বিশেষ প্রতিবেদন

যেদিন ইতিহাস থমকে দাঁড়ায়

১৫ আগস্ট। যেদিন ইতিহাস থমকে দাঁড়ায়। নদী হারায় স্রোত। বনের পাখিরা নিস্তব্ধ হয়ে আরো নির্জনে চলে যায়। এদিন ভোরের সূর্য আরো রক্তিম হয়ে ওঠে।  রাখালের বাঁশির সুর লহরি হয়ে ওঠে আরো করুণ।  নানা ঘটনাপ্রবাহ আর ব্যথাতুর স্মৃতিতে বাঙালি জীবনে গোটা আগস্ট ভারি হলেও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড বিশ্বমানবতাকে স্তম্ভিত করে দেয়। ওই দিন বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে হত্যা করে।বিশ্ব ইতিহাসের নির্মম এই দিনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আরো প্রাণ হারিয়েছিলেন তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল। ঘাতকদের বুলেটে ওই দিন আরো প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু ও আরিফ রিন্টু খান। দেশে না থাকায় সেদিন প্রাণে রক্ষা পান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে সে সময় জার্মানির কার্লসরুইয়ে সন্তানসহ অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। শেখ রেহানাও ছিলেন বড় বোনের সঙ্গে।আগস্ট মানেই জাতির দীর্ঘশ্বাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মমতা পৃথিবীর যে কোনো হত্যাকাণ্ডকে হার মানায়। ঘটনার বর্ণনায় দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট খুনিও আঁতকে উঠবে। রাতের আঁধারে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে পৈশাচিক পন্থায় হামলা চালায় দিকভ্রান্ত সেনা কর্মকর্তারা। বুলেটের আঘাতে রক্তগঙ্গা বয়ে যায় পুরো বাড়ি। ঝাঁঝরা হয়ে যায় দরজা-জানালা, বাড়ির দেয়ালও। রক্তসাগরে ডুবে ছিল লাশগুলো। নিজের সৃষ্ট এই দেশে কোনো বাঙালি তার জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে না- এই বিশ্বাসে বাড়তি নিরাপত্তার ধার ধারেননি বঙ্গবন্ধু। আর এ কারণেই রাষ্ট্রপতির বাসভবন ছেড়ে বসবাস করছেন ধানমন্ডির প্রিয় ৩২ নম্বর বাড়িতে।সেদিন ওই বাড়িতেই ঘাতকের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে পর্বতসম দেহ আর ইস্পাতসম মনোবল নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিল ‘তোরা কি চাস আমার কাছে? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’ঘাতকেরা অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি। বঙ্গবন্ধুকে তার প্রিয় বাড়িতেই বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডের পর  স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ যেন ‘খুনের বাংলায়’ পরিণত হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়।    বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেন।তবে শেষ রক্ষা হয়নি খুনিদের। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করা হয়। শোকের মাস আগস্ট ঘিরে সরকার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।  আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী, ভাতৃপ্রতিমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এএসএস/এমএমজেড/এইচআর/এসএইচএস/আরএস

Advertisement