দীর্ঘদিন যাবত ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে স্থায়ীভাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নতুন ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউই হচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অস্থায়ী ঠিকানা।অত্যাধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১৭ জুলাই থেকে পুরাতন ভবন ভাঙা শুরু হলে অনেকটাই ঠিকানাহীন হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। তাই অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে আগামী তিন বছরের জন্য ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতেই স্থান পাচ্ছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ভবনটি দ্বিতীয় তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ভাড়ায় ব্যবহার করা হবে আগামী তিন বছরের জন্য।জানা গেছে, ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর ভবনটির মালিক সালেহা মহিউদ্দিন, মিসেস রওশন আরা বেগম ও মামুনুর রশীদ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরীর বোন ও বোনের জামাতা এই ভবনের মালিক।আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভবনটি ভাড়া নিতে একটি চুক্তির খসড়া দেয়া হয়েছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে। দলীয় সভাপতির অনুমতি পাওয়ার পরই ভবনটির মালিকদের পক্ষ থেকে মামুনুর রশীদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তারপরই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।মাসিক ভাড়া সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে না পারলেও চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরেই সহযোগী সংগঠনগুলোকে তাদের অফিস সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠির মাধ্যমে জানানো হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ দলীয় কার্যালয় ছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, কৃষক লীগ, তাতী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ এ ভবনটিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করবে। যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে এরই মধ্যে ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দ্বিতীয় তলায় মহানগর দক্ষিণ, তৃতীয় তলায় ছাত্রলীগ এবং পঞ্চম তলায় শ্রমিক লীগ তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে।অন্যদিকে, আওয়ামী যুবলীগ ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ছাড়াও ২৫ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অফিস করবে। পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনটির নিচতলা একটি বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেয়া আছে বলে জানা গেছে।মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিনু খান বলেন, আমরা এখন ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়কে কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছি। ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ যদি আমাদের কোনো রুম দেয়া হয় তখন আমরা তা ব্যবহার করবো।যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বলেন, ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আমাদের জন্য একটি রুম রাখা হবে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের তৃতীয় তলাকে ব্যবহার করবো।স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ বলেন, আমরা দলীয় প্রধানের নির্দেশে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় অফিস করছি। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলে জানা গেছে।মহানগরের একজন নেতা বলেন, দলীয় কার্যালয়ের বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যেখানেই কার্যালয় নিতে বলবেন আমরা সেখানেই নেবো। এক্ষেত্রে এটা ঢাকা মহানগর উত্তরের এরিয়ায় হবে। ১৯ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আমাদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হলে দূর-দূরান্ত থেকে নেতাকর্মীদের আসার একটা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমরা উত্তরের কার্যালয় রাখতে চায়। তবে সেটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই হবে।জানতে চাইলে মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, দলীয় সভাপতির নির্দেশে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ভবন ভাড়া বিষয়টি দেখছেন। চুক্তি সম্পন্ন হলেই আমরা বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভেঙে সেখানে গড়ে তোলা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বহুতল ভবন। ১০ তলা এ ভবনে থাকবে ৬-৭তলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়। থাকবে কনফারেন্স হল, সেমিনার রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন ও সাংবাদিক লাউঞ্জ।দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ এপ্রিল নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন দিয়েছেন। ভবনটির নির্মাণের মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে।জানা গেছে, কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না দিয়ে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ভবনটি নির্মাণ করা হবে। কোনো ধরনের অনুদান না নিয়ে সম্পূর্ণ দলের ফান্ডে ভবন নির্মাণ করা হবে।আওয়ামী লীগের পুরনো অফিস ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের চারতলা ভবনটি গত ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেটা সেই সময় শেষ করা যায়নি। পরে বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে ওই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ। পাশে আরো কিছু জায়গাও দলীয় ফান্ড থেকে ক্রয় করা হয়েছে।লিজ ও জমি ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ হলে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকারি দল। পরে নকশা প্রস্তুত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদনের পর এখন বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছেন তারা।১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হতো।১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস স্থাপন করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন।এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দু’টি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর ১২২, সার্কিট হাউস রোডে কিছুদিনের জন্য আওয়ামী লীগের অফিস ছিল।পর আবারো পুরান ঢাকার নবাবপুরে অফিস স্থানান্তরিত হয়। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের বর্তমান অফিসটি ভাড়া নেয়া হয়।এইউএ/বিএ
Advertisement