সীমান্তের পাহাড়ি ছড়া থেকে উত্তোলিত পাথর ও ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে বিনা শুল্কে নিয়ে আসা চুনাপাথর থেকে বিজিবি-পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, চাঁদার ভাগ বাটোয়ারা হজম করছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক পরিচয়ধারীও। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাকমা সীমান্ত এলাকায় হরদম চলছে এই চাঁদাবাজি বাণিজ্য। সূত্র জানায়, উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের দুধেরআউটা গ্রামের নুর জামালের ছেলে বিজিবির কথিত সোর্স পরিচয়ধারী জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন এই চাঁদাবাজি বাণিজ্য। যেন দেখার কেউ নেই ! তবে বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সোর্স পরিচয়ধারী জিয়ার মোঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় বালিয়াঘাট ও টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে গেল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শীর্ষ পর্যায়ের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের হাতে আটক হয়ে জেলের ঘানি টেনেছেন কথিত সোর্স পরিচয়ধারী জিয়া। মাস ছয়েক পর আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা জিয়া সেই থেকে হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য। অতঃপর সহযোগী হয়ে উঠে স্থানীয় এক সাংবাদিক পরিচয়ধারী ব্যক্তি। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, দুইজনের অাঙ্গুলির ইশারায় সীমান্তে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি হয়ে আসলেও উল্টো ফেঁসে যাওয়া আর মামলা-হামলার ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ সেখানকার বাসিন্দারা। জানা যায়, শুধু পাথরই নয় টেকেরঘাট সীমান্তের অপর দুইটি পয়েন্ট দিয়ে বিনা শুল্কে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসা হ্যান্ডট্রলি বোঝাই চুনাপাথর থেকেও লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছেন সোর্স জিয়া। এদিকে, চাঁদাবাজি ও চোরাচালান বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারণা চললে কালভদ্রে সরেজমিন তদন্ত করতে বিজিবি ও পুলিশের দায়িত্বশীলরা কিছুটা তৎপরতা হয়ে উঠেন। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, চোরাচালানিদের দাপট এবং অতি সখ্যতায় স্থানীয় বিজিবি-পুলিশের কিছু অসৎ সদস্যের পরোক্ষ সহযোগিতার কারণে থমকে যায় তদন্ত কাজ, বেঁচে যান জিয়া ও এর সহযোগী। জানা যায়, টেকেরঘাট সীমান্তের পাহাড়ি ছড়া ও লাকমা ছড়া থেকে স্থানীয় কয়েক শতাধিক দিন-মজুর নারী-পুরুষ পাথর উক্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এই দুই ছড়া থেকে দুই সহস্রাধিক হ্যান্ডট্রলি বোঝাই পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌ-পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহের জন্য সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডারগার্ড (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বালিয়াঘাট বিওপি ক্যাম্পের অদূরে পাটলাই নদীর তীরে ডাম্পিং করা হয়। গত দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে স্থানীয় শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা এভাবেই সীমান্তের পাথর উক্তোলন ও ব্যবসা করে আসছেন। নাম প্রকাশে না করা শর্তে একাধিক পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, সীমান্তছড়া থেকে পাথর উত্তোলন ও ব্যবসা করার জন্য বিজিবির সোর্স (ইস্পাই) হিসেবে পরিচিতি জিয়াকে প্রতি হ্যান্ডট্রলি বোঝাই পাথরের জন্য ১৫৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। পাহাড়ি ছড়ার পাথর থেকে জিয়া চাঁদা হিসেবে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার থেকে টাকা থেকে ৫৫ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, চাঁদা না দিলে বিজিবি-পুলিশ ও স্থানীয় সেই সাংবাদিক দিয়ে মাঝে মধ্যে পাথর উক্তোলন ও ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হয়। এই অযুহাতেই প্রতিদিন ওই দুইটি পয়েন্ট দিয়ে আসা পাথর থেকেই গড়ে প্রায় অর্ধলাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন তিনি। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হারুন অর-রশিদ বলেন, সীমান্তে পুলিশের নামে চোরাচালান ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত জিয়া ও তার সহযোগীদের খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে তাহিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।সুনামগঞ্জস্থ বিজিবি-২৮ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লে. কর্নেল মো. নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, ইতিমধ্যেই ট্যাকেরঘাট এলাকা থেকে বেশ কয়েকটি চুনাপাথরের চালান আটক করা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায়কারী জিয়া ও তার সহযোগীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এআরএ/এমএস
Advertisement