জাতীয় দলের হয়ে খেলা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ। আইসিসির পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও দুই বছর লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপাতে পারবেন না তিনি। ওই সিদ্ধান্ত না বদলালে, এ সময়ের মধ্যে তার বিপিএল বা কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ খেলা হবে না। তা হবে কি হবে না? তার উত্তর দেবে সময়। তবে এখনকার খবর, মোহাম্মদ আশরাফুলের গায়ে লেগে থাকা ‘নিষিদ্ধ’ তকমাটা আর নেই। ক্রিকেট থেকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ মোহাম্মদ আশরাফুল এখন মুক্ত। তার ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, আইসিসির পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৩ আগস্ট তা উঠে গেছে। অলিম্পিকের মত মর্ত্যরে সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞ চলাকালীনও আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠার ঘটনা এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু। তার ফেরা নিয়ে নানা কথা, আলোচনা, গুঞ্জন। তবে আসল সত্য কথা হলো, এ নিয়ে কিন্তু দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যদিও বড় অংশ আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা মুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। সংখ্যায় কম হলেও একটা অংশ কিন্তু আশরাফুলের ফেরাকে মন থেকে সমর্থন করতে নারাজ। যদিও আশরাফুল ভক্তরা জেনে খুশি হবেন, তাদের প্রিয় ক্রিকেটারের দু’জন অগ্রজ খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাইমুর রহমান দুর্জয় আশরাফুলের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে ফেরাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন। অনুজপ্রতিম আশরাফুল নতুন করে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নাইমুর রহমান দুর্জয় ও খালেদ মাহমুদ সুজন। প্রসঙ্গতঃ এ দুজনের সঙ্গেই আশরাফুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যার নেতৃত্বে ১৬ বছর আগে (২০০০ সালে) প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছিল আশরাফুলের, তিনি খালেদ মাহমুদ সুজন। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আশরাফুলের প্রথম অংশ নেয়াও খালেদ মাহমুদের মাধ্যমে। ২০০০ সালে জাতীয় লিগে আশরাফুল যখন প্রথম মাঠে নামেন, তখন ঢাকা মেট্রোর অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ। তার ঠিক এক বছর পর আশরাফুল যখন টেস্ট অভিষেকে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন তোলেন, তখন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। সেটাই শেষ নয়, আশরাফুল যখন সেঞ্চুরি পুরণ করেন, তখন তার পার্টনারও ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক। জাতীয় দলের এ দুই সাবেক অধিনায়ক আশরাফুলকে শুভ কামনা জানালেন। দুজনই রোববার জাগো নিউজের সাথে আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ওঠা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সে সব কথার ভীড়ে কিছু বিষয়ে নাঈমুর ও খালেদ মাহমুদ যেন কথা বললেন একই সুরে। দু’জনের কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছে শুভ কামনা, ‘আশরাফুল আবার ক্রিকেটে ফেরায় সত্যি ভাল লাগছে।’ নাইমুর ও খালেদ মাহমুদ বোঝাতে চেয়েছেন এই নিষেধাজ্ঞা মুক্তি আশরাফুলের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সনদের মত। তাদের কথায় পরিষ্কার, ‘আশরাফুল শুধু মেধাবি ব্যাটসম্যানই নয়। যথার্থই ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ; কিন্তু ভুল পথে পা বাড়িয়ে তিন বছরের বেশি সময় নিষিদ্ধ ছিলেন। এ দীর্ঘ সময় অপরাধবোধ ও অনুশোচনা তাকে দগ্ধ করেছে। পাশাপাশি ক্রিকেটের বাইরে থাকাটাও তার জন্য ছিল অনেক বড় কষ্টের, হতাশার। সব মিলিয়ে ওই সময়টা নিশ্চয়ই তার ভাল কাটেনি। আশা করি আবার তার জীবন ক্রিকেটময় হয়ে উঠবে।’খালেদ মাহমুদের কথা, ‘আমি তাকে (আশরাফুলকে) সেই ১২-১৩ বছর বয়স থেকে চিনি। তার মেধা ও প্রতিভা নিয়ে কখনোই কোন সংশয়-সন্দেহ ছিল না। তার এমন পরিণতি দেখে সত্যিই খারাপ লেগেছে। দুঃখ পেয়েছি। এখন তার ফেরা দেখে আনন্দিত হচ্ছি।’আশরাফুলকে অনেক বড় প্রতিভা অভিহিত করে জাতীয় দলের বর্তমান ম্যানেজার বলেন, ‘সন্দেহ নেই, সে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যরকম এক নাম।’ জাতীয় দলের হয়ে খেলায় এখনো নিষেধাজ্ঞা আছে। আইসিসি তা তুলে না নিলে, থাকবে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট পর্যন্ত। কারো কারো প্রশ্ন, ‘আচ্ছা ওই দুই বছর পর আশরাফুল কি আবার জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন? শারীরিক সক্ষমতা ও পারফরমেন্সটা কি আগের জায়গায় থাকবে?’ খালেদ মাহমুদ সুজনের ব্যাখ্যা, পারবে কি পারবে না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আমার মনে হয়, নিজেকে ফিরে পাবার অনুকুল বয়স তার থাকবে। ইউনুস খান ও মিসবাউল হক ৪০-এর আশপাশে গিয়েও জাতীয় দলে আছেন। সেঞ্চুরিও হাঁকাচ্ছেন। তাহলে আশরাফুল পারবে না কেন? এখন তার বয়স ৩২। দু বছর পর হবে ৩৪।’খালেদ মাহমুদের শেষ কথা, ‘তবে আমি চাই আশরাফুল এখন জাতীয় দলে ফেরার চিন্তা না করে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলুক। ক্রিকেটটা উপভোগ করুক। তারপর কি হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। খালেদ মাহমুদ যেখানে শেষ করেছেন নাইমুর রহমান দুর্জয়ের শুরুও সেখানে। আশরাফুলের প্রথম টেস্ট অধিনায়কের কথা, ‘আশরাফুলের ক্রিকেটে ফেরার সংবাদটা আমার কাছে অন্যরকম। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সঙ্গে আমার একটা অন্যরকম সম্পৃক্ততা আছে। আমি তার প্রথম টেস্ট অধিনায়ক। তার অভিষেক সেঞ্চুরির সময় ননস্ট্রাইক ব্যাটসম্যানও ছিলাম আমি। খুব স্বাভাবিকভাবে কিছু আবেগ জড়িত। সেই আশরাফুল পরে অন্যায় পথে হেঁটে নিন্দিত- সেটাও কাম্য ছিল না। ভালও লাগেনি।’ তবে নাইমুর কোন ভাবেই চান না আশরাফুল জাতীয় দলে ফেরার চিন্তায় মশগুল হোক। তার অনুভব, সেটা বুমেরাং হতে পাওে, ‘আমি কোনোভাবেই চাই না আশরাফুল এখন জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে ভাবুক। আবার জাতীয় দলে খেলতে হবে- এমন চিন্তা মাথায় ঢুকে গেলে একটা অন্যরকম চাপ এসে যাবে।’তবে আশরাফুলে ফেরা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। সেটাই জানালেন দুর্জয়, ‘এটা সত্যি তার ফেরা নির্ভর করবে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। প্রথমতঃ তার ফিটনেস লেভেল ও পারফরমেন্সের গ্রাফটা এমন উচ্চতায় থাকা জরুরী। তারপর বোর্ড এবং টীম ম্যানেজমেন্ট তথা নির্বাচকদের চিন্তা ভাবনা এবং নীতির ওপরও নির্ভর করবে। যা এখনই বলা কঠিন। তারচেয়ে আপাততঃ সে ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগি থাকুক। ক্রিকেট উপভোগ করুক।’ কঠিন বাস্তবতা হলো, আপাততঃ আশরাফুলকে তাই করতে হবে। সহসাই জাতীয় দলে ফেরার কোন পথ নেই। তার সামনে। এখন কিছু দিন ঘরোয়া ক্রিকেট, বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগই তার মুল বিচরণ ক্ষেত্র। এআরবি/আইএইচএস/এবিএস
Advertisement