মতামত

জঙ্গিবাদ দমনে আশু করণীয়

বর্তমানে জঙ্গিবাদ উত্থানের নেপথ্যে ভ্রান্ত মতাদর্শ কাজ করছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সামাজিক প্রযুক্তি এবং বিশ্বায়নের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর প্রেক্ষিতে কোনো দার্শনিক মতাদর্শ আমরা দাঁড় করতে পারিনি। মুসলিম তথা মুসলমান দার্শনিকদের মাঝে এক সময় পাণ্ডিত্যপূর্ণ লোক ছিল। তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায়  অবদান রেখেছেন। সময়ের পরিক্রমায় সেই রকম কোনো দার্শনিকের আবির্ভাব ইদানীং  আমরা পাচ্ছি না। যার কারণে ইসলামী মতাদর্শগত দিক থেকে এক ধরনের সংকট চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরনো দর্শনগুলোকেই বিভিন্ন নামে-বেনামে নতুন মোড়কে বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেগুলোর মাঝে বর্তমান সংকট বিশেষ করে তরুণদের জীবনযাপন, প্রযুক্তি ও বিশ্বয়ানের সমস্যাবলী মোকাবেলার এবং তাদের জন্য দিক-নিদের্শনা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিক থেকে আমাদের এক ধরনের দার্শনিক শূন্যতা চলছে। এই শূন্যতাকে পূঁজি করেই আজকের জঙ্গিবাদ। সে ক্ষেত্রে আমাদের আশু করণীয় রয়েছে। এখন যে জঙ্গিবাদ চলছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা যেভাবে দমন করছে সেটা অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এ জন্য আইনী, বিচারিক তথা সশস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু যেসব দার্শনিক মতবাদ দ্বারা জঙ্গিরা প্রভাবিত, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের বড় ধরনের সংস্কার কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক খাতে প্রথমে হাত দিতে হবে। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে এই সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বহু ধরনের বিভক্তি রয়েছে। এক দিকে সনাতন শিক্ষা, অন্যদিকে ইংলিশ মিডিয়াম এবং মাদ্রাসা শিক্ষা। মাদ্রাসা শিক্ষার মাঝে আবার ক্বওমী মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকুলামের মাঝে নানা তারতম্য রয়েছে। এদিক থেকে এই সব তারতম্য একত্রিত করতে না পারলে আমাদের সংকট কমবে না বরং বাড়বে।বাংলাদেশের মানুষ ধর্মাচারে বিশ্বাসী। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এদেশের মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে উদ্যাপন করে। এদিক থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- মসজিদ, অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা ও মক্তব গুরুত্বপূর্ণ। এই সব প্রতিষ্ঠানকে আমরা যদি সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না আনতে পারি এবং ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা যার যার মত করে চলতে থাকে তাহলে জঙ্গিবাদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। ক্বওমী মাদ্রাসায় আমাদের কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। এদেশে বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের কম হবে না। সেগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় বিভিন্ন ক্বওমী মাদ্রাসা বোর্ড দ্বারা। ক্বওমী মাদ্রাসা বোর্ডের সংখ্যা ৫/৬টি তো হবেই। এর বাইরেও অসংখ্য বোর্ড রয়েছে। আমার জানা মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্বওমী মাদ্রাসা বোর্ড রয়েছে। ঢাকার মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় আলাদা আলাদা মাদ্রাসা বোর্ড রয়েছে। এগুলোর সিলেবাস ও কারিকুলাম একটি থেকে অপরটি আলাদা এবং রয়েছে নানা তারতম্য।