প্রথম বাংলাদেশ সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। আজ সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে তাকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বিমান বন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত বছর তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে যান।সংক্ষিপ্ত এই সফরে কেরি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ‘দীর্ঘস্থায়ী ও বিস্তৃত সম্পর্ক’ আরও জোরদারে গুরুত্ব দেবেন বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটি জন কেরির প্রথম ঢাকা সফর। এর আগে ২০১২ সালের মে মাসে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন দু’দিনের সফরে ঢাকায় আসেন।জন কেরির এই সফর নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো বিবৃতি না দিলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে তারা ‘আনন্দিত’। আর প্রধানমন্ত্রী এটাকে ‘সৌজন্য সফর’ বলছেন।তবে জন কেরি এমন এক সময়ে বাংলাদেশে এলেন, যার কয়েক মাস পরে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচন। এছাড়া দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের ওপর ‘সন্তুষ্ট নয়’ বলেও ধারণা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে কেরি জানিয়েছেন, সহিংস ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো জোরদার হবে।বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক, ব্লগার এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয়েছে। মুসলিম দেশ হলেও বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করেন। কিন্তু এসব হামলা ও হত্যার ঘটনায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।তবে বরাবরই বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়েই বলে আসছে তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন জানিয়েছেন, যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার দেশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।আল কায়েদা বা আইএসের মত জঙ্গি গোষ্ঠীও যদি বাংলাদেশে হামলা চালায় তবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও প্রস্তত আছে বাংলাদেশ। এমনটাই জানিয়েছেন জিয়া উদ্দিন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখনও জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ায় বাংলাদেশেরও অসন্তোষ রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মি নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন কেরি।সে সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে প্রেসিডেন্ট ওবামার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন তিনি।তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশ ঘুরে যান। পরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশেষায়িত জ্ঞান’ দিয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন তিনি।জন কেরির সোয়া নয় ঘণ্টা সফরের প্রথম কর্মসূচি শুরু হবে বেলা সাড়ে ১১টায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে। এরপর জাদুঘরটি ঘুরে দেখবেন তিনি।সেখান থেকে দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন জন কেরি। দুপুর ১টায় ইস্কাটনে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে করবেন। কেরির সম্মানে সেখানেই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন রেখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।দিনের দ্বিতীয় ভাগে বিকেল ৩টায় জন কেরি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে অবস্থিত ইএমকে সেন্টারে নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিকেল ৪টায় মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় একটি বস্ত্র শিল্প কারখানা পরিদর্শন করবেন তিনি।ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ও চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে বিকেল ৫টায় বৈঠক করার কথা রয়েছে।এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন তিনি। তবে ঢাকায় পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্ধারিত কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে ঢাকা তাকে এসএসএফ নিরাপত্তাসহ ভিভিআইপি মর্যাদা দিচ্ছে। কেরির সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন চিফ অব স্টাফ জন ফিনার, ডেপুটি মুখপাত্র মার্ক টোনারসহ আরো কয়েকজন সহকর্মী। এছাড়া সিএনএন, এপিসহ পাঁচটি মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন তার সঙ্গে।যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পুরো নাম জন ফোর্বস কেরি। ১৯৪৩ সালে দেশটির কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের সিনেটর এবং সিনেটে বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মনোনীত হন। তবে সে সময় রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে হেরে যান জন কেরি।সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে তার ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।এমএমজেড/এমএস
Advertisement