চিনির পর এবার চালের বাজার অস্থির করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোনো প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পাইকারি বাজারে অব্যাহতভাবে বাড়ছে চালের দাম। এক থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা এর পেছনে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না। অনেকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি কেউবা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছেন। আবার অনেকে বলছেন, এর পেছনে দায়ী মালিকরা।তবে অজুহাত যাই হোক পাইকারি বাজারের প্রভাব পড়েছে চালের খুচরা বাজারে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হার বেড়েছে। এর মধ্যে চালের দাম বেড়েছে বলে স্বীকার করেছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার ঢাকার উত্তর বাড্ডা, কারওয়ানবাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, অন্যান্য চালের দামও কেজিতে এক টাকা বেড়েছে।মিল মালিকরা বলছেন, মৌসুমের শেষ দিকে এসে ধান সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের কারণে মোটা চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের পর প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তবে মোটা চালের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। ঈদের আগে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ২৬-২৮ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৯-৩০ টাকায়। একইভাবে ৪০-৪১ টাকার মিনিকেট এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২-৪৩ টাকায়। আর বিআর-২৮ (লতা নামে পরিচিত) চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৩৪-৩৭ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকায়। অন্যান্য চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ৫০ টাকা।তাদের অভিযোগ, দেশে বর্তমানে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও মোকাম মালিকরা দফায় দফায় পণ্যটির দাম বাড়াচ্ছেন।পাইকারিতে দাম বাড়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খুচরায়ও। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট ৪৪-৫২ টাকায়, নাজিরশাইল ৪৫-৫৪, লতা ৩৮-৪০ এবং মোটা চাল ৩১-৩৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী রহিম সরকার জানান, মোকাম মালিকরা দাম বাড়ানোয় পণ্যটি বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ঈদের পর সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তবে বাজারে এখনো চালের কোনো ঘাটতি দেখা যায়নি।চালের মোকাম মালিকরা জানান, এ বছর কৃষকরা চালের ন্যায্যমূল্য পাননি। বর্তমানে কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের লোকসানের পরিমাণ কমে আসবে।তবে মোকাম মালিকদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন রাজধানীর পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, অটোরাইস মিলারদের কাছে এখনো বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুদ রয়েছে। ব্যাংকঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল গুদামজাত করেছেন তারা। চালের বাজারে মূল্যবৃদ্ধি বা পতন মূলত তাদের ওপরই নির্ভর করছে।জাগো নিউজের শেরপুর প্রতিনিধি জানান, পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও গত কয়েক দিনে জেলায় চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে বিআর-২৮ ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং পাইজাম, তুলসিমালা ও চিনিগুড়া ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে মিল মালিকরা জানিয়েছেন।ইদ্রিস গ্রুপের চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া জানান, জিহান অটো রাইস মিলের উৎপাদিত ২৮ মিনিকেট চালে দাম কেজিতে ৫০ পয়সা বেড়েছে। পাইজামে বেড়েছে তিন টাকা, চিনিগুড়ায় ১০ টাকা। পাইজাম ও চিনিগুড়া বা তুলসিমালা ধানের মৌসুম না হওয়ায় এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।রোজবার্গ অটোরাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হযরত আলী দাবি করেন, তার মিলের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম বাড়েনি। ৫০ কেজির ২৮ মিনিকেট চালের বস্তা ১ হাজার ৫৫০ টাকা এবং নাজিরশাইল ২ হাজার ১৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।এমএ/এসএইচএস/এবিএস
Advertisement