আমাদের দেশে ইসলামী তরিকা এবং অনুশাসনের পার্থক্যগুলো অনেক দিন আগে থেকে চলে আসছে। খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় থেকে এ্ই সব পার্থক্যের সূচনা। বিভিন্ন তরিকা এবং মতাদর্শ ইসলামের মধ্যে আগে থেকেই ছিল, তা আমরা জানতাম না। এখন মুসলিম বিশ্বে এই মতাদর্শগুলো প্রকট হওয়ার কারণে আমরা এগুলো জানছি। মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব ক্বওমী মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে রয়ে গেছে। অনেক ক্বওমী মাদ্রাসা আরেক ধরনের ক্বওমী মাদ্রাসাকে সহ্য করতে পারে না। এদের মাঝে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। যার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের দিকে ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। যাতে তাদের কারিকুলাম এবং সিলেবাস যুগোপযোগী ও আধুনিক করা হয়। যাতে তাদেরকে একটি সনদ দেয়া যেতে পারে এবং সেই সনদের উপর ভিত্তি করে তারা কর্মসংস্থান তথা চাকরি করতে পারবে। কিন্তু যে কমিটি কারিকুলাম এবং সিলেবাস ঠিক করে দেয়ার জন্য গঠন করা হয়, তাতে আহ্বায়ক করা হয় মাওলানা সফিকে। কিন্তু সেই কমিটি পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারেনি। তারপর মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসুদের নেতৃত্বে একটি রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করা হয়। যেখানে মাওলানা সফিরও দুইজন প্রতিনিধি ছিলেন। কিন্তু রিপোর্টটি যখন জমা দেয়া হয়, তখনই হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য গ্রুপ এর বিরোধিতা করতে থাকে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আন্দোলন করার হুমকি দেয়া হয়। এজন্য ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূল শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়। ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার করার মধ্যে জটিলতা রয়েছে। মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তারা কোনো দিনই এক হবে না। আমি মনে করি, মতাদর্শগত পার্থক্য রেখেও ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা হলেও সংস্কার করা যায়। এক্ষেত্রে যদি শিক্ষার মাধ্যমটি বাংলা হয়, তাহলে অনেক সুবিধা হবে। ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাও না, আরবিও না ইংলিশও না। সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কেউ আরবিতে কথা বলতে পারে না, কিন্তু তারা কোরআন হাদিস পড়তে পারে। কোরআনের মূল কথা এক-দেড় হাজার বছর আগের। আমরা যেমন এক দেড় হাজার বছর আগের বাংলা পড়তে পারবো না। সেই বাংলার অর্থ বোঝা যাবে না। একই অবস্থা এই ক্বওমী মাদ্রাসার। আধুনিক আরবি ভাষায় তাদের দক্ষতা অর্জন হচ্ছে না। তারা কুরআন হাদিস মুখস্ত করছে কিন্তু এর বাইরে ব্যবহারিক আরবি সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। এটি একটি বড় সমস্যা। আর তারা ইংরেজি তো পড়েই না। তারা মাতৃভাষায় কোনো শিক্ষা গ্রহণ করে না। কিন্তু তাদেরকে ভাষাগত দিক থেকে দক্ষ করা যেত,যদি এমন হত তাদেরকে মাতৃভাষায় পড়ানো হবে, নতুবা তাদেরকে আরবি ভাষায় দক্ষ করে তোলা হবে। একই সাথে তাদেরকে এক ধরনের কারিগরি জ্ঞান দেয়া যেত। সেটা হতে পারে মেকানিক্যাল, ফ্রিজ মেরামত, গৃহের আসবাবপত্র ঠিক করা, বৈদ্যুতিককাজসহ যানবাহনের কাজ করা। এমন প্রশিক্ষণ যদি তাদেরকে দেয়া যেত এবং সেই সাথে আরবি বলা- তাহলে সবচেয়ে ভালো হত। যারা ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়ে তারা মনে করে, এই শিক্ষা এ কালের জন্য নয়, আখেরাতের জন্য। কিন্তু মূল বিষয় হলো, আখেরাতে যাওয়ার জন্য তারা যা পড়ে পড়ুক সমস্যা নেই। কিন্তু বেহেস্তে যাওয়ার আগে দুনিয়াতে তাকে তো ভাত খেতে হবে এবং বাঁচতে হবে। সেজন্য কমসংস্থান তো করতেই হবে। সৌদি আরব দক্ষ অদক্ষ প্রায় ৫ লাখ লোক