জাতীয়

দেশে দারিদ্র্যের হার ২৫.৬ শতাংশ

দেশে দারিদ্র্যের হার এখন ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গত এক বছরে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে দশমিক ৮ শতাংশ। পাশাপাশি অতি দারিদ্র্যের হার এখন ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এই হিসাব গত জুন মাস পর্যন্ত। রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দারিদ্র্য পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের ফলাফল ধরে এই প্রাক্কলন করা হয়েছে।

Advertisement

দেশের মানুষের আয়-ব্যয়, ভোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ দারিদ্র্য পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করে থাকে বিবিএস। আর সেটা করে থাকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর খানা আয় ও ব্যয় জরিপের মাধ্যমে।

সর্বশেষ খানা জরিপটি হয়েছে ২০১০ সালে। তবে খানা ব্যয় জরিপের ফলাফল ধরে দুই বছর ধরে প্রতিবছরই দারিদ্র্যের হার প্রাক্কলনও শুরু করেছে বিবিএস। ২০১৫ সালে বিবিএসের পরবর্তী খানা ব্যয় জরিপ অনুষ্ঠিত হবে।

দারিদ্র্য হারের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সব সরকারের আমলেই দারিদ্র্যবিমোচনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই অগ্রাধিকারটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। দারিদ্র্য হার হ্রাস কোনো একক সরকারের কৃতিত্ব নয়।

Advertisement

ড. হোসেন জিল্লুর ব্যাখ্যা করে বলেন, ২০১০ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ভিত্তি করে বিবিএস এই সর্বশেষ দারিদ্র্য হার প্রাক্কলন করেছে। ২০০৫ সালে থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমেছে। এখন সেই একই হারে দারিদ্র্য কমছে বলে বিবিএস প্রাক্কলন করেছে। আর ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তিনটি সরকার ছিল। তার মতে, চরম দারিদ্র্য নিরসনে কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এই দুর্বলতা কাটানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নজিবুর রহমান বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতিবছর বিভিন্ন বিভাগের বার্ষিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এর অংশ হিসেবে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ দারিদ্র্য পরিস্থিতির হালনাগাদ তৈরি ও প্রকাশ করেছে। দুই বছর ধরেই দারিদ্র্য হারের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে।

বিবিএসের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের চরম বা হতদরিদ্রের হার কিছুটা কমে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে। ২০১৩ সালের একই সময়ে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০১০ সালের খানা ব্যয় জরিপে দেশের হতদরিদ্রের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিবিএসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দারিদ্র্যের হার কমানোর প্রবণতা ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ। পরের পাঁচ বছরে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ পয়েন্ট কমে ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। আর ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার কমানোর প্রবণতা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। এই পাঁচ বছরে সাড়ে আট শতাংশ পয়েন্ট দারিদ্র্য কমেছে। আর সর্বশেষ চার বছরে (২০১০ থেকে ২০১৪) দারিদ্র্য কমেছে মাত্র ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

Advertisement

দারিদ্র্য পরিমাপে খাদ্য গ্রহণ বা প্রত্যক্ষ ক্যালরি গ্রহণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সে অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন দুই হাজার ১২২ ক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করলে দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। আর এক হাজার ৮০৫ ক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণ করলে তিনি চরম দরিদ্র। খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি মৌলিক চাহিদা ব্যয় (সিবিএন) পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে বিবিএস। এতে খাদ্য, শিক্ষা, বস্ত্রসহ মৌলিক ১১টি সুবিধা মানুষ কতটা পাচ্ছে, সেই হিসাবও করা হয়।