ব্রাজিল দেশটার নাম শুনলেই সবার মনে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বিশ্বকাপ নামক টুর্নামেন্টের কথা। যে টুর্নামেন্টকে অনেকটা নিজেদের বানিয়ে রেকর্ড পাঁচবার শিরোপা জয়লাভ করেছে সাম্বার দেশটি। আর সেই দেশটাই কি না এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে স্বর্ণের খোঁজ পায়নি! অবাক করার মত ব্যাপার হলেও এটিই বাস্তবতা। বিশ্বকাপ ফুটবল পাঁচবার জিতলেও এখন পর্যন্ত একবারও ‘বিগেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকে সোনা জিততে পারেনি পেলে-গারিঞ্চার দেশটি।কিন্তু এবার যেন যে কোন মূল্যেই এই অমূল্য স্বর্ণটিকে নিজেদের করে নেওয়ার মিশনে নেমেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। উপলক্ষ অনেকটা মঞ্চস্থ করাই আছে। ঘরের মাঠেই এবার বসছে অলিম্পিকের আসর। সে সুবাদে স্বাগতিক দেশের তকমা লাগিয়ে অন্যান্য দলগুলোকে নাস্তানবুদ করার এটাই মোক্ষম সুযোগ ব্রাজিলের সামনে।একটু ইতিহাস ঘেটে দেখা যাক, এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে সর্বসাকুল্যে ২৫বার ফুটবল আয়োজিত হয়েছে। যেখানে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ সাফল্য তিনটি রৌপ্য পদক জয়। ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৮৮ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ফাইনালে হেরে সোনা জয়ের আশা জলাঞ্জলি দিতে হয়েছিল সেবারের ব্রাজিল দলকে। সর্বশেষ ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকেও সোনা জয়ের খুব কাছে চলে গিয়েছিল ব্রাজিল।কিন্তু শেষ সময়ে এসে খেই হারিয়ে ফেলে তারা। নেইমার, মার্সেলো, হাল্ক, পাতোদের সমন্বয়ে শক্তিশালি ব্রাজিল দলকে ২-১ গোলে হারিয়ে চমক দেখিয়ে সোনা জিতে নেয় মেক্সিকো। এতো কাছে এসেও স্বর্ণ জয়ের আক্ষেপ আজও নেইমারদের তাতিয়ে বেড়ায় সর্বত্র। এটারও একটা কারণ আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে চিরশত্রু আর্জেন্টিনার থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও অলিম্পিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার ধারে কাছেও নেই ব্রাজিল।২০০৪ এবং ২০০৮ সালের অলিম্পিকে টানা দু’বারই স্বর্ণ জিতে আর্জেন্টিনা। ২০০৮ সালে তো মেসি, অ্যাগুয়েরো, ডি মারিয়ার দাপটে সেমিফাইনালেই ছিটকে জেতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। সেবার ব্রোঞ্জ জিতেই সন্তুষ্ঠ থাকতে হয়েছিল পেলের দেশকে। আর্জেন্টিনার এমন সাফল্য ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দেয় অলিম্পিকে ব্রাজিলের অবস্থান অন্য দেশগুলোর মতই নগন্য; কিন্তু এবার ঘরের মাঠে অলিম্পিক বলেই কি না একটু বেশিই আশার আলো দেখছে দেশটি।ফুটবলে সবচেয়ে বেশিবার অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে গ্রেট ব্রিটেন এবং হাঙ্গেরি। যদিও ১৯৬৮ সালের পর এই দু দেশের কেউই আর সোনার মুখ দেখেনি অলিম্পিক ফুটবলে। তবুও অলিম্পিক ফুটবল আসলেই যেন প্রতিযোগিতার আভাস দেয় দলগুলো। প্রতিবারের মত এবারও ১৬টি দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে টুর্নামেন্টটি। গ্রুপ এ-তে স্বাগতিক ব্রাজিলের সঙ্গে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরাক এবং তিনবারের রৌপ্যজয়ী দল ডেনমার্ক।অন্যদিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা একটু কঠিন গ্রুপেই পড়েছে। ডি গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ আলজেরিয়া, হন্ডুরাস এবং সদ্যই ইউরো জয়ী দল পর্তুগাল। ফুটবল অনুরাগীদের হতাশার জলে ভাসিয়ে রোনালদো এবং মেসি কেউই এবার অংশ নিচ্ছেন না অলিম্পিক ফুটবলের আসরে। তাই তাদেও দ্বৈরথ দেখা থেকেও বঞ্চিত হল সমর্থকরা।ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট বলেই একটু বেশি সতর্ক ব্রাজিল। স্বর্ণ জয়ের জন্য কোপা আমেরিকার মত ফুটবল টুর্নামেন্টে নেওয়া হয়নি নেইমারকে। ছিল না ডগলাস কস্তার মত দ্রুতগামীর ফুটবলারও। নিজ দেশে বসতে যাওয়া অলিম্পিক ফুটবলে সাফল্য পেতে তাই শক্তিশালি দলই গড়েছে ব্রাজিল। নেইমারকে অধিনায়ক রেখে গাবিগোল এবং গ্যাব্রিয়েল হেসাসকে সঙ্গে নিয়ে দুর্দান্ত এক ব্রাজিল দল নিয়ে এবারের টুর্নামেন্টে নামতে যাচ্ছে সাম্বার দেশটি।তবে অন্যান্য দেশগুলো যেখানে খেলোয়াড় সঙ্কটে ভুগছে সেখানে ব্রাজিলের প্রতিদ্বন্দ্বী যেন ব্রাজিল নিজেই। একটু খোলাসা করে বলা যাক, ব্যর্থতার কারণে শতবর্ষী কোপার পরপরই সরিয়ে দেওয়া হয় কোচ দুঙ্গাকে। তার উপর দলে ইনজুরি সমস্যা প্রকট। এছাড়া রিও ডি জেনিরোতেও রয়েছে বিভিন্ন আতঙ্ক। এতোকিছু মাথায় রেখেই ঘরের মাঠে খেলতে নামবে ব্রাজিল।ব্রাজিল ছাড়াও টুর্নামেন্টে হট ফেবারিটের তকমা লাগানো আর্জেন্টিনার দিকে নজর থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে ১৮ সদস্যের অলিম্পিক দল নিয়ে এবারের ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছে আর্জেন্টিনা। দলে তারকা খেলোয়াড় বলতে কেউই তেমন নেই। এতোটাই খেলোয়াড় সঙ্কটে ভুগেছে দলটি যে অলিম্পিকের নিয়মানুযায়ী যেখানে ৩ জন ২৩-উর্ধ্ব ফুটবলার থাকতে পারবে একটি দলে সেখানে আর্জেন্টিনা দলে রয়েছে মোটে ২ জন।ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় ছাড়তে না দেওয়ার মানসিকতার বলি হচ্ছে আর্জেন্টিনার অলিম্পিক দল। সবচেয়ে বেশি কষ্টটা বোধহয় আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার দিবালার। কোপা আমেরিকাতে তাকে দলে না রেখে অলিম্পিকের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ক্লাব জুভেন্তাসের একঘুঁয়েমির কারণে অলিম্পিকে খেলা হচ্ছে না তার। ভঙ্গুর দল হলেও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের অ্যাঞ্জেল কোরিয়া এবং রিয়াল সোসিয়াদাদের গোলকিপার রুল্লিই আর্জেন্টিনার প্রধান ভরসা। নামেই যেমন ভার বহন করে আর্জেন্টিনার তেমনি জার্মানিও থাকবে স্বর্ণ জয়ের নেশায়।বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সামনে দ্বিতীয়বার অলিম্পিকে সোনা জয়ের হাতছানি। অবশ্য তাদের কাজটা সহজ হবে না। কেননা গ্রুপ পর্বেই তাদের লড়তে হবে বর্তমান সোনা জয়ী দল মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মত দলের সঙ্গে। ইউরো খেলেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানো জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের অলিম্পিকে খেলার কথা থাকলেও সেটি আর সম্ভব হয়নি ইউরো কাপে সুইডেনের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের ফলে। তাই গ্রুপ ‘বি’তে কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া এবং জাপানের সঙ্গে লড়তে বেশ বেগ পেতে হবে সুইডিশদের।এবারও কি আর্জেন্টিনা সোনা জিতে নিবে? নাকি সাবেক স্বর্ণজয়ী কোন দলই এবার জিতে নিবে স্বর্ণ! নাকি সবাইকে চমকে প্রথমবারের মত সোনা জয়ের আনন্দে ভাসবে সাম্বার দেশ ব্রাজিল? উত্তর মিলবে ২০ আগস্টের অলিম্পিক ফুটবলের ফাইনালে।অলিম্পিক নিয়ে জাগো চ্যাম্পিয়নের বিশেষ এই আয়োজন পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…আইএইচএস/বিএ
Advertisement