প্রবাস

মালয়েশিয়ায় প্রশংসা কুড়াচ্ছেন দূতাবাস কর্মকর্তারা

বাংলাদেশের শ্রমবাজারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়েছে মালয়েশিয়া। সাত লাখেরও বেশি বাংলাদেশির বসবাস এখানে। নানা প্রয়োজনে তাদের যোগাযোগ করতে হয় এখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে। দূতাবাসে রয়েছেন নিবেদিত কর্মকর্তাগণ যারা সকাল ৯টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত আন্তরিকভাবে প্রবাসীদের সহযোগিতা করার প্রাণণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।এমনকি দূর-দুরান্ত থেকে যারা দূতাবাসে আসতে পারেন না তাদেরকে সহযোগিতা দেয়ার জন্য চালু করা হয়েছে হটলাইন সার্ভিস। শ্রমিকবান্ধব দূতাবাসের কর্মকর্তারা মালয়েশিয়ার পারটুবুহান পেঙ্গুসাহা বুঙ্গান বুঙ্গানান (অ্যাসোসিয়েশন) ক্যামেরুন হাইল্যান্ড কর্তৃক ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। দেশের বাইরে এ প্রথম সেবাদানে বিদেশিদের সম্মান কুড়িয়েছেন তারা।মালয়েশিয়ার পাহাং, দারুল মাকমুর প্রেসিডেন্ট মি. লি পেংফো বলেন, দূতাবাসের সব কর্মকর্তার আন্তরিকতার কারণেই ক্যামেরুন হাইল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিরা সহজেই পাসপোর্ট করতে পারছে বলে বাংলাদেশ দূতাবাসের সব কর্মকর্তাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।এদিকে দূতাবাসে প্রবাসীদের সুবিধার্থে গত ২ মে থেকে চালু হওয়া হটলাইন নম্বর হচ্ছে: ০১৬২৭৪৭৯১৭। নতুন পাসপোর্ট বা পুরাতন পাসপোর্ট নবায়ন করাসহ যেকোনো তথ্য জানতে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রবাসীরা হাইকমিশনে আসেন নানা কারণে। কিন্ত সঠিক তথ্য না থাকার কারণে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। প্রবাসীরা দূতাবাসে আসার আগে একবার কল করে নিশ্চিত হয়ে কী কী কাগজপত্র নিয়ে আসতে হবে বা ব্যাংক ড্রাফট কত ইত্যাদি।সরেজমিনে দূতাবাসে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশি ছাত্র এবং শ্রমিকরা তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার সমস্যা সমাধান করতে এসেছেন। দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তাদের সহযোগিতা করতে। রি-ইস্যু ও নতুন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দূতাবাসের কর্মচারী শামছুল ইসলাম ও শামছুল হক আবেদন ফরম কোনো ত্রুটি আছে কি-না যাচাই করে নম্বরিং করছেন। এ ছাড়া ফিঙ্গারিং রোমে কাজ করছেন শামস, মাহফুজুর রহমান, নাসিমা আক্তার, নাহিয়া আক্তার, সুশান্ত সরকার ও আরিফুল ইসলাম।বৃহস্পতিবার কথা হয় দূতাবাসের প্রথম সচিব এমএসকে শাহীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাস থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা দূতাবাসকে ঢেলে সাজিয়েছি। আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার জহুরবারু, পেনাং, মালাক্কা, সারওয়াক, ক্যামেরুন হাইল্যান্ডসহ দূরের প্রদেশগুলোতে মোবাইল ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে করে শ্রমিকদের পাসপোর্ট করতে অসুবিধা না হয়। আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে পারি অন্তত কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এই দূতাবাসে আসতে সাধারণ মানুষের এখন আর দালালের হাত-পা ধরতে হবে না।’দূতাবাসে নতুন সেবার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি ছাত্রদের মধ্যে ১০ জনকে এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছি। যার ফলে আগে যেখানে ফটোকপির জন্য ১০ রিঙ্গিত নিয়ে নিতো দালালরা, সেখানে এখন মাত্র ১০ সেন্ট দিয়ে ফটোকপি করতে পারছে। ছবি তুলতে যেখানে আগে ২০ রিঙ্গিত নেয়া হতো সেখানে মাত্র তিন রিঙ্গিতে ফটো তোলা এবং দুই কপি প্রিন্টও দেয়া যাচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবীদের বসার জন্য আমরা চেয়ার টেবিল এবং তাবুর ব্যবস্থা করেছি। মোবাইল অপারেটরের সহযোগিতায় আগত দর্শণার্থীদের জন্য আমরা ছাউনির ব্যবস্থা করেছি।’আগে যেখানে পাসপোর্ট সংক্রান্ত অথবা অন্য সমস্যা সমাধানের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অথবা দালালদের ধরে সিরিয়াল নিতে হতো সেখানে এখন দেয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক সেবা। গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার মানুষের পাসপোর্ট সমস্যার সমাধান করা হয় এখানে।পাসপোর্ট সেবার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে প্রথম সচিব বলেন, ‘আগে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হতো দিনে একবার। আমরা এই নিয়ম বদলে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার নিয়ম চালু করেছি। বর্তমানে ছাত্র এবং শ্রমিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) করার জন্য ১১৬ রিঙ্গিত এবং অন্যান্যদের পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে ৩৮৫ রিঙ্গিত নেয়া হচ্ছে। যেটা আগে দালালদের কারণে অনেক বেশি খরচ করতে হতো।’দূতাবাসে আগত বাংলাদেশিদের জন্য আগে ছিল মাত্র দুটি টয়লেট। বর্তমানে ৬টি টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।শাহীন আরো জানান, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন ৩০০ মানুষকে সার্ভিস প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবু আমরা ভুক্তভোগীদের কথা চিন্তা করে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মানুষকে সেবা দিচ্ছি। দূতাবাসের ভবন ও এলাকা এতো মানুষের সেবা দেয়ার অনুপযোগী। আমরা চেষ্টা করছি যেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষকে সেবা প্রদান করা যায় এমন স্থানের ব্যবস্থা করতে।’পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন পাসপোর্ট করতে আসা মো. আবুল হাসান চৌধরী একজন শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো প্রয়োজনে সহজেই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি এবং খুব দ্রুত সেবা পাই। আগে চাইলেই প্রথম সচিবের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব ছিলো না। তবে এখন পাসপোর্ট এবং ভিসার ব্যাপারে সহজেই প্রথম সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। এ ব্যাপারটা আমাদের বেশ সহযোগিতা করে। আমরা আরো উন্নত দূতাবাসের দাবি করি।’বিএ

Advertisement