২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা চলছিল। সভামঞ্চে ছিলেন শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। বৃষ্টির মতো গ্রেনেড বিস্ফোরণ। মুহূর্তের মধ্যে চারিদিকে অন্ধকার। শেখ হাসিনার কাছেই ছিলেন তার দেহরক্ষী মাহবুব রশীদ। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে। তাই জীবন বাজি রেখে শেখ হাসিনাকে নিরাপদে রাখতে সক্ষম হলেও বাঁচতে পারেননি মাহবুব রশীদ। নিভে যায় তার জীবন প্রদীপ। ছেলেকে হারিয়েও ছেলের সাহসিকতায় মা আজো গর্বিত। প্রিয় নেত্রীকে রক্ষায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মাহবুব রশীদ প্রাণ বিসর্জন দিলেও আফসোস নেই পরিবারের সদস্যদের। তবে আক্ষেপ সেদিনের বোমা হামলাকারীদের আজো শাস্তি না হওয়ায়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত খোকসার মাহবুবের মা হাসিনা বেগম প্রতি বছর ফজরের নামাজের পর মোনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে ছেলের খুনিদের বিচার চেয়ে দিনের কাজ শুরু করেন।কিন্তু আজো তার সেই আশা পুরণ হয়নি। তাই অন্তত মৃত্যুর আগে নিহত ছেলের খুনিদের বিচার ও উপজেলা চত্বরে নিহত ছেলের ভাস্কর্য নির্মাণসহ অন্যান্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন দেখতে চান তিনি। সেই আত্মত্যাগে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হলেও ছেলের অনুপস্থিতিতে আজ কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়েছে মাহবুবের পরিবারকে। পরিবারের নির্দেশিত সহযোগিতা ছাড়া ফুলবাড়ি গ্রামে মাহাবুবের বাবা-মা আর পরিবারের অন্য সদস্যদের খোঁজ রাখেন না কেউ। জটিল অসুখে মা, টাকার অভাবে বোনের বিয়ে হয় না ইত্যাদি নিয়ে মাহবুবের পরিবারের নিত্য পথচলা। ছেলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বদলে গেছে তার পরিবারের জীবন চিত্র। কারণ তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এমতবস্থায় কুষ্টিয়ার বর্তমান জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সহায়তায় নিহতের মাহবুবের মা হাসিনা বেগমের একটি অপারেশন ও ছোট এক ভাইয়ের একটি সরকারি চাকরি এবং ৫ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের ৫ হাজার টাকায় পরিবারটির জীবন চিত্রের কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। মাহবুবের স্ত্রী আসমা বেগম দুই সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন। যোগাযোগ নেই মাহবুবের বাবা-মায়ের সাথে। সব মিলিয়ে মাহবুবের বাবা হারুন মোল্লা যেন তিক্ত নিজের উপরই। অল্পতেই রেগে যান। পরিবারের কারো সঙ্গেই ভালো ব্যবহার নেই তার। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অশ্রদ্ধা বাড়ছে ক্রমশই। সরকারি যে সামান্য সাহায্য দেয়া হয়েছিল তা দিয়ে নয় সদস্যের পরিবার চালানো দুরূহ বলে দাবি করে মাহবুবের পরিবার।এদিনটিকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দিনটি স্মরণে কোনো উদ্যোগ থাকে না। এমনকি নূন্যতম কবরস্থানটিও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না। তাই এবার পাবিবারিকভাবেই বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।মাহবুবের বাবা বলেন, অন্তত মৃত্যুর আগে যদি ছেলের খুনিদের শাস্তি দেখে যেতে পারতাম। তাহলে মরেও শান্তি পেতাম। প্রতিদিন নামাজ শেষের ছেলের জন্য দোয়া করি। পাশাপাশি ছেলের খুনীদের শাস্তিও কামনা করি। কিন্তু একযুগ তো কেটে গেল। কবে বিচার পাব জানি না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। মাহবুবের মা হাসিনা বেগম বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা তার অপারেশন ও ছোট ছেলের চাকরির সময় পর্যন্ত বাধা দিয়েছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার পরিবারের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর কথা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। খুনীদের আজো শাস্তি হয়নি। মরার আগে যদি ছেলের খুনীদের শাস্তি দেখে যেতে পারতাম। তবে কোনো দু:খ থাকতো না।আল-মামুন সাগর/এএম/আরএস
Advertisement