খেলাধুলা

সাবেক তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে কক্সবাজারে ক্রিকেট কার্নিভাল

কোন বিশেষ দিন বা উপলক্ষ্যে মাঝে মধ্যে তারা মাঠে নামেন। উইকেন্ড ক্রিকেট খেলেন; কিন্তু ঘটা করে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এখন আর তাদের দেখা মেলে না। কারণ, তাদের সবার গায়েই ‘সাবেক ক্রিকেটারে’র তকমা। অথচ এক সময় তারা মাঠ মাতিয়েছেন। ব্যাট ও বলে দ্যুতি ছড়িয়ে আলোকিত করেছেন ক্রিকেটাঙ্গন। প্রকৃতির নিয়মে এক সময় খেলা ছেড়ে একেকজন একেক পেশায়। আকরাম খান, নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, মাহবুব আনাম, জালাল ইউনুসরা বোর্ড পরিচালক। মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, হাবিবুল বাশার সুমন, সাজ্জাদ আহমেদ শিপন, হাসিবুল হোসেন শান্ত, এহসানুল হক সেজান প্রমুখ বর্তমান কিংবা সাবেক নির্বাচক। ওয়াহিদুল গনি, সারোয়ার ইমরান, মিজানুর রহমান বাবুল, সালাউদ্দীন, সোহেলরা ক্রিকেটার গড়ার কারিগর (কোচ) হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন। কেউবা আবার ক্রিকেট ছেড়ে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী কিংবা চাকুরিজীবী। তবে এবার, বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগিদের জন্য সুখবর, সে সব সাবেক তারকারা খেলা ছাড়ার পর আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে মাঠে নামছেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ‘মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল বাংলাদেশ।’ মোট ৬টি দল অংশ নেবে সাবেক ক্রিকেটারদের এ আসরে। ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে খেলা হবে। সেমিফাইনালও হবে সেখানেই। তবে আয়োজক ও ব্যবস্থাপকরা নিশ্চিত করেছেন ফাইনাল হবে মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে; দিবা-রাত্রিতে ফ্লাড লাইটের আলোয়। মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালের ফাইনালের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। জানা গেছে ৬ কিংবা ৭ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলায় অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।মুলতঃ সাবেক ক্রিকেটাররাই এর আয়োজক। জাতীয় দলের তিন সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন ও খালেদ মাসুদ পাইলট এ আয়োজনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করছেন। অন্যতম আয়োজক আকরাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুলতঃ এটা একটা ক্রিকেট কার্নিভাল। আমরা চাচ্ছি সাবেক ক্রিকেটারদের একটা সন্মিলন ঘটাতে। এক কথায় বলতে পারেন, মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল হবে সাবেক ক্রিকেটারদের মিলনমেলা।’ শুধু মিলনমেলাই নয়, একে জনহিতকর কাজে ব্যবহারেরও ইচ্ছা আছে আয়োজকদের। আকরাম খান বলেন, ‘পাশাপাশি আমাদের এই আয়োজনকে স্বার্থক করে রাখতে একটা লক্ষ্য স্থির করেছি। এই আসর আয়েজনের সমুদয় ব্যয় নির্বাহের পর যে অর্থ উদ্বৃত্ত থাকবে, তা দিয়ে আমরা ক্রিকেটারদের একটা কল্যাণ তহবিল তৈরীর চেষ্টা করবো।’আকরাম খান আরও বলেন, ‘প্রথমবার হিসেবে এবার কী পরিমান অর্থ জমা পড়বে, তা আগাম বলা কঠিন। তবে আমরা চাচ্ছি প্রতি বছর এভাবে ক্রিকেট কার্নিভাল আয়োজন করতে। এর অর্থ দিয়েই সাবেক ক্রিকেটার ও কোচদের একটা স্থায়ী কল্যাণ তহবিল তৈরীর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। এছাড়া দেশের ক্রিকেটে যাদের অবদান রয়েছে, যারা বাংলাদেশের ক্রিকেট উত্তরণে কার্যকর ভুমিকা পালন করেছেন, আমরা তাদেরও সন্মানিত করার উদ্যোগ নিয়েছি।’ সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে এ আয়োজনের পুরো ব্যবস্থপনায় থাকবে ‘ইমেগো স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট।’ ইমেগোর অন্যতম কর্মকর্তা রেজোওয়ান উজ্জামান রাজিব ও আহমেদ রাকিব জাগো নিউজকে জানান, ইতিমধ্যেই ১০০ সাবেক ক্রিকেটার এই কার্নিভালের জন্য নাম নিবন্ধন করেছেন।আয়োজক ও ব্যবস্থাপক সুত্র নিশ্চিত করেছে নিবন্ধনকৃত ক্রিকেটারদের মধ্যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশকে প্রথম নেতৃত্ব দেয়া শফিকুল হক হীরা, জাতীয় দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, ৭০ দশকে জাতীয় দলে খেলা এএসএম ফারুক, ওমর খালেদ রুমি প্রমুখ ক্রিকেটারও রয়েছেন। প্রতিযোগিতাকে আকর্ষণীয় করতে আয়োজকরা কিছু নিয়ম-নীতিও অবলম্বন করছেন। সাবেক ক্রিকেটার মাত্রই এ মাস্টার্স কার্নিভালে অংশ নিতে পারবেন না। এ আসরে অংশ নেবার জন্য তিনটি শর্ত রাখা হয়েছে।প্রথম ক্রাইটেরিয়া হলো সাবেক জাতীয় কিংবা ‘এ’ দলের ক্রিকেটার হতে হবে। না হয়, অন্তত ৫ বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। জাতীয় লিগে শুরু থেকে অংশ নেয়া চার বিভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীর সাথে ঢাকা মেট্টো মাস্টার্স নামে দল থাকবে। এর বাইরে সিলেট, বরিশাল ও রংপুরের হয়ে জাতীয় লিগ খেলা ক্রিকেটারদের নিয়ে সাজানো হবে অলস্টার্স মাস্টার্স। জাতীয় দলের ছয় সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, আকরাম খান, নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট ও হাবিবুল বাশার সুমন ছয় দলের নেতৃত্বে দেবেন। এর মধ্যে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান অলস্টার্স মাস্টার্সের নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে থাকবেন। ১৯৯৭ সালে যার নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফি জিতে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলার ছাড়পত্র পায়, সেই আকরাম খান নিজ বিভাগ চট্টগ্রাম মাস্টার্সের অধিনায়কত্ব করবেন। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় থাকবেন ঢাকা বিভাগের নেতৃত্বে। খালেদ মাহমুদ সুজন ঢাকা মেট্টো মাস্টার্সের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন। খেলোয়াড়ী জীবনে যে বিভাগের অধিনায়ক ছিলেন সেই খুলনার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। আর খালেদ মাসুদ পাইলট থাকবেন রাজশাহী মাস্টার্সেও দায়িত্বে। এ ছ’জন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারের পাশাপাশি প্রতি দলে চার জন করে আইকন ক্রিকেটার থাকবেন। সেখানেও একটা শর্ত আছে। ওই চার ক্রিকেটারকে অবশ্যই নিজ বিভাগের হয়ে জাতীয় লিগ খেলার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যেমন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, এনামুল হক মনি এবং আফতাব আহমেদ চট্রগ্রাম বিভাগের হয়ে জাতীয় লিগ খেলেছেন। তারা চট্টগ্রাম মাস্টার্সের আইকন ক্রিকেটার। একইভাবে বাকি পাঁচ দলেও অমন চারজন করে আইকন ক্রিকেটার থাকবেন যারা ঢাকা, ঢাকা মেট্টো, খুলনা ও রাজশাহীর হয়ে জাতীয় লিগ খেলেছেন। এছাড়া বরিশাল, সিলেট ও রংপুরে জাতীয় ক্রিকেটারের সংখ্যা কম বলে ওই তিন বিভাগের ক্রিকেটাররা অলস্টার্স মার্স্টার্সের হয়ে খেলবেন। এদিকে খুলনা ছাড়া সব দলের ফ্র্যাঞ্চাইজিও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ঢাকা বিভাগের ফ্র্যাঞ্চাইজি হলো লোটাস কামাল গ্রুপ। বিসিবি, এসিসি ও আইসিসির সাবেক প্রধান কন্যা নাফিসা কামাল ঢাকা মেট্টো মাস্টার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি। ঢাকা বিভাগের ফ্র্যাঞ্চাইজি জেবি গ্রুপ। ইস্পাহানী গ্রুপ হলো চট্টগ্রামের। রেঁনেঁসা গ্রুকে দেখা যাবে রাজশাহীর ফ্রাঞ্চাইজি হিসেবে।অনদিকে অলস্টার্স মাস্টার্সেও ফ্রাঞ্চাইজি হলো লংকা বাংলা গ্রুপ। কেবলমাত্র খুলনা মাস্টার্সেরই শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি চুড়ান্ত হয়নি। তবে আয়োজকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রুবি সিমেন্টই হবে খুলনার ফ্র্যাঞ্চাইজি। এআরবি/আইএইচএস/এবিএস

Advertisement