হোক তা ফুটবল কিংবা ক্রিকেট, বিশ্বকাপ যদি হয় একঝাঁক নতুন তারার অভুদ্যয়ের ক্ষেত্র, কোনো ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটারের বিশ্ব তারকা হবার মঞ্চ, তাহলে অলিম্পিক কী? অলিম্পিক হলো এমন এক ক্রীড়া আসর, যা সকল ক্রীড়াবিদের নায়ক হবার, ইতিহাস গড়ার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। কোন অ্যাথলেট, সাঁতারু জিমন্যাস্টসহ সকল ডিসিপ্লিনে কারো কালজয়ী হবার সবচেয়ে বড় ও উৎকৃষ্ট জায়গা। ইতিহাস সাক্ষী, অলিম্পিকের ১২০ বছরের ৩১তম আসরের সব কটায় না হলেও বেশ কিছু আসরে অনেক বড় ও উজ্জ্বল তারার দেখা মিলেছে। যারা নিজের মেধা-প্রজ্ঞা ও মনন দিয়ে সাফল্যের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। কেউ কেউ নিজের নামকে হিরক খচিত করে রেখেছেন। যাদের কৃতিত্ব, প্রাপ্তি ও অর্জন এখনো ইতিহাসের পাতায় সোনায় মোড়ানো।অলিম্পিক আসে, অলিম্পিক যায়। চার বছর পর পর মর্ত্যরে সেরা যজ্ঞ নিজ মহিমায় হয় উদ্ভাসিত। শুধু বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকেই নয়, নাড়া দিয়ে যায় সারা বিশ্বে। অন্য সময় যারা খেলা পছন্দ করেন না, তারাও টিভির সামনে বসে থাকেন। কিছু নতুন তারার দেখা মেলে। নতুন নতুন সাফল্য-ব্যর্থতার সাতকাহনও রচিত হয়; কিন্তু কিছু নাম এখনো অম্লান। কতগুলো তারা এখনো উজ্জ্বল। সেই তালিকায় কিছু নাম এখনো ইতিহাসের পাতায় স্থায়ী হয়ে আছে। ব্যক্তিগত নৈপুন্যের ঝলকানিতে আসর মাতিয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনের তালিকায় সবার আগে চলে আসে যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু জনি ওয়েসমুলারের নাম। আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম নায়ক তিনি। পরবর্তীতে যিনি পর্দায়ও নায়ক বনে যান। বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র টারজানের প্রথম নায়ক জনি ওয়েস মুলার। তারপরই চলে আসে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ অ্যাথলেট জেসি ওয়েন্সের নাম। এরপর অলিম্পিকের রানী হন এক জিমন্যাস্ট, নাম লারিসা লাতানিনা। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমানে ইউক্রেনের এ নারী জিমন্যাস্ট অলিম্পিকে প্রথম রানী। এরপর যার নাম স্বর্ণাক্ষওে লেখা, তিনি মার্ক স্পিৎজ। অলিম্পিক ইতিহাসে প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে এক আসরে ৭ স্বর্ণ জিতে যিনি হয়ে যান সব সময়ের সফলতম ক্রীড়াবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ সাঁতারু মার্ক স্পিৎজ উপাখ্যান শেষ হবার পরপর অলিম্পিক ইতিহাসের আরেক নায়িকা বনে যান এক নারী জিমন্যাস্ট; নাদিয়া কোমানিচি। রোমানিয়ার এ নারী জিমন্যাস্ট এখনো বিশ্বের সব নারী জিমন্যাস্টের আদর্শ। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের এক তুখোড় অ্যাথলেট, যিনি মেধা, কঠোর সাধনা ও অর্জনে অনন্য- তিনি কার্ল লুইস। এছাড়া আশির দশকে আরও দুজন অ্যাথলেট ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে রাজত্ব করেছেন। একজন রুশ পোল্ট ভল্টার (বর্তমানে ইউক্রেনে) সার্গেই বুবকা। আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রের নারী দৌড়বিদ ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নার। ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিক এ দুই মেধাবী অ্যাথলেটের সোনালী সাফল্যে ঘেরা। যুক্তরাষ্ট্রের সব সময়ের অন্যতম সেরা নারী দৌড়বিদ ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জোয়নারকে বিশ্ব নারী খাটো পাল্লার সব সময়ের দ্রুততম মানবী ভাবা হয়। সেই গ্রিফিথ জয়নার সিউল অলিম্পিকে ৩ স্বর্ণ জিতে ট্র্যাকের রানী বনে যান। তার মধ্যে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ও ছিল। আর পোল্টভল্ট ইতিহাসের সফলতম তারকা সার্গেই বুবকা ’৮৮’র পোল্টে স্বর্ণ জিতেছেন।ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের রাজা কার্ল লুইসের পর অলিম্পিক পায় মাইকেল ফেলপস নামে এক অসাধারণ প্রতিভাবান জলমানবের দেখা। সুইমিংপুলে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়া এ মাইকেল ফেলপস ছাড়িয়ে যান পূর্বসূরি মার্ক স্পিৎজকেও, যা কল্পনায় আসাও কঠিন, বাস্তবে তার স্বার্থক রূপ দিয়ে বিশ্বকে হতভম্ব করে দেন মাইকেল ফেলপস। একজন সাঁতারুর পক্ষে যত রেকর্ড গড়া সম্ভব, তাই করেন। প্রথম সাঁতারু ও ক্রীড়াবিদ হিসেবে এক আসরে সর্বাধিক ৮ স্বর্ণ বিজয়ের অনন্য কৃতিত্ব দেখান মাইকেল ফেলপস। তার মত অতগুলো স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্ব হয়তো নেই, তারপরও তিনি ইতিহাসের মহানায়ক। নাম উসাইন বোল্ট। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেট ও সাঁতারুদের দীর্ঘদিনের সাফল্যের ধারায় ছেদ টেনে জ্যামাইকার ২৯ বছর বয়সী অ্যাথলেট মেধা, মনন ও অধ্যবসায়ের মিশেলে এমন এক সাফল্যের ফলক স্থাপন করেছেন, যা পারেননি আর কেউ। বর্তমান প্রজন্মের হার্টথ্রব উসাইন বোল্ট। খেলাধুলার ছিটেফোটা খবরও যিনি রাখেন না, তার কাছেও পাবেন উসাইন বোল্টের নাম। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আর নেইমারের পর বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে উসাইন বোল্টই সবচেয় জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ। যিনি শুধু একজন সফল ও স্বার্থক অ্যাথলেটই নন। এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। তার নাম শোনামাত্র মনে প্রশ্ন জাগে ১০০ মিটার দূরত্ব ৯.৫৮ সেকেন্ডে পৌঁছে যাওয়া- এও কী সম্ভব? তাও কোন মানুষের পক্ষে। কোন চিতা, হরিণ হলে না হয় মানা যেত; কিন্তু একজন জলজ্যান্ত মানুষ কি করে এত চিতাসম ক্ষিপ্রতায় দৌড়ায়? তিনিই প্রথম স্প্রিন্টার যিনি নতুন বিশ্ব রেকর্ডের জন্ম দিয়ে ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে স্বর্ণ জেতেন। চার বছর পর সাফল্যের আরেক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেন। প্রথম স্প্রিন্টার হিসেবে পর পর দুই অলিম্পিকে আবারো ১০০ এবং ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জয়ের অসামান্য কৃতিত্ব দেখান এ জ্যামাইকান অ্যাথলেট। এটাই শেষ নয়, তিনিই একমাত্র অ্যাথলেট যিনি এক অলিম্পিকে তিন-তিনটি বিশ্ব রেকর্ডের স্রষ্টা হয়ে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন। এবার কি করবেন উসাইন বোল্ট? অলিম্পিকের ১২০ বছরে যা হয়নি কখনো, সেই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হবেন? প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে পরপর তিন অলিম্পিক গেমসের দ্রুততম মানব এবং ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জয়ের দুর্লভ কৃতিত্বটা কি তারই হবে? বেইজিং ২০০৮, লন্ডন ২০১২‘র পর এবার রিওতেও কী বিশ্বের দ্রুততম মানব হবেন উসাইন বোল্ট? পাশাপাশি আগের দুই আসরের মত এবারো ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও সবাইকে পিছনে ফেলে হ্যাটট্রিক ডাবল অর্জনের দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হবেন বোল্ট? গোটা বিশ্ব অধির আগ্রহে তা দেখতে উন্মুখ। দুনিয়াজোড়া বোল্টের শত কোটি ভক্ত আশায় বুক বাঁধতেই পারেন। ২০১৫ সালে বেইজিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও ১০০ এবং ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং ৪*১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জিতে এবারের গেমসেও হট ফেভারিট উসাইন বোল্ট। এক বছরের কম সময়ে এবার রিওতে আগের সে সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলেই অমর হয়ে থাকবেন জ্যামাইকান এই বজ্রমানব। অলিম্পিক নিয়ে জাগো চ্যাম্পিয়নের বিশেষ এই আয়োজন পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে…আইএইচএস/এবিএস
Advertisement