সোমবার বিকেল ৫টা । রাজধানীর ব্যস্ততম সময়। কর্মব্যস্ত ঢাকা বাড্ডার প্রগতি সরণির ময়লার ভাগাড়ে এসে যেন একেবারেই গতিহীন হয়ে পড়ল। দুর্গন্ধ আর ময়লায় আটকে আছে এখানকার জনজীবন। জীবন বিষিয়ে তোলা দুর্গন্ধ থেকে যেন কোনোই মুক্তি মেলে না এখানকার মানুষের। কবে থেকে এখানে ময়লা ফেলা হয়, ভুলে গেছে এর আশপাশের মানুষ। তবে এই ভাগাড়ের বয়স দেড় যুগ পেরিয়েছে বলে মত দিলেন কেউ কেউ। কেউ বললেন, আরো আগে থেকে এখানে ময়লা ফেলা হয়। সময় গড়িয়েছে। পরিবর্তিত সময়ে প্রগতি সরণি রাস্তার দুই ধারে আকাশছোঁয়া সারি সারি ভবন নির্মিত হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়ছে সমান তালে। রাজধানীর অন্যতম ঘনবসতি এলাকাও বাড্ডা প্রগতি সরণি। পরিবর্তনের ডাক সর্বত্রই। পরিবর্তন হয়েছে বাড্ডা লিংক রোড সংলগ্ন ময়লার ভাগাড়েও। ভাগাড়ের আকার বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কোনো সময়ের চেয়ে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে অধিক মাত্রায়। এখানে দিনভর ময়লা আসে। দিনভর-ই ময়লা সরানোর কাণ্ড লীলা চলে। দেখে মনে হয়, অভিভাবকহীন কোনো পরিত্যক্ত নগরীর খণ্ড চিত্র। বিকালে ভাগাড়ের পাশে যেতেই সেই চিরচেনা দৃশ্য চোখে পড়ল। ভ্যানে ময়লা আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে। ময়লা ভরা আর খালি ভ্যানগুলোর কয়েকটি রাখা আছে মূল রাস্তার ওপরই। ময়লা বহনের কয়েকটি ট্রাকও দাঁড়িয়ে সেখানে। মূল রাস্তা আটকে, তাতে ময়লা তুলে দিচ্ছে ড্রোজার। বৃষ্টির পানি তখনও শুকায়নি। তাতে যুক্ত হয়েছে ময়লার পানিও। ময়লা এবং ময়লা ফেলার বাহনের কারণে আটকে গেছে শত শত গাড়ি। ভাগাড় থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত অসহনীয় যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। পাশেই শমসের অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানা। কারখানায় ছুটি হওয়া শ্রমিকরা ভবনের নিচে নেমেই নাক-মুখ হাতে চেপে ধরছেন। যেন দম বন্ধ হওয়া অবস্থা। নাক-মুখ চেপে ধরতে হচ্ছে পথচারীদেরও। যারা গাড়িতে বসে যানজটে আটকা, তারাও গন্ধ থেকে রেহাই পেতে শত চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোই উপায় মেলে না। গন্ধ আর যানজট যেন এখানকার নিত্যসঙ্গী। কথা হয় পোশাক কারখানার শ্রমিক সালমা খাতুনের সঙ্গে। বলেন, ‘মরার শহর। এখানে মানুষ থাহে? গরু-ছাগলও এর চাইতে ভালো জায়গায় থাহে। উপায় নাই বলে এমন গন্ধের মধ্যে এসে চাকরি করি। আমাগো সঙ্গের অনেকেই চাকরি ছাইড়া চইলা গেছে গন্ধের কারণে। ভবনের ভেতরেও দুর্গন্ধ আসে।’ ভাগাড়ের পাশে ফুটপাতঘেঁষে চা বিক্রি করেন জনি। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আগের থেকে বিপদ আরো বাড়ছে। এখানে সারাদিনই ময়লা আসে, সারাদিনই ময়লা সরানোর কাজ চলে। মানুষ যেহেতু বাড়ছে, তাই ময়লার পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু রাস্তার জায়গা তো আর বাড়েনি। এই যে দেখছেন যানজট, তা ময়লার কারণেই। ময়লা দিয়ে রাস্তা বন্ধ হলে গাড়ি চলে ক্যামনে?’ কথা হয় রাজু গ্লাস হাউসের মালিক মিজানুর রহমানের সঙ্গে। বলেন, ‘এখান থেকে ময়লার আস্তানা সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেকেই ভোট নিলেন। যারা ভোট পেয়ে ক্ষমতায় গেলেন, তারা আর এই রাস্তায় আসেন না। এলেও গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে চলেন। তাদের তো কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তো সাধারণ মানুষের।’ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, ‘শুনছি নগর ব্যবস্থাপনায় নাকি গতি এসেছে। ভুয়া কথা। ক্যামেরার সামনের কথা আর বাস্তবের কথা আলাদা। মেয়ররা এখানে এসে অমন কথা বলুক, দেখি? শুনছি, ঈদের পর নাকি ময়লার আস্তানা সরানো হবে। দেখা যাক, কি হয়? এমন ওয়াদা তো কয়েক বছর থেকেই পেয়ে আসছি।’ তবে এ ব্যাপারে ডিসিসি উত্তরের মেয়র আনিসুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এএসএস/জেএইচ/এবিএস
Advertisement