বিশেষ প্রতিবেদন

এক ডজন অসুখে প্রতিদিন দুই ডজন ওষুধ খান বাবর

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দাপুটে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। যার সাক্ষাৎ পেতে মন্ত্রিপাড়ায় তার বাসার সামনে প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী, বন্ধু ও স্বজনরা অপেক্ষার প্রহর গুনতেন। তার ব্যবহৃত লাল টেলিফোন বেজে উঠতেই সচিবালয়ের বড় বড় সচিব ও আমলারা ওপারে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে জি স্যার, জি স্যার বলতেন।পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা (আইজিপি) থেকে শুরু করে সকলেই তার সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই বুটে ঠক্কাস্ শব্দ তুলে সালাম ঠুকতেন। জনশ্রুতি রয়েছে, ক্ষমতাধর এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মুখের কথায় মামলা হতো, আসামিও গ্রেফতার কিংবা ছাড়া পেতো।হালকা পাতলা শারীরিক গড়নের এই প্রতিমন্ত্রীর খাড়া খাড়া চুলে জেল লাগিয়ে আরও খাড়া করে রাখার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তার বিখ্যাত উক্তি ‘উই আর লুকিং ফর শক্রুস্’ এখনও অনেকেই হয়তো ভুলে যাননি। ডাকসাইটে এ ব্যক্তি হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর।বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় ঐক্যজোটের আমলের এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ বন্দি। তার বিরুদ্ধে ১০ ট্রাক অস্ত্র ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট বোমা হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেন না তিনি এখন কেমন আছেন। কীভাবে কাটছে তার নিত্যদিন। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তার বর্তমান হাল হকিকত।`সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দেবো কোথা।’ বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। লুৎফুজ্জামান বাবরের ক্ষেত্রে বর্তমানে এ প্রবাদটি শতভাগ প্রযোজ্য। এক সময়ের ডাকসাইটে এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে জেলের প্রকোষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ডজন খানেকেরও বেশি অসুখ বাসা বেঁধেছে প্রবীণ এ নেতার দেহে। দেহঘড়িকে সচল রাখতে তাকে প্রতিদিন নিয়ম করে দুই ডজনেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেতে হচ্ছে। ওষুধ খেয়েও সুস্থ থাকছেন না। অসুস্থ হলে প্রাথমিকভাবে কারা চিকিৎসক ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হয় গাজীপুর, নয় ঢাকা মেডিকেল আর নয়তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে।জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লুৎফুজ্জামান বাবরের ডজন খানেক রোগের মধ্যে অন্যতম রোগগুলো হলো- ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিওসোপাজিল রিফ্লাক্স ডিজিজেজ (জিইডি), ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম (আইবিএস), হাইপারটেনশন (এইচপিটি), স্পন্ডিওলাইসিস, পলিপ, আর্থাইটিস ও অস্ট্রিওপ্রোসিস। লুৎফুজ্জামান বাবরের খোঁজখবর রাখেন এমন একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে তাকে প্রতিদিন দুই ডজনেরও বেশি ওষুধ খেতে হয়। তিনি যতটুকু খাবার গ্রহণ করেন তার চেয়ে বেশি ওষুধ খান।কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জাগো নিউজকে জানান, লুৎফুজ্জামান বাবর ২০০৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে কাশিমপুর কারাগারে আটক। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের ওপর গ্রেনেড হামলার মামলা রয়েছে। সুব্রত কুমার বালা আরো জানান, লুৎফুজ্জামান বাবর বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ভুগছেন এবং বহু সংখ্যক ওষুধ খাচ্ছেন। চিকিৎসাসেবা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অসুস্থ হলে প্রাথমিকভাবে কারা চিকিৎসক ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হয় গাজীপুর, নয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নয়তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।এমইউ/একে/এমএস

Advertisement