দেশজুড়ে

কুষ্টিয়ায় চরমপন্থী পরিচয়ে শতাধিক ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি

কুষ্টিয়ায় চরমপন্থী সংগঠনের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক মানুষের কাছে মুঠোফোনে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা না দিলে স্বজনদের অপহরণ ও হত্যার হুমিক দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে, চরমপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে একাধিক চরমপন্থী সংগঠনের পরিচয়ে অন্তত শতাধিক ব্যক্তির কাছে মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদার হুমকি থেকে বাদ যায়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী এমনকি ক্ষমতাশীন দলের নেতারাও। কেউ কেউ চরমপন্থীদের কাছ থেকে নিজেদের বাঁচাতে নিরবে চাঁদার টাকা পরিশোধও করেছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের দাবি, তারা হুমকিদাতাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাতেও চাঁদা দাবির বিষয়টি থামছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, গণমুক্তি ফৌজ ও সর্বহারা পার্টির পরিচয় দিয়ে জেলার প্রায় শতাধিক ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাশীন দলের নেতাকে।মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মিলনকে গত ২২ আগস্ট গণমুক্তি ফৌজের প্রধান মুকুল পরিচয় দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে পরিবারসহ তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ ঘটনার পরের দিন ২৩ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা চ্যানেল২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার শরীফ বিশ্বাসকেও হুমকি দেয়া হয়।  একই দিন জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রকৌশলী সাইফুল আলমকে সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার বিপ্লব পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলে তাদের পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। চরমপন্থী দলের পরিচয়ে চাঁদা দাবির ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন খান। সাংবাদিক শরীফ বিশ্বাস বলেন, গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার বিপ্লব পরিচয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদা না দিলে পরিবারসহ হত্যার হুমকি দেয়া হয়।স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল আলম বলেন, সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার বিপ্লব পরিচয়ে চাঁদা চেয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। চাঁদা না দিলে আজকেই শেষ রাত হবে বলে হত্যার হুমকি দেয়া হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানায়, অনেকেই জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে এরই মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি চাঁদাদাবির ঘটনা ঘটেছে জেলার কুমারখালী উপজেলায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপজেলা সহ-সভাপতি জালাল খান, কয়া স্কুলের শিক্ষক শামুসল ইসলাম, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার রেন্টু, জাহাঙ্গীর আলম ফিরোজ, আব্দুল হান্নান ও হামিদুলসহ উপজেলার প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির কাছে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নামে চাঁদা দাবি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চাঁদা না দিলে পরিবারসহ প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়।  স্কুল শিক্ষক শামুসল ইসলাম জানান, কয়েকদিন আগে ০১৬৩১-০৪৭২৬৪ নম্বর থেকে ফোন আসে। অপরপ্রাপ্ত থেকে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির পরিচয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। দেয়া হয় মৃত্যুর হুমকি। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এদিকে চাঁদা দাবির ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপরে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি হলেও প্রশাসন এই ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। চাঁদা দাবির ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, চাঁদা দাবি করা মোবাইলের সিমের তথ্য যাচাই করে দেখা হয়েছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চরমপন্থী অথবা চাঁদাবাজ যে সংগঠনেরই হোক না কেন তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, চরমপন্থী পরিচয়ে চাঁদা দাবি যে বা যারা করছে এরা আসলে চরমপন্থী নয়। বলতে পারেন টোকাই-ছিঁচকে চোর। কেননা কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এখন আর কোনো চরমপন্থীর অস্তিত্ব নেই। ইতোমধ্যেই সবাই ক্রসফায়ারে মারা গেছে। ওসি শাহাবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঈদ এলেই এক শ্রেণির টোকাই-ছিঁচকে চোর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চরমপন্থী সংগঠনের নামে চাঁদা দাবি করছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আল-মামুন সাগর/এএম/পিআর

Advertisement