বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত। অবসাদে বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন মা। ব্যর্থ হলেও তারপর থেকে গভীর মানসিক অসুখে ভুগছেন। সংসারে আছে ১২ বছরের এক ছোট ভাই। আর তাই নিজে ভেঙে না পড়ে এই ভেঙে পড়া সংসারটাকেই ঠেলে সোজা করে রেখেছে ১৪ বছরের এক ছোট্ট মেয়ে। রচনা নামের ওই কিশোরী টাকা আয় করে সংসার সংসার চালাচ্ছ। বাবা-মা আর ছোট্ট ভাইয়ের দেখাশুনা করার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনাটাও কিন্তু সমানতালে করে চলেছে হায়দরাবাদের এই ছোট্ট মেয়েটা।টাকার জন্য সকালে দোকান পরিষ্কারের কাজ করে সে। কাজ সেরে বাড়ি ফিরেই ভাইকে নিয়ে স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এক বাড়িতে বাসনমাজার কাজ করে। এরপর বাড়ি ফিরেও সংসারের কাজ সেই সঙ্গে নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা। রচনা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ১২ বছরের ভাইকেও পড়াশোনা করিয়ে বড় করার জেদ ছাড়েনি মেয়েটা।কয়েক বছর আগেও অবস্থা এতটা করুণ ছিল না রচনাদের। পরিস্থিতি ঘুরে যায় বাবার অসুখের পর থেকেই। তিন বছর আগে তার বাবা ইদাগিরির ক্যানসার ধরা পড়ে। রোগের কোপে এখন তিনি পুরোপুরি শয্যাশায়ী। চিকিৎসার খরচ সামলাতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের। দেনায় ডুবে যায় পুরো পরিবার। সংসারের এই পরিস্থিতিতে রচনার ঠাকুরদা আত্মহত্যা করেন। এরপর সংসারের সমস্ত চাপ এসে পড়ে রচনার মায়ের উপর। লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে সংসারটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু জীবনযুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করতে তারও বেশি দিন সময় লাগেনি। হার মেনে তিন তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দিন-রাত মুখ গুঁজে কাঁদতেন তিনি। ছেলেমেয়ে আর স্বামীর খাবার জোগাতে দিনের পর দিন নিজে না খেয়ে শুয়ে থাকতেন।মায়ের এই দুর্দশা দেখে আর ঠিক থাকতে পারেনি রচনা। মায়ের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু কীভাবে যে কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না সে। ঠিক করে মায়ের মতো সেও কাজ করবে। কিন্তু পড়াশোনা করার আপ্রান ইচ্ছা ছিল তার। আর একারণে হাল ছাড়েনি সে। এক দর্জির দোকান পরিষ্কারের কাজটা প্রথমে পেয়ে যায় এক প্রতিবেশীর সাহায্যে। কিন্তু এত অল্প টাকায় সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। একারণে তাকে আরো কাজ নিতে হয়েছিল। এই ভাবেই চলছে রচনার দিন। তার এই উদ্যোগ দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন স্কুলের শিক্ষকরাও। আপাতত পড়াশোনার কোনো খরচ লাগছে না তার। জেদি রচনা নিজের পড়াশোনা করেই বড় হতে চায়। বড় করতে চায় ভাইকেও।টিটিএন/এবিএস
Advertisement