ধর্ম

আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ অনুগ্রহ লাভের আহ্বান

সুরা বাক্বারার ১৪৮ নং আয়াতে কাবা শরিফকে ক্বিবলা হিসেবে মেনে সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায়ের বিধি নির্দেশ করা হয়েছে। শুধু ঐ আয়াতেই নয় বরং পরবর্তী দুই আয়াতেও এ সংক্রান্ত নির্দেশ অব্যাহত ছিল। কারণ আয়াত তিনটি নাজিলের বিষয়বস্তু এক ও অভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে আনুগত্যকারীদের পরিপূর্ণ অনুগ্রহ লাভের আহ্বান জানান। এ নির্দেশ তিনটির উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-‘আর যে স্থান থেকেই তুমি বের হও না কেন’ মসজিদুল হারামের (বাইতুল্লাহ তথা কাবা শরিফের) দিকে মুখ ফেরাও। নিশ্চয় তা তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে (প্রেরিত) সত্য। তোমরা যা করছ, সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা উদাসিন নন।আর (সফরের উদ্দেশ্যে) যে স্থান থেকেই তুমি বের হও না কেন’ মসজিদুল হারামের (বাইতুল্লাহ তথা কাবা শরিফের) দিকে মুখ ফেরাও। এবং যেখানেই থাক না কেন সে (কাবা’র) দিকেই (নামাজের জন্য) ‍মুখ ফেরাও; যাতে লোকদের মধ্য থেকে সীমালংঘনকারীরা ছাড়া অন্য কোনো লোক তোমার সঙ্গে বিতর্ক করতে না পারে;  সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর না বরং একমাত্র আমাকেই ভয় কর; যাতে আমি আমার অনুগ্রহ তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে দান করতে পারি এবং যাতে তোমরা সৎ পথ পেতে পার।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৪৯, ১৫০)উল্লেখিত আয়াত দুটি এবং পূর্ববর্তী আয়াতটিও মুসলমানদের প্রধান ইবাদাত নামাজে ক্বিবলামুখী হওয়া সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সুরা বাক্বারার (১৪৮-১৫০) আয়াতত্রয়ে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্বিবলামুখী হয়ে মুসলমানদের ঈমানের পর প্রধান ইবাদাত নামাজ পড়ার জন্য তিনবার তাগিদ প্রদান করেন। এতে তিনটি উদ্দেশ্য নিহিত ছিল।ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিন বার তাগিদ প্রদান প্রসঙ্গে বলেন- প্রথম হুকুম ‍ছিল তাদের জন্য যারা কাবা শরিফকে দেখে; দ্বিতীয় হুকুম ছিল তাদের জন্য যারা পবিত নগরী মক্কায় অবস্থান করেও কাবা শরিফকে দেখতে পায় না; তৃতীয় হুকুম ছিল তাদের জন্য যারা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে।ইমাম কুরতুবি আয়াত তিনটি সম্পর্কে বলেন যে, প্রথম হুকুম হলো মক্কাবাসীর জন্য; দ্বিতীয় হুকুম হলো মক্কার বাইরের অন্যান্য শহরের অধিবাসীদের জন্য; আর তৃতীয় হুকুম হলো মুসাফিরদের জন্য।তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনা এসেছে-প্রথম আয়াতে কাবা শরিফকে ক্বিবলা হিসেবে পেতে বিশ্বনবির আকাঙ্ক্ষা ও তাঁর কবুলিয়তের উল্লেখ রয়েছে।দ্বিতীয় আয়াতে বর্ণনা হলো- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাহিদা কাবা শরিফকে ক্বিবলা রূপে পাওয়া আল্লাহ তাআলার মর্জি মোতাবেকই হয়েছে।তৃতীয় আয়াত নাজিলের বর্ণনা হলো- কাবা শরিফকে ক্বিবলা হিসেবে গ্রহণ করায় আহলে কিতাবের অনুসারীদের অযৌক্তিক কথা-বার্তার প্রতি উত্তর রয়েছে।কেননা এ ক্বিবলা সংক্রান্ত আলোচনা তাদের প্রতি নাজিলকৃত গ্রন্থেও বিদ্যমান ছিল যে, বিশ্বনবির ক্বিবলা হবে কাবা শরিফ। ফলে আল্লাহ তাআলা এ নির্দেশের ফলে তাদের ধর্মগ্রন্থের ভবিষ্যৎবাণীরও প্রতিফলন বাস্তবায়িত হলো। তাছাড়া আহলে কিতাবের অনুসারীরা কাবা শরিফকে বরকতময় স্থান হিসেবে বিশ্বাস করতো।সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত আয়াতসমূহের মাধ্যমে তাঁর প্রতি আনুগত্যের আহবান জানান। আনুগত্যের মাধ্যমেই তাঁর অনুগ্রহ লাভের ঘোষণা দেন। শুধুমাত্র তাঁকেই ভয় করার নির্দেশ দেন।  যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য পোষণ করবে এবং ভয় করবে; তারাই দুনিয়া পরকালে সফলতা ও মহাঅনুগ্রহ লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তাঁর অনুগ্রহ ও সফলতা লাভে কুরআন-সুন্নাহর আনুগত্য করার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এমএস

Advertisement