মতামত

মার্গারিটার অলিম্পিক পদক, আমাদের পারা না পারার গল্প

বাংলাদেশ থেকে কেউ অলিম্পিকে পদক জিতেনি বলে অনেকের অনেক আক্ষেপ দেখেছি গত কয়েক দিনে।  আর এই আক্ষেপ আরো বেড়েছে রিও অলিম্পিকের রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সের একক অল-অ্যারাউন্ড ইভেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাশিয়ান কন্যা  জিমন্যাস্ট মার্গারিটা মামুন-এর সোনার পদক জেতার কারণেও। কারোর প্রতি আক্ষেপ বা অভিযোগ শুধু আমাদের মনে ঘৃণা, দুর্বলতা, হিংসা-প্রতিহিংসার  জন্ম দেয়, এর চেয়ে বেশি কিছু না, আর আমরা যদি আমাদের শক্তি শুধু পরশ্রীকাতরতায়, বিশ্বাসঘাতকতা, স্বার্থপরতার মতো নেতিবাচক কাজেই লাগাই তাহলে  অন্যান্য দেশের মানুষ এগিয়ে যাবে, মেডেল জিতবে তখন আমরা আবারো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো আর আফসোস করবো।ভেবে দেখুন, যারা অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে বা মেডেল জিতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তারা কিন্তু আমাদের মতই মানুষ, মঙ্গল গ্রহ থেকে আসেনি। ঠিক যেমন, বাংলাদেশের ক্রিকেট সারাবিশ্বে উঁচু জায়গা নিয়ে রেখেছে, যা অনেক দেশের কাছে কল্পনাতীত, তাইনা? সুতরাং কোন কিছু অর্জন করা অসম্ভব কিছু না। শুধু দরকার উদ্যোগ। অনুপ্রাণিত হওয়া আর কার্যক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা।  পড়াশুনা আর কোচিং এর চাপ কমিয়ে আপনার সন্তানকে  উৎসাহিত করুন সপ্তাহে দুইদিন অন্তত খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম অথবা অন্য কোনো শারীরিক কার্যক্রমে যুক্ত করতে। আমি শুধু ছেলেদের কথা বলছি না, আমি মেয়েদের কথাও বলছি।  শারীরিক ভাবে ফিট থাকা শুধু কোনো প্রতিযোগিতার জন্য নয়, ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়াটা জরুরি, তাইনা? মেয়েকে ফর্সা হতে হবে- তার থেকে অনুপ্রাণিত করুন পরিশ্রমী হতে। মেয়েকে যে বারবি ডল এর মত সুন্দর হতে হবে, এই কনসেপ্ট মাথায় না ঢুকিয়ে, অনুপ্রাণিত করুন নিজের যোগ্যতা বাড়ানোর, নিজের মেরুদণ্ড শক্ত করার। যোগ্যতা শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারেই সীমাবদ্ধ নয়। যোগ্যতা, সাফল্য, সার্থকতা যেকোনো সেক্টর, যে কোনো সাবজেক্ট থেকে, যে কোনো বয়সেই  হতে পারে।আমি দুই সন্তানের মা। আমি মিজ আয়ারল্যান্ড এর জন্য ছয় মাসে ওজন ১২ কেজি কমিয়ে ৩৪-২৪-৩৪ ফিগারে নিজেকে তৈরি করেছি । ঐ একই আমি, মিজ আর্থের জন্য জিরো ফিগার যা ৩২-২২-৩৩ ওজন এক রেখে, ঐ একই ওজনের আমি আইরিশ মুভির জন্য সিক্স প্যাক এবস তৈরি করেছি। সিক্স প্যাক করা সম্ভব হয়েছে আমার শরীরের ফ্যাট লেভেল এথলেটিক্স দের মত নামাতে সক্ষম হয়েছি বলে। ওজন একই রয়েছে কারণ আমি প্রোটিনযুক্ত  খাবার খেয়ে, শরীরে মাংসপেশির পরিমাণ ঠিক রেখেছি, যার কারণে ওজন কমেনি। সবই সম্ভব হয়েছে আমার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি, নিয়মিত অনুশীলন ও  পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, যা আমি আমার অভ্যাসে পরিণত করেছি। আর এই জার্নি তা কিন্তু খুব বেশি পুরোনো নয়। জুলাই ২০১৩ থেকে শুরু করেছি। আর এখন আমি একজন pole dancer ।যার জন্য শরীরের flexibility, strength এবং প্রতিটা অঙ্গের আলাদা আলাদা কন্ট্রোল লাগে। একবারও ভাবিনি `আমার দৈহিক গড়ন বাংলাদেশি, আমাকে দিয়ে হবে না।` আমি শুধুই ব্রেইন কে নির্দেশনা দিয়েছি, ‘অন্যরা পারলে আমি পারবো না কেন, অন্যদের হলে আমার হবে না কেন।’ ব্রেইন তাই রেজিস্ট্রার করবে আপনার ব্রেইন কে যা আপনি সিগন্যাল দিবেন। সুতরাং স্টিয়ারিং আপনার হাতে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন দিকে নিজেকে ড্রাইভ করবেন।   নিজ ঘর থেকেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে, করে দিতে হবে।  `পিছু লোকে কিছু বলে`- এ ধরনের ধ্যান ধারণা মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে হবে। মানুষের কটূক্তি হাসতে হাসতে উড়িয়ে দিতে জানতে হবে। কথায় বলে বাঙালির নাকি তিনটা হাত- ডান হাত, বাম হাত আর অজুহাত। অজুহাত দিয়ে আমরা যে কোনো ব্যর্থতা ঢাকতে চাই। এটা চলতে পারে না। অজুহাত দেয়া অথবা  অভিযোগ করার অভ্যাসটি ত্যাগ করতে হবে। মিশন থাকবে, আমি করব আর আমাকে করতে হবে, কোন ধরনের বাধা আমার মিশন নষ্ট করবে কেন? ব্রেইন এর মধ্যে তা ইন্সটল করে ফেলুন। আপানার শহরে জ্যাম থাকবে, শব্দ থাকবে, লোডশেডিং থাকবে, আপনাকে ক্লান্ত করে দেয়ার চেষ্টা থাকবে। এগুলোই হলো আপনার প্রতিকূলতা। আর  প্রতিদিনের এই প্রতিকূলতাকে জয় করেই আপনার লক্ষ্যে  পৌঁছাতে হবে। এজন্য তীব্র ক্ষুধা  থাকতে হবে।  প্রয়োজনই আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে। দেবে তৃপ্তি, স্বস্তি, শান্তি। আর এই অর্জন হবে আপনার নিজের, যা জীবনের অহঙ্কার হয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলবে। লেখক : বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত  মিজ আর্থ (২০১৬), মিজ আয়ারল্যান্ড (২০১৪) মডেল ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। পেশাগত জীবনে বৈমানিক।এইচআর/এমএস

Advertisement