পিতামাতার সন্তুষ্টি ব্যতিত কোনো মানুষের কালিমা নসিব হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবি আলকামাহ’র ঘটনাই তা প্রমাণ করে। ইমাম ফকিহ আবু লাইস সমকান্দি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর রচিত ‘তাম্বিহুল গাফিলিন’ গ্রন্থে পিতামাতার অসন্তুষ্টিতে ঈমানহীন মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। যা এখানে তুলে ধরা হলো-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুবক সাহাবার নাম আলকামাহ। সে বিভিন্নভাবে দ্বীনের সাহায্য করত। হঠাৎ একদিন সে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাঁর স্ত্রী কোনো এক মাধ্যমে বিশ্বনবির নিকট আলকামাহ’র অসুস্থতার সংবাদ পৌঁছায়।বিশ্বনবি খবর শুনে হজরত আলি, হজরত বেলাল এবং হজরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে তাঁর অবস্থা দেখার জন্য পাঠান। তাঁর গিয়ে দেখলো, আলকামাহর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অবস্থা। তাঁরা তাঁকে কালিমারে তালকিন দিলেন অথচ কিছুতেই সে তাওহিদের কালিমা পড়তে পারছে না।এ সংবাদ প্রদানের জন্য হজরত বেলালকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে পাঠানো হলো। (সংবাদ শুনে) তিনি (বিশ্বনবি) জানতে চাইলেন, আলকামাহ’র পিতা মাতা জীবিত আছে কিনা? হজরত বেলাল জানালেন, শুধুমাত্র তাঁর বৃদ্ধা মা জীবিত আছেন।অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বেলালকে তাঁর মায়ের নিকট এ সংবাদ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে, যদি সম্ভব হয় সে যেন বিশ্বনবির দরবারে আসে, আর যদি সে আসতে অপারগ হয় তবে বিশ্বনবি নিজেই তাঁর বাড়িতে যাবেন। হজরত বেলাল বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বিশ্বনবির এ সংবাদ জানালেন।আলকামাহ’র মা এ কথা শুনেই বললেন, আমার জীবন বিশ্বনবির জন্য কুরবান হোক। আমি নিজেই বিশ্বনবির দরবারে উপস্থি হবো। অতঃপর বৃদ্ধা মহিলা লাঠির ওপর ভর করে বিশ্বনবির দরবারে উপস্থিত হয়ে বিশ্বনবিকে সালাম করে বসে পড়লেন।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘আমি যা কিছু জিজ্ঞাসা করি তার ঠিক ঠিক উত্তর দিবে। যদি মিথ্যা বল তবে আমি তা ওহির মাধ্যমে অবগত হবো। বিশ্বনবি জানতে চাইলেন, আলকামাহ’র জীবন কাল কেমন ছিল?বৃদ্ধা বলতে লাগলো, সে বেশি বেশি নামাজ পড়ত, রোজা রাখত; আর দান-সাদকা করার ক্ষেত্রে তো সীমা ছিল না। বিশ্বনবি তাকে আবার জিজ্ঞাসা করল, তোমার এবং তাহার সম্পর্ক কেমন ছিল?বৃদ্ধা উত্তর দিল- আমি তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কেন? বৃদ্ধা উত্তর দিল- সে তার স্ত্রীকে আমার ওপর প্রাধান্য দিত এবং স্ত্রীর কথা মতো চলত।তখন বিশ্বনবি উত্তর দিলেন, ‘মাতার অসন্তুষ্টি তাকে কালিমা পড়া থেকে বিরত রেখেছে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত বেলালকে বললেন, হে বেলাল! শুকনো কাঠ সংগ্রহ কর। আমি আলকামাহকে আগুনে জালিয়ে দিব।তখন বৃদ্ধা মাতা সন্তানের কঠিন শাস্তির কথা শুনে অস্থির হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার সামনে আমার কলিজার টুকরা সন্তানকে আগুনে পোড়াবেন! আমি ইহা কিভাবে সহ্য করব?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর শাস্তি ইহা অপেক্ষা কঠিন এবং দীর্ঘস্থায়ী। তুমি যদি চাও যে, আল্লাহ তোমার সন্তানকে ক্ষমা করুন; তাহলে তুমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমার সন্তুষ্টি ব্যতিত তার নামাজ রোজা ও অন্যান্য ইবাদাত কোনো কাজে আসবে না।এ কথা শুনে বৃদ্ধা বলতে লাগলো, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনাকে, আল্লাহকে এবং উপস্থিত সকলে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি আলকামাহ’র প্রতি সন্তুষ্ট।বিশ্বনবি হজরত বেলালকে বললেন, ‘আলকামাহ’র নিকট গিয়ে দেখ সে কালিমা পড়ছে কিনা? হতে পারে বৃদ্ধা আমাদের সম্মানার্থে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে, আন্তরিকভাবে সন্তুষ্ট নয়।হজরত বেলাল আলকামাহ’র দরজায় পৌছা মাত্র তাঁর কণ্ঠ থেকে কালিমা (لَا اِلَهَ اِلَّا الله) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করার শব্দ পেল। হজরত বেলাল ঘরে প্রবেশ করে সবাইকে জানাল যে, তাঁর মা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল বিধায় তার বাক-শক্তি রুদ্ধ হয়েছিল।এ সময় হজরত আলকামাহ এক মর্মস্পর্শী ভাষণ দেন-হে মুহাজির ও আনসারগণ! ভালো করে শুনে রাখ! যে ব্যক্তি স্ত্রীকে মায়ের ওপর প্রাধান্য দিবে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ। তার ফরজ এবং নফল আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে কবুল নহে।পরিশেষে...এ হাদিসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আহ্বান, পিতা-মাতার প্রতি অন্যায় আচরণ নয়; বরং পিতা-মাতাকে সর্ববস্থায় প্রাধান্য দিতে হবে। পিতা-মাতার সন্তুষ্টিমূলক কাজ করতে হবে। তাদের খেদমত করতে হবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে পিতামাতার সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি
Advertisement