বিশেষ প্রতিবেদন

হদিস মেলেনি ৬ পলাতক খুনির

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকারী পলাতক ৬ আসামিকে দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ২০১০ সালের ২৮ মার্চ গঠিত হয় ‘টাস্কফোর্স’ কমিটি। তবে দীর্ঘ ৬ বছর পার হলেও দুই খুনির অবস্থান ছাড়া আর কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই ‘টাস্কফোর্স’ কমিটির।এ বিষয়ে টাস্কফোর্স কমিটির চেয়ারম্যান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাগো নিউজকে জানান, পলাতকদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় আর আবু মোহাম্মদ রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্টে অবস্থান করছে। রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে।  খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার পেছনের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, কিছু জটিলতা আছে। ফাঁসি যে সব দেশ সমর্থন করে না, সে সব দেশে পলিয়ে থাকা আসামিদের তারা হস্তান্তর করে না। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সেই জায়গায় আমাদের চ্যালেঞ্জ এবং তা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা প্রসঙ্গে আলোচনা হয় জাতীয় সংসদেও। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বর্তমান মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উত্তরে সংসদকে জানান, দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। আসামি মেজর (অব.) মো. আব্দুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যান।  তিনি পলাতক খুনিদের আনুমানিক অবস্থান তুলে ধরে সংসদে জানিয়েছিলেন, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী কানাডায়, আবু মোহাম্মদ রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে, আব্দুল মাজেদ ডাকার (সেনেগাল), মোসলেহ উদ্দিন ভারতে, খন্দকার আব্দুর রশিদ কখনো লিবিয়া কখনো পাকিস্তান এবং শরিফুল হক ডালিমের অবস্থান কখনো পাকিস্তান, লিবিয়া আবার কখনো জিম্বাবুয়েতে ছিল।  আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে দেওয়া প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খুনিদের ছবি সংবলিত তথ্য পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হলে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত ফিরিয়ে আনা হবে। এর আগে পলাতকরা যাতে অন্য কোন দেশের (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা) নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহকে অনুরোধ করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে পলাতক খুনিদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে ইন্টারপোলের নিয়মানুযায়ী কোনো পরোয়ানা জারির ১০ বছর অতিক্রান্ত হলে তা নবায়নের বিধান থাকায় সরকার ২০১০ সালে পরোয়ানা নবায়ন করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না’ মর্মে তৎকালীন সরকারের ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জাতীয় সংসদের মাধ্যমে বাতিল করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা পাঁচ আসামির ফাঁসি কার্যকরে আপিল বিভাগের ‘ক্লিয়ারেন্স’ নিশ্চিত হলে আসামিদের শেষ আইনি আশ্রয় লাভের পথ রুদ্ধ হয়। দণ্ডাদেশ কার্যকর হয় লে. কর্নেল (অব.) ফারুক রহমান, মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), শাহরিয়ার রশিদ খান, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) এবং সাবেক মেজর বজলুল হুদার।বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কক থেকে এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাবেক লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে (ল্যান্সার) দেশে আনা হয়।এইউএ/এএইচ/এসএইচএস/আরএস

Advertisement