রাজধানীর ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ ছাত্রীরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন কলেজের সভাপতি জেসমিন আক্তার নিপা এবং সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান অর্চি। তাদের কাজে বাধা দিলে ছাত্রলীগের জুনিয়র নেত্রীদের শারীরিক নির্যাতনসহ নানা অপকর্মে জড়াতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী।উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের প্রথম এই মহিলা কলেজ। ১৯৬৩ সালে আজিমপুরে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের পর এতে নতুন মাত্রা লাভ করে। ছাত্র রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণেরও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে কলেজটির মাধ্যমে। নারীর ক্ষমতায়নে এ কলেজের রয়েছে অনবদ্য অবদান। কিন্তু বর্তমানে নোংরা ছাত্র রাজনীতির ফলে এবং ছাত্রলীগ নেত্রীদের স্বেচ্ছাচারী আচরণের জন্য সম্মান হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠান।ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর জেসমিন আক্তার নিপাকে সভাপতি ও ইশরাত জাহান অর্চিকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ৯ জনকে সহ-সভাপতি, পাঁচজনকে যুগ্ম সম্পাদক, চারজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিনা কারণে ছাত্রীদেরকে মারধর, ব্যক্তিগত কাজে ছাত্রীদেরকে কাজে লাগানো, বাহির থেকে ছেলে নিয়ে এসে হলে ফুর্তি করা, হলে মাদকের আড্ডা, প্রশ্ন ফাঁস ও ভর্তি বাণিজ্য, অজ্ঞাত স্থানে যাওয়া-আসাসহ নানা অভিযোগ ওঠে নেত্রীদের বিরুদ্ধে। সিট বাণিজ্য : কলেজ প্রশাসন জানায়, কলেজের ৬টি হলেই সিট দেয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ। অনেক ক্ষেত্রে বহিরাগতদের অবৈধভাবে হলে রেখে ভাড়া আদায় করেন তারা।এছাড়া কলেজের আশপাশে থাকা দোকানগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসেরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।হলে ছেলে নিয়ে ফুর্তি : ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর একটি আবেদনপত্র দেয় রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীরা। আবেদনপত্রে বলা হয়, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাকিব হাসান সুইম, ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান অর্চির ২০১ নম্বর রুমে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় তারা বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।হলের একাধিক ছাত্রী জানিয়েছেন, রাজিয়া বেগম হলের ২১০ এবং ২১২ নম্বর কক্ষে অর্চি তার সহচরদের নিয়ে থাকে। এর মধ্যে ২১২ নম্বর কক্ষটি খুবই গোপনীয়। এ কক্ষটিই তাদের মাদক গ্রহণের নিরাপদস্থান হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সময়ে অনেক রাত করে হলে ফেরেন কলেজের নেত্রীরা। গেটের দারওয়ান বাধা দিলে তাকে চাকরিচ্যুত করারও হুমকি দেন তারা।ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ : ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গত বছরের ২৩ জুন কলেজে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- স্থগিতাদেশের পর ছাত্রলীগের পদ-পদবি ও নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো কর্মকাণ্ড করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র জানায়, এ ঘোষণার পরেও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও তারা যোগ দিয়েছেন। এ ঘটনার পর গত ১১ জানুয়ারি রাজিয়া বেগম হল থেকে ১৪, জেবুন্নেছা হল থেকে ২৫ এবং হাসনা বেগম হল থেকে ১৫ জনসহ মোট ৫৪ জন ছাত্রীকে বেআইনিভাবে হল থেকে বের করে দেন সাধারণ সম্পাদক অর্চি। প্রশাসনের রহস্যময় আচরণ : শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নিপার তিন বছর আগে ছাত্রত্ব শেষ হলেও এখনও সে অবৈধভাবে হলে অবস্থান করে সিট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। এদিকে সাধারণ সম্পাদক মাস্টার্সে উঠলেও গত তিন সেশনে পরীক্ষা দেয়নি বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে।এ ব্যাপারে কথা বলতে জেসমিন আক্তার নিপাকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ইশরাত জাহান অর্চির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে ফোন করতে বলেন।ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম জানান, তিনি অসুস্থ ছিলেন তাই এ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত রয়েছে। হল থেকে যদি কাউকে বের করা দেয়া হয়, সেটি কলেজ প্রশাসন দেখবে। এটা আমাদের ব্যাপার নয়। তবে স্থগিত কমিটি বহিষ্কার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।বিএ
Advertisement