বিশেষ প্রতিবেদন

জঙ্গিবাদ বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ

নূহ-উল-আলম লেনিন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। জঙ্গিবাদ জাতীয় সমস্যা হলেও এর নিয়ন্ত্রণ বিশ্ব মোড়লদের হাতে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব।

Advertisement

জাগো নিউজ : প্রশ্ন উঠছে সরকারের জঙ্গি দমন নিয়ে। অনেকেই বলছেন, এতে সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে? আপনি কীভাবে দেখছেন?   নূহ-উল-আলম লেনিন : মানুষ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতেই পারে। এই আলোচনার আগে আমি বলব, জঙ্গিবাদের বিষয়টি আমলে নিতে হবে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই নীতিকে গুরুত্ব দিয়েই। বিশ্ব রাজনীতি থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন কোনো দেশ নয়। জঙ্গিবাদের পেছনে দারিদ্র্যও একটি প্রধান কারণ। এছাড়া ধর্মীয়বোধ এবং দারিদ্র্য দুটোর সমন্বয়ে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটছে। ফিলিস্তিন, লিবিয়া, আফগানিস্তানে মুজাহিদের অনেকেই অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধ করতে গেছেন। জাগো নিউজ : কিন্তু সেই প্রেক্ষাপট তো পাল্টাচ্ছেও। এখন তো অভিজাত ঘরের সন্তানরাও জঙ্গি হচ্ছে?নূহ-উল-আলম লেনিন : হ্যাঁ, সময়ের সঙ্গে জঙ্গিবাদের নীতিও পাল্টাচ্ছে। এটি ঘটছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের কারণে। এখন কানাডা, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের তরুণরাও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। একই কারণে বাংলাদেশের অভিজাত ঘরের সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এটি বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অংশ। জাগো নিউজ : বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ নিয়ে কী পরিকল্পনা থাকতে পারে? নূহ-উল-আলম লেনিন : দেশের স্বাধীনতা যারা মানতে পারেনি তারাই এ চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধিতা করেছেন, তারাই দেশকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছেন।জাগো নিউজ : এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ আর কী গুরুত্ব পেতে পারে? নূহ-উল-আলম লেনিন : মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা হয়েছে ভূরাজনৈতিক কারণেই, যা এখনো বিদ্যমান। পুরনো শত্রুদের দিয়েই নতুন ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী যুক্তরাষ্ট্রই তো বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদকে পুঁজি করে মুসলিম দেশগুলোতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। সবই বিশ্বায়নের স্বার্থে। আইএসের সৃষ্টি ধারাবাহিকতার ফল। জাগো নিউজ : দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির কথা বলছিলেন? নূহ-উল-আলম লেনিন : আন্তর্জাতিক নীতির দ্বারাই অভ্যন্তরীণ নীতি প্রভাবিত হয়। আজ জেএমবি বা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের যারা সদস্য তারা আন্তর্জাতিক কোনো না কোনো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। জাগো নিউজ : এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ নীতির মধ্যে কোনটিকে গুরুত্ব দেবেন? নূহ-উল-আলম লেনিন : আমি দুটোকেই গুরুত্ব দিই। বাংলাদেশ অস্থির থাকুক এটি যেমন আন্তর্জাতিক মোড়লরাও চায় আবার দেশের মধ্যেও অনেকে এটি বিশ্বাস করে। দশ বা বিশ জন হত্যা করে যে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, এটি জঙ্গিরাও জানে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে করছে কেন? করছে পানি ঘোলা করার জন্য। যেন বলার সুযোগ তৈরি হয় সরকার ব্যর্থ। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করা। মূলত এখন অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।