অফিসে খুব ঝামেলা হচ্ছে, বস আপনাকে অপছন্দ করেন। উনি মাঝে মাঝে চশমার ফাঁক দিয়ে এমনভাবে আপনার দিকে তাকান, যেন আপনি অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছেন। উনি কখনোই আপনার কথা বা কাজকে গুরুত্ব দেন না। আপনাকে দেখলে কিংবা আপনার কথাবার্তা শুনেও তিনি বিরক্ত হন। সর্বোপরি, তিনি আপনার উপস্থিতিও সহ্য করতে পারেন না। আপনি আপনার বসকে রিপোর্ট করেন, তিনি আপনার কাছ থেকে কাজ বুঝে নেন এবং আপনার সহযোগিতায় বিভিন্ন কাজ করে উনি ওনার বসের কাছে পেশ করেন। কিন্তু টপ লেভেলে উনি কখনোই আপনার নাম প্রকাশ করেন না। বরং আপনার কাজকে নিজের কাজ বলে চালিয়ে দেন। অনেক সময় আপনাকে উনি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু কেন তিনি এমন করছেন? চলুন আপনার বস কেন আপনাকে অপছন্দ করছেন, তার কিছু কারণ জেনে নেয়া যাক-• আপনি যখন ভালো কাজ করবেন, আপনার কাজে সফলতা আসবে তখন; যখন আপনার বস আপনাকে ভয় পেতে পারেন এই জন্য যে, আপনি তাকে টেক্কা দিতে পারেন। অনেকেই একটা মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। অনেকে ভাবে, এই ছেলে আমার চেয়ে বেশি বোঝে? ফলে তিনি আপনাকে কোনো কাজ স্বাধীন ভাবে করতে দিতে চাইবেন না। সবার ক্ষেত্রে তিনি ক্রেডিট নিতে চাইবেন। এক্ষেত্রে পরামর্শ হল, ভালো কাজ অব্যাহত রাখুন। আপনি অবশ্যই সামনের দিকে এগোবেন। • এক্ষেত্রে দোষটা কিন্তু আপনার। আপনি যদি কোনো কাজ বারবার ভুল করেন, তাহলে আপনার বস সুযোগ পাবেন। তিনি আপনার উপর আস্থা হারাবেন। কথায় আছে, যে কাজ করে সে ভুল করে। ভুল হতেই পারে, কিন্তু ক্রমাগত একই ভুল করাটা কিন্তু অন্যায়। এতে একটা সময় আপনার চাকরিও চলে যেতে পারে। তাই নিজেকে দক্ষ ও হুঁশিয়ার করে গড়ে তুলুন।• আপনার বস যদি ধারণা করেন যে, আপনি প্রতিনিয়ত তার সমালোচনা করেন বা আড়ালে তাকে নিয়ে বাজে কথা বলছেন এবং বিষয়টি যদি কিছুটা সত্য হয়ে থাকে তাহলে আপনার ও আপনার বসের সম্পর্ক তিক্ততায় রূপ নিতে পারে। • আপনার বস যদি তার বসের কাছে কোনো খারাপ ব্যবহার পান, তার প্রভাবটাও আপনার উপর পড়তে পারে। আর সেই খারাপ ব্যবহারের কারণ যদি আপনি হন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। • আপনি আপনার বসের চেয়ে বেশি স্মার্ট, বেশি আপডেট, আপনি আপনার বসের থেকে এই প্রজন্ম সম্পর্কে বেশি জানেন, তাহলে আপনার বস আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে পারেন। তিনি আপনার কাজের উপর নির্ভর থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে আপনাকে অপছন্দ করতে পারেন।• অনেকে বসের মন বুঝে চলতে পারেন না, এতে বসের সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। কোনো কোনো বস চান তার কর্মীরা তাকে সব ধরনের কাজে সমর্থন দিক। কোনো কোনো বস আছেন যারা চান তিনি হাসলে তার অধীনস্তরাও হাসবে। কিছুটা চাটুকারিতা ধরনের। সকল ক্ষেত্রে চাটুকারিতা না আবার। অনেক সময় দেখা গেল বস খুব কাজে ব্যস্ত, এমন সময় আপনি গিয়ে বললেন- আজ আগে আগে চলে যাবেন। যেখানে বস পরিশ্রম করছেন, সেখানে আপনি যদি তার সাথে সহযোদ্ধা না হন, কীভাবে বস আপনার উপর আস্থা রাখবেন? এক্ষেত্রে আপনার কমনসেন্সের অভাব বলতে হবে। • আপনার যদি অনেক বন্ধু থাকে আর আপনি যদি সেই বন্ধুদের নিয়ে অফিসে আড্ডাখানা বানিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার বস আপনার উপর বিরক্ত হতেই পারেন। অনেকে অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ ফেলে রেখে অকারণে ফোনালাপ করেন। এসব বস পছন্দ করেন না। অনেকে ফোনে একজনের পাশে বসে মিথ্যাচার করেন অপর প্রান্তের লোকটির সঙ্গে। তাহলে আপনি যে কাল বসের সঙ্গে মিথ্যা বলবেন না তার নিশ্চয়তা কী? মিথ্যা কথা কিন্তু বিশ্বাসের জায়গাটা হালকা করে দিচ্ছে। • জীবনে বড় হতে গেলে দায়িত্ব নিতে জানতে হবে। যে কাজ জানে, তাকে লোকে খুঁজে নেয়। কাজের পুরস্কার হচ্ছে দায়িত্ব। অনেকে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায়, কাজ নিতে চায় না। এরকম ফাঁকিবাজ টাইপের কর্মী বসরা ভালো চোখে দেখেন না। • আপনি আপনার বেতন নিয়ে খুশি নন, কিন্তু যে বেতন আপনি পাচ্ছেন বস সেটাকেই ন্যায্য ভাবছেন। এমন অবস্থায় বসের সঙ্গে আপনার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়, বস আপনাকে পছন্দ করেন না। অনেক কর্মী আছেন যারা প্রতিদিন বসের কাছে বেতন বাড়ানোর কথা বলেন, এতে তিনি ক্রমেই বসের অপছন্দের পাত্রে পরিণত হন। • আপনি প্রায়ই বসকে চাকরি ছাড়ার হুমকি দেন। আপনার কাছে আরো ভালো অফার আছে, আপনার ভালো লাগে না, আপনি আর চাকরি করবেন না, এরকম কথা শুনলে বসও আপনাকে অপছন্দ করতে শুরু করবে। ফলাফলটা কারো জন্যই ভালো নয়। আশাকরি সামনের দিনগুলোতে সবাই বসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন। শুভকামনা সবার জন্য।লেখক: সিইও, কর্পোরেট আস্ক এবং ট্রেইনার ও প্রফেশনাল সিভি রাইটার ই-মেইল: niazabeed@gmail.com এসইউ/এএ/আরআইপি
Advertisement