মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ব্যস্ততম কুইন্সের ওজনপার্ক এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইমামসহ দুই বাংলাদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। শনিবার দুপুরের এ ঘটনাকে ‘ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলা’ হিসেবে উল্লেখ করে ঘাতককে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।ইমাম হত্যাকান্ডের ঘটনা আমেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম। শনিবার জোহরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার সময় নিউ ইয়র্ক সিটির ওজনপার্কে ‘আল ফোরকান জামে মসজিদ’র ইমাম এবং আরেকজন মুসল্লিকে এক বন্দুকধারী গুলি করে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক এবং ভীতি দেখা দিয়েছে। শনিবার তাৎক্ষণিক ওই বিক্ষোভে শত শত প্রবাসী অংশ নেন। বিভিন্ন রাজনীতিকরাও বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ এবং আমেরিকা-বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে এমন নৃশংসতার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তবে আমরা আশা করছি, মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় সিটি প্রশাসন আরো মনোযোগী হবেন। একই সঙ্গে ইমামসহ দুই বাংলাদেশির ঘাতককে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতারের দাবি জানান তারা। প্রকাশ্য দিবালোকে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার পর ঘটনাস্থলে সিটি মেয়র, সিটি কম্পট্রোলার, পাবলিক অ্যাডভোকেটসহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা না আসায় প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতারা। কমিউনিটি নেতা ও প্রবীণ আইনজীবী এন মজুমদার বলেন, এমন একটি নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটলো অথচ নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য সিটি অফিসের শীর্ষস্থানীয় ৩ কর্মকর্তার একজনও এলেন না। তাৎক্ষণিক ওই বিক্ষোভে নিউইয়র্কে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হক খান এবং বিয়ানিবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী স্মৃতি পরিষদের কর্মী ও নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের হাতে ঘাতকের বিচার ও কমিউনিটির নিরাপত্তা দাবি সংবলিত পোস্টার দেখা যায়। বিক্ষোভে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কামান্ড কাউন্সিল-এর আহবায়ক আব্দুল মুকিত চৌধুরী বলেন, ‘নিহত দুই বাংলাদেশিই মুসলিম পোশাকে ছিলেন। এ জন্য ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বর্বরোচিত আচরণের শিকার হয়েছেন তারা। এতে সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যা মামলায় ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করতে হবে।’ উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে জোহরের নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে নিউ ইয়র্কের আল-ফুরকান জামে মসিজদের ইমাম আলাউদ্দিন আকনজি (৫৫) ও থারা উদ্দিন নামে আরেক বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত। সিটি পুলিশ বলছে, গুলিবর্ষণের সংবাদ পাওয়া মাত্র টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মারাত্মক আহত অবস্থায় মাওলানা আলাউদ্দিনকে নিকটস্থ জ্যামাইকা হাসপাতালে এবং মুসল্লি থেরাউদ্দিনকে এলমহার্স্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। ইমামের মৃত্যু হয় কয়েক মিনিটের মধ্যেই। ৪ ঘন্টা পর ওই হাসপাতালেই মারা যান থেরাউদ্দিন। এসআইএস/পিআর
Advertisement