ভারতের আসাম থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসা দলছুট হাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গতকাল থেকে হাতিটি খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করায় প্রচণ্ড গরম আর পায়ের মোটা শিকল-রশির শক্ত বাঁধনের কারণে আজ দুপুর ১২টার দিকে অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে হাতিটি।চিকিৎসক আর বন বিভাগের কর্মীরা হাতিটিকে সুস্থ করে আবারো দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিকে অভিজ্ঞতার অভাবে হাতি স্থানান্তর প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ২৮ জুন ভারতের আসাম থেকে বন্যার পানিতে ভেসে আসে দলছুট বন্যহাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’। এরপর ৪৫ দিনে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে ঘুরে বেড়ায় হাতিটি। এরই মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশসহ প্রায় ১ হাজার ৭০০ মাইল পথ পাড়ি দেয় হাতিটি। এ সময় খাদ্য সংকটের কারণে প্রায় ৫ টন ওজনের হাতিটি দিন দিন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে এটি উদ্ধারে গত ৪ আগস্ট ভারত থেকে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আসে, কিন্তু তারা হাতিটি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ৭ জুন ঢাকায় চলে যায়। এরপর হাতিটি উদ্ধারে নামে বাংলাদেশের উদ্ধার অভিযান দলের সদস্যরা। তারা পর পর তিনবার হাতিটি ট্রাঙ্কুলাইজ করতে ব্যর্থ হয়। গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার অভিযান দলের প্রধান ড. তপন কুমার দের নেতৃত্বে সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে হাতিটি ট্রাঙ্কুলাইজ করতে সক্ষম হন তারা। সে সময় হাতিটির নাম দেয়া হয় ‘বঙ্গ বাহাদুর’। এরপর থেকেই হাতিটি ওই গ্রামের রহিম মাস্টারের বাড়ির পেছনের একটি বড় আম গাছের সঙ্গে রশি এবং লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় বেশ কয়েকবার রশি ছিঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় বঙ্গ বাহাদুর। কিন্তু গতকাল রোববার সকালে হাতিটি পায়ের রশি ছিঁড়ে পালাতে সক্ষম হলেও পেছনের পায়ে লোহার শেকল বাঁধা থাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে খোলা মাঠে অবস্থান নেয়। পরে উদ্ধার অভিযান দলের সদস্যরা হাতিটি চারবার ট্রাঙ্কুলাইজ করে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হাতির পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরায়। খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড রোদ আর ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখার কারণে আজ দুপুর ১২টার দিকে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় হাতিটি সুস্থ করে আবারো দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন ভেটেরিনারি সার্জন এবং বন বিভাগের কর্মীরা।এদিকে আজ গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে প্রশিক্ষিত তিনটি হাতি এনে বঙ্গ বাহাদুরকে স্থানান্তরের কথা থাকলেও হাতিগুলো না আসায় আজ স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। এছাড়াও এ ধরনের হাতিকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে কবে নাগাদ হাতিটি স্থানান্তর করা হবে সে বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে হাতি উদ্ধার অভিযান দলের প্রধান ড. তপন কুমার দে জানান, পা এবং শরীর শক্ত করে বেঁধে রাখার কারণে হাতিটি মাটিতে শুয়ে পড়েছে। তবে হাতিটি দ্রুত আবার দাঁড় করানো হবে। এ ধরনের হাতিকে স্থানান্তরের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, এই প্রথম হাতি স্থানান্তর কাজে যুক্ত হয়েছি। তাই ভারতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে পরামর্শ করছে। তাদের পরামর্শ নিয়েই হাতিটি সঠিকভাবে স্থানান্তর করা হবে। শুভ্র মেহেদী/এসএস/এমএস
Advertisement