বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার জোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার সংসদে সরকারি দলের সদস্য নুরজাহান বেগমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পাকিস্তানকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবার জন্য অনুরোধ করে এসেছে। এ ব্যাপারে অদ্যাবধি কয়েকটি বৈঠক হয়েছে।তিনি আরো বলেন, আটকেপড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের বিষয়ে সম্প্রতি কোন জনশুমারি না হওয়ায় বর্তমানে তাদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভবপর নয়। তবে ১৯৯২ সালে সর্বশেষ পরিচালিত জরিপ হতে তাদের সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪০ জন ছিল বলে জানা যায়।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের মে মাসে মাননীয় হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের সন্তানগণ যারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির সুযোগ লাভ করেন। এর প্রেক্ষিতে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার জন ঊর্দুভাষী আটকেপড়া পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেন বলে জানা গেছে।তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি বাংলাদেশ-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত বিষয়সমূহের একটি। ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত সমীক্ষা অনুসারে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৯ জন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করে এবং পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করে। ১৯৭৩ সালের দিল্লী চুক্তি এবং ১৯৭৪ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর রূপরেখা বর্ণিত আছে। এতে বাংলাদেশে আটকে পড়া সকল পাকিস্তানি নাগরিককে পাকিস্তান ফেরত নেয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ মাত্র তিন শ্রেণীভুক্ত ব্যক্তিদের পাকিস্তানে ফেরত দিতে সম্মত হয়েছিলো, যেখানে ১৯৭৩ সালের চুক্তি অনুসারে শ্রেণী নির্বিশেষে সকল আটকেপড়া পাকিস্তানিকে ফেরত নেয়ার পক্ষে সুস্পষ্ট মত প্রকাশ করা হয়। এ চুক্তিসমূহের আওতায় পাকিস্তান সরকার ৫ লাখ, ৩৯ হাজার ৬৬৯ জন আটকেপড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৭ জনকে পাকিস্তানে ফেরত নেয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৪১ জনকে পাকিস্তানে ফেরত নেয়।তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে পাকিস্তান মন্ত্রিপরিষত ১৯৭৪ সালের চুক্তিতে উলেখিত তিনটি শ্রেণীর বাইরে ভূতপূর্ব পূর্ব-পাকিস্তান রেলওয়েতে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যসমূহকে পাকিস্তানে ফেরত নেয়ার স্বপক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশিষ্ট প্রায় ৪ লাখ আটকেপড়া পাকিস্তানিকে ফেরত নেয়ার বিষয়ে পাকিস্তান সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরেন, ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, সে বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশে আটকেপড়া ৩ হাজার পাকিস্তানি পরিবারকে প্রথম দফায় পাকিস্তানে ফেরত নেয়া হবে। যদিও প্রথম দফায় ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে মাত্র ৫০টি পরিবারকে পাকিস্তানে ফেরত নেয়ার পরে পাকিস্তান সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য এ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান সফর করে বাংলাদেশে আটকেপড়া ২ লাখ ৪০ হাজার জন পাকিস্তানি নাগরিককে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার আহবান জানান।তিনি বলেন, ২০০৩ ও ২০০৪ সালে বাংলাদেশে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাকিস্তান সফরকালেও এ দাবীটি উত্থাপন করা হয় ও পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানানো হয় যাতে সীমিত সংখ্যার হলেও আটকেপড়া পাকিস্তানিকে ফিরিয়ে নেয়ার কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা যায়। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইসলামাবাদ সফরকালে পুনরায় এ বিষয়টি উত্থাপন করেন।মন্ত্রী আরো বলেন, ২০১০ সালের নভেম্বরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’-এ বাংলাদেশে আটকেপড়া নাগরিকদের সেদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ইস্যুটি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়। আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও, পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি সর্বদাই গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করা হয়েছে।আরএস
Advertisement