ভালোবেসে ২০১১ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এই সময়ের দর্শকপ্রিয় নন্দিত অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও নাজিয়া হাসান অদিতি। দুই বছরের পুত্রসন্তান আয়াশকে নিয়ে তাদের সুখের দিনযাপন। নানা সময় অপূর্বকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেলেও প্রথমবারের মতো স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে দেখা যাবে। গত শনিবার, ১৩ আগস্ট তারা অংশ নিয়েছেন শারমীন লাকীর উপস্থাপনায় আরটিভিতে ঈদের জন্য নির্মিত অনুষ্ঠান ‘প্রাণ গুঁড়া মসলা স্টার কুক’ নামের একটি রান্নার অনুষ্ঠানে। এটি প্রচার হবে আসছে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে। অনুষ্ঠানের শুটিং শেষে যাওয়ার আগে এই দম্পতি মুখোমুখি হলেন জাগো নিউজের। সঙ্গে ছিলেন লিমন আহমেদ। ছবি তুলেছেন জাগো নিউজের আলোকচিত্রী মাহবুব আলম-জাগো নিউজ : কেমন আছেন আপনারা?অপূর্ব : বেশ ভালো। প্রতিনিয়ত আসলে ভালো থাকার চেষ্টাই করছি।অদিতি : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। জাগো নিউজ : প্রথমবারের মতো কোনো অনুষ্ঠানে দুজন একসঙ্গে। কেমন লাগছে?অপূর্ব : এককথায় বলতে গেলে অসাধারণ। সবসময় আমি একাই নানা অনুষ্ঠানে যাই। অদিতিকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে আসার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে। তাও আবার রান্নার অনুষ্ঠান। আমার স্ত্রী যে ভালো রান্না করে সেটা সবাই জানবে এবার। হা হা হা.... প্রাণ গুঁড়া মসলা, আরটিভিকে ধন্যবাদ। বিশেষ করে ধন্যবাদ দিতে চাই শ্রদ্ধেয় কেকা আপাকে (রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসি)। অদিতি : আসলে ভালোই লাগছে। সবসময় তো ওকেই টিভিতে দেখি। এবার ওর সঙ্গে নিজেকেও দেখবো। জাগো নিউজ : তো দুজন মিলে কী রান্না করলেন আজ?অপূর্ব : সে এক দারুণ খাবার। কোরবানি ঈদের অনুষ্ঠান তো; তাই গরুর মাংস দিয়েই রেসিপি তৈরি করেছি। এর নাম ও উপকরণ জানতে হলে অনুষ্ঠান দেখতে হবে। জাগো নিউজ : স্ত্রীরা সবসময় চেষ্টা করেন ভালো ভালো খাবার রেঁধে স্বামীকে খাওয়ানোর। আপনার স্বামী তো ব্যস্ত মানুষ। সেই সুযোগ পান?অদিতি : আসলে অভিনয় নিয়ে ওর ব্যস্ততা বছরজুড়েই। তবে অপূর্ব বেশ সংসারী মানুষ। ঢাকায় শুটিং হলে রাতে সে বাসায় চলে আসে। তখন একসঙ্গে খাই। আর শুটিং না থাকলে বাসাতেই থাকে। ছেলেক নিয়ে মেতে থাকে। তখন নানা পদ রান্না করে দেই। ওর অনেক খাবারই পছন্দ। চেষ্টা করি সেইসব রেঁধে খাওয়াতে। জাগো নিউজ : ঈদ উপলক্ষে নিশ্চয় ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে? অপূর্ব : হুম সে একটু বেড়েছে। আসলে সারা বছরেই লাইট, ক্যামেরার সামনে থাকা লাগে। তবে ঈদের মতো বিশেষ দিনগুলোতে বাড়তি ব্যস্ততা এসে যোগ হয়। আজকেও শুটিং আছে। এখানের কাজ শেষ করে সেখানে যোগ দিবো। এই ঈদে মম, মৌসুমী হামিদ, উর্মিলাসহ অনেকের সঙ্গেই প্রায় এক ডজন নাটকে হাজির হবো। পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যানেলে ধারাবাহিক যাচ্ছে আমার। সেগুলোর অভিনয়ও করতে হয় নিয়মিত।জাগো নিউজ : প্রচুর নাটক হচ্ছে। কিন্তু দর্শক দেখছে না। এর জন্য নাটকের মানকেই দায়ী করা হয়। আপনিও কী একমত?অপূর্ব : পুরোপুরি না। সবাই খারাপ নাটকগুলো নিয়েই কথা বলে। ভালো নাটকগুলো আলোচনায় আসে না। একটা ইন্ডাস্ট্রি ভালো এবং মন্দ নিয়েই এগিয়ে চলে। সব যেমন ভালো হয় না তেমনি সব মন্দও হয় না। আমাদের এখানেও তাই। আমি প্রচুর ভালো নাটকের খবর পড়ি গণমাধ্যমে। ভালো নাট্যকার, ভালো পরিচালক, ভালো শিল্পীরা সেইসব কাজ করছেন। দর্শক দেখছেনও। আসলে দর্শক নাটক দেখছেন না এর অনেক কারণ। সেগুলো নিয়ে অনেকবার বলেছি। সবাই বলেছেন, বলছেন। এখন প্রয়োজন আন্তরিকতা নিয়ে তার সমাধান করা। জাগো নিউজ : আপনাকে নাগরিক গল্পের প্রেমিক চরিত্রেই বেশি দেখা যায়। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে বৈচিত্রময় চরিত্রে হাজির হতে ইচ্ছে করে না?