দেশজুড়ে

ঐতিহ্য বহনে হিমশিম পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

শতাধিক বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় নানান সমস্যায় জর্জরিত। প্রয়োজনীয় শিক্ষক স্বল্পতা, অল্প সংখ্যক কর্মচারী, বিশুদ্ধ পানির অভাব, আসবাবপত্রের সঙ্কট, শিক্ষকদের জন্য আবাসন সঙ্কট ও বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা শিফটে মোট এক হাজার ৫৫৮ জন ছাত্র অধ্যয়নরত। এদিকে দুই শিফটে প্রধান শিক্ষক, দুই সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ মোট ৫২ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ২৮ শিক্ষকই নেই। অফিস পিয়ন দাপ্তরিকসহ কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক কম। ৯ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ থাকলেও আছে মাত্র একজন।জানা গেছে, ১৯০৯ সালে ১৯ এপ্রিল পিরোজপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে কাজ শুরু করে। সেখানে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা একটি বড় টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৬০ সালে দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০০৫ সালে স্কুল চত্বরের উত্তরে আরেকটি নতুন দ্বিতল ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি সর্বমোট ৮.৮২ একর জমির উপর নির্মিত। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবনসমূহ, ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ, বিজ্ঞান ভবন, দুটি পুকুর, ছাত্রাবাস, প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন ইত্যাদি অবস্থিত।বিদ্যালয়টিতে এ পর্যন্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া, কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহম্মেদ, কবি আহসান হাবীব, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অভিনেতা গোলাম মোস্তফা, সাবেক সি এস পি মো. মূসা ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাবেক ডেপুটি গর্ভনর মোর্শেদ কুলি খানসহ দেশের খ্যাতিমান বহুব্যক্তি বর্গ এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করে আসছে। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল থাকার নিয়ম থাকলেও এর দুই পাশের ওয়ালই নেই। এর ফলে নানা রকমের গবাদি পশু, হালকা যানবাহন এবং বহিরাগতরা অনাধিকারবলে ঢুকে পড়ায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্রদের জন্য স্কুল কম্পাউন্ডারের মধ্যে এবং বাইরে হোস্টেল থাকলেও আবাসন সঙ্কটের কারণে শিক্ষকরাই ছাত্রদের হোস্টেলে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করেন। এছাড়া স্কুলে বিশুদ্ধ পানির অভাবও রয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলোতে বৈদ্যুতিক ফ্যান এবং লাইটিং ব্যবস্থাও ভালো না। সম্প্রতি খেলার মাঠ ভরাট করা হলেও বিদ্যালয় মাঠ এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনগুলোর আশেপাশে বর্ষার পানি এবং জোয়ারের পানি জমে থাকে।  শৌচাগারের অবস্থাও পরিবেশবান্ধব নয়। কিছুদিন আগে সন্দেহ বশত সাপ্লাই এর পানি খুলনার ল্যাবরোটোরিতে পরীক্ষা করানো হলে ত্রুটি দেখা দেয়। চলমান দুটি শিফটের জন্য শ্রেণিকক্ষে যতগুলো বেঞ্চ থাকা দরকার তা থেকে অনেক কম আছে। শিক্ষার্থীর জন্য এ বিদ্যালয়ে কোনো মিলনায়তন (হলরুম) নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে অনেক সময় ক্লাসরুমের মধ্যেই অনুষ্ঠান পালন করা হয়। অভিভাবক জহিরুল হক বলেন, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভালো। প্রতি বছরই এখানের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ও যুবাইর বলে, শিক্ষক না থাকার কারণে দুর্ভোগের মধ্যে আমরা পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির সাজিদ তারেক জানায়, বিদ্যালয়ের রিজার্ভ ট্যাঙ্কি ও ছাদে থাকা ওভারহেড ট্যাঙ্কিতে কিছু ময়লা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একারণে ময়লাযুক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। শিক্ষকদের বক্তব্য, বিদ্যালয়ের দুরাবস্থার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে কিছু শিক্ষকের দায়িত্বে থাকার কারণে একই সময় পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষক সন্তোষ কুমার মজুমদার বলেন, শিক্ষক স্বল্পতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ২০১৫ সালের এসএসসি পরিক্ষায় ১৬১ জনের মধ্যে ৬৫ জন, ২০১৪ এসএসসি পরিক্ষায় ৫৯ জন জিপিএ-৫ পেয়ে পরীক্ষায় কৃতিত্বের পরিচয় দেন।পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব সেরনিয়াবাত বলেন, বিদ্যালয়ে দুটি শিফটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৬শ জন। ৫২ জন শিক্ষকের বিপরীতে আছে ২৪ জন শিক্ষক। এর ফলে এতবড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক স্বল্পতা নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল মেরামত করা দরকার। এরপর তিনি বলেন, শিক্ষক সঙ্কটের কারণে আমাকে একই সময় পাঠদান ও প্রশাসনিক (বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন সভায় থাকতে হয়) কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এমএএস/পিআর

Advertisement