বয়স তার শত বছরের কাছাকাছি। চোখে মোটা কাঁচের ফ্রেমের চশমা। বয়সের ভারে কণ্ঠটাও ঝিমিয়ে গেছে। ডাক বা চিৎকার করলে কাছের মানুষগুলোও ঠিক মতো শুনতে পান না। হাঁটতেও পারেন না। যতটুকু হাঁটেন সবটুকুই বাঁশের মোটা গোড়ালি দিয়ে বানানো লাঠির সাহায্যে। তবে বেশি দূর যেতে পারেন না। কয়েক কদম হাঁটার পরই থেমে হাফ ছেড়ে জিরিয়ে নিতে হয়।এরপর অাবারো চলা শুরু করতে হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে গত ১০ বছর ধরে এভাবেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাকে। বলছিলাম জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার মলমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির জমিলা বেওয়ার কথা।স্বামী মারা গেছেন সেই এক যুগ অাগে। এরপর থেকেই ভরসা সন্তানের উপর। এমনিতেই অভাবের সংসার। তারপরও ভোগান্তিটা শুরু হয় বন্যা এলেই। অার এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট জমিলা বেওয়ার। ঘর থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে সব জায়গায় ভোগান্তি তার।গত ৯ অাগস্ট জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়েছিলাম মলমগঞ্জ স্কুল মাঠে। সেখানে বিতরণ স্থলের একটু দূরে বসেই ত্রাণগুলোর দিকে চেয়েছিলেন তিনি। সেখানে সবাই এত বেশি ব্যস্ত ছিল যে জমিলার কথা শোনা বা তার দিকে তাকানোর মতো সময় ছিল না কারো।সেদিন প্রচণ্ড রোদ থাকার কারণে ত্রাণ বিতরণ দলের সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাই অনেকেই গাছের ছায়া খুঁজতে এদিক সেদিক ছুটছিল।এ সময় একটি গাছের নিচে বসে থাকতে দেখা যায় জমিলা বেওয়াকে। তবে তার অপলক দৃষ্টি ছিল ত্রাণগুলোর দিকে। কাছে যেতেই ঈশারায় বুঝিয়ে দিলেন এক প্যাকেট ত্রাণ দরকার তার। ঈশারাটা যেন বুকে নাড়া দিয়েছিল সেদিন। তাই কথা বলেই দৌড়ে গিয়ে অাগে এক প্যাকেট ত্রাণ এনে দিলাম তাকে। এরপর শান্তিটা যেন দুজনই পেলাম।এরপর বসে পড়লাম তার পায়ের কাছে। এসময় হাসিমুখে ডান হাতটা দিয়ে মাথাটা নেড়ে দিলেন তিনি। তার এই অাশীর্বাদ সেদিনকার সকল ক্লান্তি নিমিষেই শেষ করে দিয়েছিল।কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জমিলা বলে উঠলেন, এইটুকুন রাস্তা দুই ঘণ্টা ধরে অাইলাম। কতক্ষণে যে বাড়ি ফিরমু।এসময় তাকে ধরে দাঁড় করে দিতেই থাক বাবা বলে বিদায় নিলেন জমিলা।জমিলাদের হাতে এক প্যাকেট ত্রাণ পৌঁছানোই যেন জাগো নিউজের স্বার্থকতা।বিএ
Advertisement