টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এখন নিজেই রোগাক্রান্ত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ওষুধ সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসার পর ওষুধ না পেয়ে স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতাদের দোকানে ছুটছেন তারা।সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি ভবনে চলছে পাথরাইল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম। কেন্দ্রটির ভবনের দেয়াল ভেঙে খসে পড়ছে ইট আর বালু। ছাঁদ ফেটে পড়ছে বৃষ্টির পানি। প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রাদিসহ মূল্যবান ওষুধপত্র রাখার জন্য কোনো আসবাবপত্র নেই। ডাক্তার ও রোগী বসার যে ফার্নিচার রয়েছে তাও ভঙ্গুর। একটি কেবিন ও টিউবওয়েল থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। নেই এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিরাপত্তায় কোনো সীমানা প্রাচীর। এমনকি রাখা হয়নি এটি চেনার জন্য কোনো সাইনবোর্ডও। ফলে দূর থেকে দেখে যে কেউই মনে করবে এটি একটি পরিত্যক্ত ভবন।জানা যায়, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল মান্নান এটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তামানে এখানে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন। এর মধ্যে একজন মেডিকেল অফিসার, দুইজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এম.এল.এস.এস।পাথরাইল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা মঙ্গলহড় গ্রামের বিলাসী বেগম নামের এক রোগী জানান, এই ভবনটির ভিতরে ঢুকতে ভয় করে। দেখে মনে হয় যেকোনো সময় ভবনটি ভেঙে পড়বে। প্রায় প্রতি মাসেই বাড়ির কোনো না কোনো সদস্যকে নিয়ে এখানে আসতে হয়। এখানে রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া গেলেও সব ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় না। ফলে এলাকার দরিদ্র রোগীদের জন্য অনেকটাই কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে চিকিৎসা সেবা।পাথরাইল বাজার এলাকার রহমত নামের এক রোগী জানান, জ্বর আর ঠান্ডার ওষুধ ছাড়া এখানে অন্য কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। ওষুধ গুলো কিনতে হয় বাইরের দোকান থেকে যা এই এলাকার অনেক রোগীর পক্ষেই কেনা কষ্টকর। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যদি এ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হত তাহলে গ্রামের সাধারণ মানুষ উপকৃত হত বলেও জানান তিনি। পাথরাইল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন বিভিন্ন বয়সী রোগী আসেন। তিন মাস পরপর ওষুধ সরবরাহ পাওয়া গেলেও দুই মাসেই এর ৯০ ভাগ ওষুধ শেষ হয়ে যায়। ফলে চাহিদা মতো ওষুধের সেবা পাচ্ছেন না এখানে আগত রোগীরা। পাথরাইল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. নিতাই চন্দ্র বসাক বলেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি না থাকায় আমরা চিকিৎসা প্রত্যাশী মানুষদের সঠিকভাবে সেবা দিতে পারছি না। এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীর চাপ বেশি। যে ওষুধ সরবরাহ দেয়া হয় তা দিয়ে এত রোগীর ওষুধ চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়না। ফলে প্রায় প্রতিদিন রোগীরা ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন আগে নির্মিত এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ভবনটিও হয়ে পরেছে ঝুঁকিপূর্ণ। ভবন ভেঙে পড়ার ঝুঁকি নিয়েই এখানে কাজ করতে হচ্ছে।এ ব্যাপারে দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহমান বলেন, ভবনটির মেরামতের জন্য সিভিল সার্জনের কাছে চিঠি পাঠানোর পক্রিয়া চলছে। এছাড়াও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ওষুধ সঙ্কটের বিষয়টি নিয়েও সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। দ্রুত এ সকল সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।এফএ/এমএস
Advertisement