নিবে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের দেশের লোকজনের ভাষাগত সমস্যা হয়। সেজন্য ক্বওমী মাদ্রাসায় আরবি বলা এবং বোঝার শিক্ষা একই সাথে তাদেরকে একটি ট্রেড কোর্স পড়ানো যায়। আর এর সাথে ক্বওমী মাদ্রাসার মৌলভীরা যা যা পড়াতে চান, তা পড়াতে পারে। এই ক্বওমী মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা কিন্তু আমাদেরই সন্তান। তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। তারা অধিকাংশ গবীর। তাদের জন্য আমরা যদি কর্মসংস্থান করতে না পারি, তাহলে তারা মতাদর্শে বিশ্বাসী হবে- এটাই স্বাভাবিক। ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের চাকরি হয় মসজিদ, মাদ্রাসায়। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত এবং অনেকে সমাজে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ফলে কিছু দিনের মধ্যে পুরো সমাজ ব্যবস্থার প্রতি তাদের মাঝে এক ধরনের ক্ষোভ, হতাশা কাজ করে। এ থেকে এক ধরনের বঞ্চনার তৈরি হয়। সমাজে প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হয়। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেকে তারা দূরে থাকে। ফলে তারা হয়ে উঠে জঙ্গিবাদের প্রধান অস্ত্র। তাদেরকে বেহেস্তের প্রলোভন দেখানো হয়। তাদেরকে বিশ্বাস করানো হয়, কাউকে মারুক বা কাটুক নিজে মরতে পারলে সে দ্রুত বেহেস্তে চলে যাবে। শোলাকিয়ায় হামলা করতে গিয়ে যে ধরা পড়েছে, তাকে বারবার জিঞ্জাসা করা হচ্ছে, তুমি কেন এই কাজ করতে আসছো ? সে নাকি এই সব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বারবার বলছে, ‘‘আমি কেন মরলাম না। আমার সাথের লোকেরা বেহেস্তে চলে গেছে। আমি এখনও কেন বেঁচে আছি’। এই যদি হয় আমাদের মেন্টাল সেট-আপ, তাহলে তা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের আগে থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে। যতি এমন হয় দুনিয়াতে আমি অনেক কিছু খেতে পারছি না, কিছুক্ষণের মধ্যে বেহেস্তে যেতে পারলে আঙ্গুর, হুর পরীরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাহলে তারা তো উদ্ধুদ্ধ হবেই। যারা মরণ পণ করে জঙ্গিবাদের যুদ্ধে নেমেছে, তাদেরকে সেইভাবেই তৈরি করা হয়েছে। তাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে জোরালোভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্বওমী ব্যবস্থা শিক্ষায় জাগতিক কোনো মূল্য নেই। কেবল পরকালের জন্যই এই শিক্ষা ব্যবস্থা। কাজেই ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি জাগতিক মূল্য দাঁড় করাতে হবে। আমি মনে করি একটি সিলেবাসের বিষয়ে ক্বওমী মাদ্রাসাগুলো একমত হবে না। এজন্য সরকারের উচিত হবে তাদেরকে বাধ্য করানো। আরবিতে পড়ানো বাধ্য করলে দোষের কিছু হবে না। এর সাথে ব্যবহারিক শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। আমরা মুসলমান। আর এর সাথে মনে রাখতে হবে আমরা বাঙালি। আমাদের শাশ্বত ইতিহাস ঐতিহ্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। সেখানেও আমাদের একটি চেতনা এবং ইতিহাস রয়েছে। এগুলোও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে বুঝতে এবং জানতে দিতে হবে। কিন্তু এগুলো তাদের সামনে কখনো উপস্থাপন করা হয় না। এই বাংলাদেশের ইতিহাস ঐহিত্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে মাদ্রাসা ছাত্রদের কোনো ধারণা নেই। এক্ষেত্রে পুরো দোষ তাদেরকে দেয়া যাবে না। প্রথমত: আমাদের ইতিহাস, ঐহিত্য এবং সংস্কৃতি তাদেরকে জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত: আরবি বলতে এবং লিখতে পারার অভ্যাস করতে হবে। তৃতীয়ত: তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই তিনটি বাধ্যতামূলক করে বাকি সবগুলো তাদের উপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং