বাংলাদেশে বিদেশি কোচ নতুন কোনো বিষয় নয়। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাবার পর সময় যত গড়িয়েছে টীম বাংলাদেশে বিদেশী কোচিং স্টাফ ততই বেড়েছে। হেড কোচ, ব্যাটিং কোচ, পেস-স্পিন বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ, এমনকি ফিজিক্যাল ফিটনেস অটুট রাখতে ট্রেনারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সব পদ আগলেছেন বিদেশিরাই। এই তো সেদিন মানে ক’মাস আগেও ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ওপরে উল্লেখ করা সব পদেই একজন করে স্পেলাশিস্ট কোচ ছিলেন। যার দুজন এখন নেই। জিম্বাবুইয়ান পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক সরে দাঁড়িয়েছেন বিশ্ব টি-টোয়েন্টির পরই। আর আরব আমিরাতের হেড কোচ হবার স্বপ্নে বিভোর স্পিন কোচ রুয়ান কালপাগে শেষ পর্যন্ত চাকুরি খুইয়েছেন এই ক’দিন আগে। এ দুজন কোচিং স্টাফের জায়গা পুরনে চলছে যথাসাধ্য চেষ্টা-সাধনা।তবে সরবে নয়, নীরবে। সন্তর্পনে পেস বোলিং কোচ নিয়োগের কাজ করেছেন বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপন। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি গোপনে সারলেও কোচের নাম ঘোষণাটি সাড়ম্বরে করতে চেয়েছিলেন বিসিবি প্রধান।বোঝাই গেছে মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেল ও তাসকিনদেও বোলিং কোচ হিসেবে কোন বিশ্ব মানের সাবেক ফাস্টবোলারকে বেছে নিতেই অমন নীরবতা। শেষ পর্যন্ত হয়তো অনেক বড় মাপের এক সাবেক ফাস্ট বোলারকেই বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ হিসেবে দেখা যাবে। বিসিবি সভাপতি গত রোববার রাতে তার নাম বলেননি। শুধু বলেছেন, ‘কথা-বার্তা এক রকম চুড়ান্ত। সম্ভাব্য কোচ হিসেবে যিনি আছেন, তিনি এখনো একটি পদে আসীন। সেই পদ থেকে সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত কোচ হিসেব তার নাম ঘোষণা দেয়া যায় না। এখন তাই তার পদত্যাগের জন্য অপেক্ষা।’ বোর্ড সভাপতি কৌশলগত কারণে নাম বলতে না পারলেও বোর্ডের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশের নতুন পেস বোলিং কোচের নাম ক্যারিবীয় কিংবদন্তী ‘কোর্টনি ওয়ালশ’। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালি সময়ের অন্যতম এ সেরা ফাস্ট বোলারই বাংলাদেশের পেসারদের ভবিষ্যত প্রশিক্ষক হয়ে আসছেন। প্রসঙ্গতঃ বর্তমানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন ওয়ালশ। তিনি ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরই হয়ত বিসিবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।এদিকে পস বোলিং কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই কোচিং স্টাফ বাড়ানোর ঘোষণা বিসিবি প্রধানের কণ্ঠে। রোববার রাতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি জাতীয় দলে কোচিং স্টাফ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। কোচিং স্টাফ বাড়ানোর কথা বললেও কোন কোন পদে কোচ নেয়া হবে? তারা কারা? তাদের নাম-ধাম ও দেশ কিছুই বলেননি নাজমুল হাসান পাপন। তবে জানা গেছে পেস বোলিং কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মত বাড়তি কোচিং স্টাফ নেবার ক্ষেত্রেও বিসিবি সভাপতি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। সোমবার বোর্ডের একাধিক পরিচালক জাগো নিউজের সাথে আলাপে জানিয়েছেন, পেস ও স্পিন বোলিং কোচ নিয়োগের পর অন্তত আরও দুজন বাড়তি কোচিং স্টাফ নেয়া হবে। যার একজন হবেন ব্যাটিং কোচ। আর অন্যজন হবেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রধান সহকারি। এই দুই পদেই হাই প্রোফাইল কোচ নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে। ব্যাটিং কোচ হিসেবে দু’জন বিশ্ব মানের ব্যাটসম্যান আছেন পছন্দের তালিকায়। যেখানে সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসন এবং শ্রীলঙ্কার সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান মারভান আত্তাপাত্তুর নাম রয়েছে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, দু’জনকেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে প্রাথমিক কথাও হয়েছে। সুত্র আরও জানায়, দু’জনই হাথুরুসিংহের পছন্দের। তিনিই ব্যাটিং কোচ হিসেবে তার নিজের পছন্দর কথা বোর্ড সভাপতিকে জানিয়ে রেখেছেন। নাজমুল হাসান পাপন সে পছন্দের কথা বিবেচনায় এনেই ব্যাটিং কোচের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেছেন। ব্যাটিং কোচের পাশাপাশি আরও একজন হাই প্রোফাইল কোচ নিয়োগের কথাও বলেছেন হাথুরু। সুত্র জানিয়েছে, জাতীয় দলের ক্যাম্প বড় হওয়ায় হাথুরুসিংহে বিসিবি প্রধানকে সহকারি নিয়োগ ও কোচিং স্টাফ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। হাথুরু বলেছেন, ১৪ জনের ক্যাম্প হলে তার একার পক্ষে সবদিক সামলানো সম্ভব; কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্য কন্ডিশনিং ক্যাম্পে এখন একসঙ্গে ৩০জন ক্রিকেটার রয়েছেন। তাদের যথাযথ পরিচর্যার জন্য আরও বেশি কোচিং স্টাফ প্রয়োজন। তাই বোর্ড নতুন কোচিং স্টাফ নিয়োগের কাজে নেমে পড়েছে। এদিকে রিচি রিচার্ডসন ও আত্তাপাত্তুর সঙ্গে ব্যাটিং কোচ হিসেবে আরও দু’জনের নামও শোনা যাচ্ছে। ওই তালিকায় বাংলাদেশের দুই সাবেক প্রশিক্ষক জেমি সিডন্স এবং স্টুয়ার্ট ল’ও রয়েছেন। দু’জনই নাকি বাংলাদেশে আবার কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নতুন সম্ভাব্য কোচিং স্টাফের শর্টলিস্টে নাম না থাকলেও ভিতরে ভিতরে বোর্ডে যোগাযোগ করে আবার পুরনো পদে ফিরে যেতে আগ্রহী হিথ স্ট্রিক এবং রুয়ান কালপাগেও। বলার অপেক্ষা রাখে না, হিথ স্ট্রিক আপনা-আপনি পেস বোলিং কোচের চাকুরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আর আরব আমিরাতের হেড কোচ হতে গিয়ে বোর্ডের সাথে ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে এই সেদিন পদচ্যুত হয়েছেন রুয়ান কালপাগে। কিন্তু তার আশা পূর্ন হয়নি। আরব আমিরাত তাকে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। এখন বেকার কালাপাগে আবার পুরনো পদে ফিরতে আগ্রহী। তবে ভিতরের খবর, বোর্ড তাদের বিষয়ে আর আগ্রহী নয়। কাজেই হিথ স্ট্রিক এবং কালপাগের ফেরার সম্ভাবনা শুন্যের কোঠায়। তবে জেমি সিডন্স ও স্টুয়ার্ট ল’র কেউ একজন কোচিং স্টাফ হয়ে আসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এআরবি/আইএইচএস/এবিএস
Advertisement