অপূর্ব : আসলে আমি কেমন চরিত্রে কাজ করবো এটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে দর্শক এর্ব নির্মাতার উপর। দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে ভালোবাসেন নির্মাতা সেভাবেই আমাকে হাজির করবেন। তবে হ্যাঁ, আমি যে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে কাজ করিনি তা কিন্তু নয়। আসলে বৈচিত্রময় চরিত্রে কাজ করাই একজন শিল্পীর জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের। আমিও চেষ্টা করি চরিত্রের মধ্যে বৈচিত্র রাখতে। আসছে ঈদে দর্শক আমাকে নানা রঙে দেখতে পাবেন। জাগো নিউজ : গেল বছর আপনার ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিলো। সেটি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। চলচ্চিত্র নিয়ে নতুন খবর আছে?অপূর্ব : নতুন খবর বলতে আরো একটি ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে। এটি বিগ বাজেটে বাণিজ্যিক ঘরানায় নির্মিত হবে। ঈদের পরপরই ছবির নাম ও অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমাদের সিনেমার বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমি চাই এখানে নিয়মত হতে। জাগো নিউজ : সম্প্রতি নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ডের নির্বাচন হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব এসেছে। একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে এই সংগঠনটির কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?অপূর্ব : প্রত্যাশা অনেক। কারণ যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের প্রায় সবাইকেই ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। কেউ আমার বড় ভাই, কেউ বন্ধুর মতো। উনারা সবাই মিলে নাট্যাঙ্গনকে ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে যাবেন এই কামনা করি। পাশাপাশি এখানে কিছু নীতিমালা তারা গ্রহণ করবেন বলেও আশা রাখি। কেননা, আমাদের মিডিয়াটা হয়ে গেছে জমিদারবাড়ির আড্ডাঘর। যার ইচ্ছে হলো আসছে যার ইচ্ছে হলো চলে যাচ্ছে। আমরা চাই, কোনো নির্মাতা নাটক নির্মাণের আগে একটা লাইসেন্স গ্রহণ করে আসুক। তিনি যে নির্মাতা এটার আনুষ্ঠানিক পরিচয় ও স্বীকৃতি থাকুক। একটা স্কুল ছাত্রেরও আনুষ্ঠানিক পরিচয় থাকে, জবাবদিহিতার জায়গা থাকে। একইভাবে শিল্পীদের ক্ষেত্রেও কিছু নীতিমালা হোক। সবাই মিলে চেষ্টা করলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এবং যারা নেতৃত্বে আছেন তারা সেটা পারবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।জাগো নিউজ : স্বামী রোমান্টিক হিরো হয়ে সুন্দরী নায়িকাদের সঙ্গে রোমান্স করে বেড়ান। নানা রকম স্ক্যান্ডাল বাতাসে উড়ে বেড়ায়। খারাপ লাগে না?অদিতি : প্রথম প্রথম লাগতো। এখন আর লাগে না। আসলে অভিনয় তো অভিনয়ই। বরং ওর জনপ্রিয়তাকে আমি এনজয় করি। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। আসলে এটাই ওর পেশা। যার স্বামী ব্যাংকার তার স্বামী যেমন রোজ রোজ ব্যাংকে যাবে তেমিন আমার স্বামীও রোজ রোজ শুটিংয়ে যাবে, সুন্দরীদের সঙ্গে ভাব করবে, বিয়ে করবে। মানুষকে আনন্দ দেবে, কাঁদাবে। আর স্ক্যান্ডাল শুনে শুনে অভ্যেস হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি আমার স্বামীকে খুব ভালো করে চিনি। আমার প্রতি তার ভালোবাসা, অনুরাগ সবকিছুই অনুভব করি। আমাদের একটি ছেলে আছে। আয়াশ ওর নাম। তার জন্য অপূর্বর পাগলামি আমাকে মুগ্ধ করে। বাবা-ছেলের জন্মদিন- একইদিনে। সেইদিনটা আমার কাছে দারুণ স্পেশাল। তাছাড়া, ব্যস্ততা শেষে অপূর্ব যখন ঘরে ফিরে আসে তখন সে আমার স্বামী এবং আমার ছেলের বাবা। আমরা অনেক মজা করি। জাগো নিউজ : স্ত্রীকে এভাবে মুগ্ধ করে রাখার রহস্য কী?অপূর্ব : কোনোই রহস্য নেই। আমি বলবো ভালোবাসা, ভালোবাসা এবং ভালোবাসাই পারে স্ত্রীকে মুগ্ধ করতে, বিশ্বস্ত করতে। আমার মনে হয়, ভালোবাসাই সুখী দাম্পত্যের কারিগর। এই ভালোবাসা লোক দেখানো নয়; মন থেকে থাকা চাই। স্ত্রী-সন্তানের সান্নিধ্য লাভের জন্য ঘরে ফেরার তাড়া থাকা চাই। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাপড়া থাকা চাই। পুরুষের কাজের ক্ষেত্রে স্ত্রী অনুপ্রেরণার শক্তি। আমার কাছে অদিতি তাই-ই। এটা সে বুঝতে পারে। আনন্দটা এখানেই। জীবনটাতো খুব অল্প সময়। কী লাভ তাকে জটিল করে? ভালোবাসায় যদি সুখে থাকা যায়, ভালো থাকা যায় তবে কেন নয়!জাগো নিউজ : আপনাদের অনেক ধন্যবাদ....অপূর্ব : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ। সবাইকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছাঅদিতি : ধন্যবাদ।এলএ/পিআর
Advertisement