বিশেষ প্রতিবেদন

এবার ঘু‌রে দাঁড়া‌নোর পালা

তিন সপ্তাহ ধ‌রে পা‌নির স‌ঙ্গে যুদ্ধ ক‌রে এবার ঘু‌রে দাঁড়া‌নোর চেষ্টায় ব্যস্ত লালম‌নিরহা‌টের হাতীবান্ধা উপ‌জেলার তিস্তা পা‌ড়ের মানুষ। গত বৃহস্প‌তিবার উপ‌জেলার সা‌নিয়াজান ইউনিয়‌নের বন্যা কব‌লিত ক‌য়েক‌টি এলাকায় গি‌য়ে কাউ‌কে নৌকা মেরামত, কাউ‌কে ছেড়া জাল‌টি সেলাই, আবর কাউ‌কে টিন দি‌য়ে ঘ‌রের ছাউ‌নি মেরামত কর‌তে দেখা যায়।এর অা‌গে একই দিন বেলা সা‌ড়ে ১১টায় ওইসব এলাকায় অনলাইন নিউজ‌পোর্টাল জা‌গোনিউজ২৪ডটক‌মের সহ‌যো‌গিতায় দেড় হাজার বানভাসি মানু‌ষের মা‌ঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।তিন সপ্তা‌হের অব্যাহত বৃ‌ষ্টি ও তিস্তায় পা‌নি বৃ‌দ্ধির কার‌ণে ফয়জুল হ‌কের একমাত্র নৌকাটি পা‌নি‌তে ডু‌বে থাকায় বি‌ভিন্নস্থা‌নে ফু‌টো হ‌য়ে যায়। অথচ এই নৌকা‌টিই তার উপার্জ‌নের একমাত্র ভরসা। সারা‌দিন নৌকা নি‌য়ে তিস্তায় যে মাছ ধ‌রেন সেগু‌লো সন্ধ্যার অা‌গে অা‌গে এলাকার দুয়ানী বাজা‌রে বি‌ক্রি ক‌রেন। এরপর মাছ বি‌ক্রির সেই টাকা দি‌য়ে চালসহ যাবতীয় বাজার ক‌রে নি‌য়ে যান তি‌নি। এভা‌বেই গত ২০ বছর ধ‌রে চল‌ছে তার সংসার। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধ‌রে তার নৌকা‌টি নষ্ট হ‌য়ে বা‌ড়ি‌তে প‌ড়ে থাকায় এবার তি‌নি বা‌ড়ি থে‌কে বের হ‌তে পা‌রেননি। এই সময়টুকু তা‌কে কাটা‌তে হ‌য়ে‌ছে অ‌ন্যের ত্রা‌ণের দি‌কে চে‌য়ে।ত্রাণ বিতরণ শে‌ষে ফেরার প‌থে রাস্তার এক ধা‌রে নৌকা মেরামত করার দৃশ্য‌ দে‌খে ছ‌বি তোলার পর কথা হয় তার সঙ্গে। জানান জীবনের নানা কাহিনী।ফয়জুল হক ব‌লেন, প্র‌তি বছর ঘটনা ওই একটাই, বন্যা। পা‌নি‌তে ডু‌বে থাকা। ত্রাণ নি‌য়ে অাসা। এগু‌লো দেখ‌তে দেখ‌তে অার ভা‌লো লা‌গে না। সবার ভাগ্য বদ‌লে যা‌ছে, হামার ভাগ্যত অাঠা দেয়া। ন‌ড়ে না ভাগ্যখান।অ‌নেকটা বির‌ক্তির ক‌ণ্ঠেই তি‌নি এসব কথা ব‌লেন। এরপর তি‌নি ব‌লেন, এইডা কেমন জীবন কেউ তিন‌বেলা খা‌চে, অার কেউ এক‌বেলাও পায় না।দীর্ঘশ্বাস ফে‌লে ফয়জুল হক ব‌লেন, নদীত পা‌নি বা‌ড়ে গে‌লে মাছ পাওয়া যায় না বাজান। পা‌নি কম থাক‌লেও অা‌গের ম‌তো অার মাছ ধ‌রে না জালত। সব বিপদলা বাজান গরী‌বের। সব রাস্তা অা‌গোত গরী‌বের বন্ধ হ‌চে।পা‌শেই ছেড়া জাল সেলাই কর‌ছি‌লেন আইনাল ফ‌কির। একই গ্রা‌মের মানুষ তি‌নি। ফয়জুল হ‌কের কথার সূত্র ধ‌রে অাইনাল ফ‌কিরও একই কথা বল‌লেন, নদী‌তে অা‌গের ম‌তো অার মাছ পাওয়া যায় না।ত‌বে তি‌নি ব‌লেন, মা‌ছের দাম ভা‌লো পাওয়া যায় ব‌লেই অামরা এখ‌নো টি‌কে অা‌ছি। নাই‌লে না খায় ম‌রিবা হ‌লি হে।অার একটু‌ পা‌শেই ঘ‌রের টিন ঠিক কর‌ছি‌লেন একজন বয়স্ক মানুষ। নাম জান‌তে চাই‌লে জানা‌লেন, কা‌দের অালী। তি‌নি ব‌লেন, বন্যাত অার কত‌দিন ডু‌বে থা‌কি‌মো। এলা সোজা হ‌য়ে দাঁড়া‌বা হ‌বে। পেট তো বন্যা মা‌নে না। অভাব যখন বে‌শি ভোকও না‌গে‌ছে বে‌শি। হামাকও ত্রাণ নি‌তে লজ্জা লা‌গে। কিন্তু করার কিছু নাই। পেট যে মা‌নে না বাজান।অার একটু সাম‌নে এগি‌য়েই দেখা যায় একজন বৃদ্ধ বাঁশ দি‌য়ে ঝু‌ড়ি তৈ‌রি কর‌ছেন। কা‌ছে গি‌য়ে জানা গেল পু‌রোটা জীবন তি‌নি এভা‌বেই কা‌টি‌য়ে দি‌লেন। নাম জান‌তে চাই‌লেই বল‌লেন, কেন‌হে ত্রাণ দি‌বেন না‌কি। হুম বল‌তেই জানা‌লেন, অাতাহার মু‌ন্সি।তি‌নি বল‌লেন, এবারকার বন্যাটাও অ‌নেক বড় ছিল। অামার বা‌ড়ি ঘর এলাও ডু‌বে অা‌ছে পা‌নিত। বা‌ড়ির খাবার দাবার নাই। দি‌নে ২টার বে‌শি ঝু‌ড়িও বানাবা পারু না অার। বয়স হই গে‌ইছে। এভা‌বেই বু‌ঝি মোক ম‌রিবা হ‌বে। যামনত যে অা‌রো কত কষ্ট অা‌ছে অাল্লাহই জা‌নে।এমএএস/আরএস

Advertisement