআইপি
Advertisement