তার আসল নাম মো. মসিউদ্দিন ওরফে মুসা। ২১টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার নামে; কিন্ত্ত একটাও আসল নামে নয়। আইএস জঙ্গি সন্দেহে ভারতে আটক এই মুসার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ঘাঁটতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।সম্প্রতি কলকাতায় গিয়ে মুসাকে জেরা করেছেন র্যাবের তিন কর্মকর্তা। তারাও মুসার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগ্রহ করেছেন এমন তথ্য, যা গুলশানে জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্তে সাহায্য করবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের দিকে আবু মুসা আল বাঙালি নামে মসিউদ্দিন নিজের প্রথম ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি চালু করে। এ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অন্তত ৬৭ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুসা। প্রথমদিকে নিয়মিত এই অ্যাকাউন্ট থেকে যোগাযোগ করা হলেও পরে হায়দারাবাদ থেকে কয়েকজন সন্দেহভাজন গ্রেফতার হওয়ার পর এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ভারতের প্রধান সফি আরমার নিজেও একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তার সঙ্গেও এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখত মুসা। তারা দু`জনেই ফেসবুক এবং টুইটারের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ শুরু করে। পরেজরুরি তথ্য আদানপ্রদান করে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে। তবে এতে গোয়েন্দা নজরদারি বেড়ে গেছে, তা বুঝতে পারার পর মুসা সাহায্য নেয় আইএসের টেকনিক্যাল টিমের। যার নাম ছিল লাইব্রেরি অফ জিল। সেখান থেকেই তাদের আইএসের নিজস্ব অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে `আইএম প্লাস`, `হাইক কাকাও`, `নিমবাজ`, `ব্যাং`, `কিক`-সহ প্রায় দশ বারোটি অ্যাপ। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু এগুলো আইএসের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম তৈরি করেছিল, সুতরাং তারা চাইলে সব চ্যাট হিস্ট্রি মুছেও দিতে পারত। তবে মুসার যে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি রয়েছে, সেখানে তার বন্ধুর তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজনের দিকে আপাতত নজর রাখেছেন গোয়েন্দারা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত জুন মাসেও আইএসের বিভিন্ন নৃশংস কার্যকলাপের ভিডিও বাংলায় সাবটাইটেল সহকারে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট করেছে মুসার ফেসবুক বন্ধুরা। এমনকি, তাদের ওয়ালে লেখা হয়েছে মুক্তি পেতে হলে সিরিয়া যাওয়ার কথাও। পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, আসলে এভাবেই রিক্রুটমেন্টের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল মুসার নেতৃত্বে একটি দল। মুসার ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দু`টি সাইট শেয়ার করা হয়েছিল। তার একটি `আমরা আনসার` এবং অন্যটি `আত তামকিন`। যদিও বাংলাদেশ পুলিশ কিছুদিন আগেই এই `আত তামকিনের` উপর নজরদারি করে সেই সাইটটির প্রচার এবং কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে। শনিবার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মুসার ফেসবুক বন্ধুদের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের অধিকাংশই কলেজের ছাত্র। এদের প্রোফাইলে বেশ কিছু ছবি রয়েছে; তাদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কোনও সম্পর্ক আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, এসব ছবিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইএসের পোশাক পরে তা প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এসআইএস/এবিএস
Advertisement