আইন করে তা কার্যকর করতে হবে। এই তিনটি বিষয় যদি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না থাকে তাহলে তা বাতিল করে দিতে হবে। আমার মনে হয় না, তারা এই সব বিষয় নিয়ে আন্দোলন করার খুব বেশি সুযোগ পাবে। তারা যা বলে তা ঠিক রেখে ওই সব বিষয়গুলো করা যেতে পারে। আমি মনে করি ব্রিটিশ আমল থেকে এই সব চলে এসেছে, এগুলো হঠাৎ করেই র্যাডিকেল পরিবর্তন না করে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হওয়াই ভালো হবে। আর নতুন একটি ক্ষেত্র, আমাদের ধারণা ছিল জঙ্গিদের উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে ক্বওমী মাদ্রাসা। কিন্তু হলি আর্টিজান এবং কল্যানপুরের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিত্বের উৎস অন্যত্রও আছে। উচ্চ শিক্ষিত, দামি শিক্ষিত (ব্যয় বহুল শিক্ষায় শিক্ষিত) ধনীদের সন্তানরাও এই সব কাজ করছে। যারা মাদ্রাসা কিংবা এতিমখানায় পড়ে তাদের থেকে এদের পার্থক্য হচ্ছে, ওরা বিভিন্ন কিছু থেকে বঞ্চিত। কিন্তু অর্থ বিত্ত বেশি হওয়ার কারণে ধনীদের সন্তানদের বঞ্চনার বিষয় কিন্তু একই রকম নয়। বঞ্চনাবোধ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এমন না যে বঞ্চিত লোকের মাঝেই কেবল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। কেউ যদি দেখে সে সুবিধাভোগী এবং তার সুবিধা ভোগের ফলে অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছে, ফলে তার মাঝেও এক ধরনের বঞ্চনা এবং আক্রোশ  কাজ করতে পারে। আর একটি বিষয় হচ্ছে বঞ্চনাবোধ যখন কারো মনের মাঝে গ্রথিত হয় এবং সেই বঞ্চনা থেকে পরিত্রাণের জন্য যথোপযোগী ব্যবস্থাগুলো সমাজ গ্রহণ না করে তাহলে এই বঞ্চনা জঙ্গিত্বের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গুলশানের ঘটনায় ধনীদের পরিবারে হয়ত জীবন যাপনের উপকরণের বঞ্চনা নেই। তাদের মাঝে পারিবারিক শৈথল্যের কারণে এক ধরনের বঞ্চনা আছে। সেখানে বাবা-মার স্নেহ বঞ্চিত অনেক সন্তান আছে। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতির সাথে তাদের যোগাযোগ না থাকার কারণে তারাও এক ধরনের বিচ্ছিন্নভাবে বড় হচ্ছে। এই বঞ্চনা এবং ক্ষোভকেই জঙ্গিরা কাজে লাগাচ্ছে। এই বিষয়গুলোকেই জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার টোপ হিসেবে তারা ব্যবহার করে। এ জন্য আমরা শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক খাতে যে সংস্কারের কথা বলছি, তা অগ্রধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। কিন্তু আমরা যে দার্শনিক সংকটের মধ্যে আছি, তা মোকাবেলা করার জন্য আমাদেরকে তাদের সামনে একটি দর্শন তুলে ধরতে হবে। এটা করতে না পারলে তাদেরকে বিভ্রান্ত মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত করাই যাবে। সে দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের দার্শনিকের একটি বড় ভিত্তি হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল, আমরা যারা মুসলমান, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি, অন্যান্য ধর্মের যারা আছে, তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক  থাকবে। ইসলামের  অবয়ব ব্যবস্থা এই দেশে থাকবে। তবে আমাদের দেশের ইসলামের  সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামের সাথে ব্যাপক পার্থক্য আছে। সেক্ষেত্রে বাঙালির আদর্শ, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে ইসলামি মৌলিক মূল্যবোধের ভালো সংমিশ্রণ ঘটাতে পারি, তাহলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি দার্শনিক ভিত্তি কাজ করতে পারে। আমাদেরকেই দীর্ঘ মেয়াদী সেই কাজটিই করতে হবে। লেখক: উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়এইচআর/পিআর

Advertisement