ধর্ম

হজ প্রবর্তনে আল্লাহর হিকমত

হজের মধ্যে আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য ইহকালীন এবং পরকালীন জীবনে অনেক কল্যাণ অন্তর্ভূক্ত করে রেখেছেন। তিনি এ হজের মধ্যে নানা প্রকার বিভিন্ন ধরনের ইবাদাতের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। বিধান করে হজ প্রবর্তন করায় রয়েছে মহান প্রভুর হিকমত।পবিত্র বাইতুল্লাহর দর্শন, তাওয়াফ, মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায়, দাঁড়িয়ে ঝমঝমের পানি পান, সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈ, মিনায় অবস্থান ও নামাজ আদায়, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতঃ খুতবা শ্রবন-প্রাণ খুলে দোয়া, রাতে মুযদালিফায় অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপ ও রাত্রিযাপন, তথায় পশু কুরবানি ও মাথা মুণ্ডনসহ তাঁর নৈকট্য অর্জনে জন্য বেশি বেশি আল্লাহর জিকির ও তাঁর দিকে ধাবিত হওয়াকে বিধিবদ্ধ করেছেন।এ সব ইবাদাতে আল্লাহ তাআলার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সকল বান্দা পাপমুক্ত হয়ে তাঁর নৈকট্য অর্জন করা এবং জান্নাতে দাখিল হওয়া। হজ প্রবর্তনের হিকমতের প্রমাণ স্বরূপ বিশ্বনবির অসংখ্য হাদিস রয়েছে। সংক্ষেপে কিছু তুলে ধরা হলো-ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য>> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা হজ এবং ওমরা পর্যায়ক্রমে করতে থাক। কারণ এ দু’টি দারিদ্র্যতা দূর করে, পাপ মোচন করে। যেমনিভাবে কর্মকারের অগ্নিকুণ্ডু লোহা, সোনা ও রূপার মরিচা দূর করে দেয়। আর গৃহীত হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। (তিরমিজি)>> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি এ ঘরের হজ করল আর সে নির্লজ্জ কোনো কথা-বার্তা ও ফাসেকি কোনো কর্মে লিপ্ত হলো না, সে তার পাপ হতে ফিরে আসলো সেই দিনের ন্যায়; যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিল। (বুখারি ও মুসলিম)>> তিনি আরো বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক ওমরা হতে অপর ওমরা এ দুয়ের মাঝে কৃত পাপের কাফফারা। আর গৃহীত হজের একমাত প্রতিদান হলো জান্নাত। (বুখারি ও মুসলিম)>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কোন কাজটি অতি উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। বলা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। বলা হলো তারপর কোনটি? তিনি বললেন, গৃহীত হজ। (বুখারি ও মুসলিম)হজ প্রবর্তনের হিকমতহজ প্রবর্তন যে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয় তা হলো- আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানুষ (সকল)! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করতে পার। তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাবান যে অধিক মুত্তাকি। আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং সকল বিষয়ের খবরাখবর রাখেন। (সুরা আল-হিজরাত : আয়াত ১৩)এ আয়াতের মর্মার্থ থেকেই হজ প্রবর্তনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, বিশ্বের দূর-দূরান্ত থেকে মুসলমানগণ আল্লাহর উদ্দেশ্যে একই বাবা-মায়ের সন্তানের মতো সর্বাধিক প্রিয়স্থানে (পবিত্র নগরী মক্কায়) একত্রিত হতে আগমন করবে। যেখানে সবার মাঝে পারস্পরিক মিলন ঘটবে, একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হবে।তারা পরস্পরকে কল্যাণকর ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতার সুযোগ লাভ করবে। তাদের সবার কথা, কাজ ও জিকির আজকার হবে এক ও অভিন্ন। যা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক।সবার মুখে উচ্চারিত হবে এক আওয়াজ- ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক’।অর্থ : ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির; তোমার কোনো শরিক নেই; সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার; তোমার কোনো শরিক নেই।’মুসলিম উম্মাহকে হজের সময় আরাফাতের বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে একত্রিত করে একত্ববাদের শিক্ষা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার প্রশিক্ষণই হলো হজ প্রবর্তনের হিকমাত।পরিশেষে...আল্লাহ তাআলা হজ প্রবর্তনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর আক্বিদা, ইবাদাতে, উদ্দেশ্য ও ওসিলাতে বিশ্বব্যাপী ঐক্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রশিক্ষণ রেখেছেন। আর হাজিগণের একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে পারস্পরিক পরিচয় লাভ ও বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে আল্লাহ তাআলার কথা বাস্তবায়ন হয়ে থাকুক।এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে হজের কার্যক্রমের মাধ্যমে নিষ্পাপ ঘোষণা করেন। হজ হোক মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম এবং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার নৈকট্য অর্জনের সেতুবন্ধন। আমিন।এমএমএস/আরআইপি

Advertisement