জাগো নিউজ : অসাংবিধানিক সরকার আগেও ক্ষমতায় এসেছে। এখন এমন প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হচ্ছে কেন? নূহ-উল-আলম লেনিন : নানা কারণেই প্রেক্ষাপট পাল্টে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও সেনাবাহিনীকে উসকানো যাচ্ছে না। তাই ভিন্ন পথে ষড়যন্ত্র। নইলে জঙ্গি সংগঠন আইএস আছে, এটি প্রমাণে আদাজল খেয়ে নামছে কেন? জাগো নিউজ : আইএস তার নিজস্ব নীতি থেকেও বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে পারে? নূহ-উল-আলম লেনিন : তা দিতেই পারে। কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক মোড়লদের তৈরি করা ধারণা, যাতে মাতব্বরির ক্ষেত্র তৈরি হয়। জাগো নিউজ : আইএস নেই, তা কিসের ভিত্তিতে বলছেন? আইএস তো বাংলাদেশে কয়েকটি হামলার কথা স্বীকারও করেছে?নূহ-উল-আলম লেনিন : দেশে জঙ্গিবাদের ধারাবাহিকতা আছে। আইএস প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই দেশে জঙ্গি হামলা হয়েছে। এ দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য আইএস লাগে না। জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড আগে থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছিল। কোনো তদন্তে তো এখনও আইএসের বিষয়টি বেরিয়ে আসেনি। প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে তো একটি বিষয় প্রতিষ্ঠা পায় না। তার মানে আইএস বলে অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে আন্তর্জাতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা। এই রাজনীতি অনেকেই বোঝার চেষ্টা করেন না। জাগো নিউজ : এ নিয়ে তো সরকারের মধ্যেও দ্বিচারিতা আছে? নূহ-উল-আলম লেনিন : সরকার কখনো অফিশিয়ালি বলেনি যে দেশে আইএস আছে। সরকার বলছে, বাইরে থেকে উসকানি দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্রচার করে বাংলাদেশে আইএস প্রতিষ্ঠা দিতে চায়। জাগো নিউজ : জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার আশ্বাসে তো সরকারের লোকজন তৃপ্তও অনুভব করেন? নূহ-উল-আলম লেনিন :  বলতে পারেন এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির কৌশল। আন্তঃরাষ্ট্রীয় নীতিতে কোনো দেশকে এড়িয়ে চলা যায় না। আমরা অন্য রাষ্ট্রের সাহায্য নিতেই পারি। কিন্তু সাহায্যের নামে তো কোনো হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করতে পারি না। জাগো নিউজ : অনেকেই তো মনে করে দেশের রাজনীতি, সরকারের নীতি সেই প্রেক্ষাপটই তৈরি করে চলছে? নূহ-উল-আলম লেনিন : ভুল। এমন প্রেক্ষাপট যাতে তৈরি না হয় সেই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। যারা প্রেক্ষাপট তৈরির ষড়যন্ত্র করছে, সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করছে। জাগো নিউজ : এমন দমনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আসলে যাচ্ছে কোথায়? নূহ-উল-আলম লেনিন : আমরা জনগণের মধ্যে যাচ্ছি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করছি। গণতন্ত্র, সুশাসন, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। সর্বোপরি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছি।  জাগো নিউজ : এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, মানুষ কি তা মনে করছে? নূহ-উল-আলম লেনিন : মানুষ তো থেমে নেই। গুলশানের ঘটনার আগেও জঙ্গি হামলা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের টানা হত্যাযজ্ঞ চলছে। সব কি আটকে আছে? বাংলাদেশ তো এগিয়ে যাচ্ছে।  হয়তো পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আরেকটু এগগোনোর সুযোগ তৈরি হতো। জাগো নিউজ : রাষ্ট্র, সমাজের সর্বত্রই জঙ্গি আলোচনা। সরকার, পুলিশ একাকার হয়ে ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই প্রশ্নে জঙ্গিরা তো এক প্রকার সফলও বটে। নূহ-উল-আলম লেনিন : আপনি কি মনে করেন না, জঙ্গিদের এহেন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পবিত্র ধর্ম ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইসলাম বিতর্কিত হচ্ছে। আমি ধর্মনিরপেক্ষ বটে, কিন্তু ধর্মবিরোধী নই। ধর্মের নামে অধর্ম তো আমি মানতে পারি না। রাষ্ট্র আমার কাজটিই করছে। জাগো নিউজ : কিন্তু জঙ্গিরা এসবের মধ্য দিয়ে সরকারকে অধিকমাত্রায় অস্থির করে দিতে পারলো কিনা? নূহ-উল-আলম লেনিন : আপনার কথার কিছুটা সত্যতা আছে বটে। মানুষ তো ভয়ে আছে। জনমনে এক প্রকার আতঙ্ক কাজ করছে। সরকারকেও এক প্রকার সতর্কতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু সরকার তো অসহায় হয়নি। সরকার গোটা জাতিকে আরো ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছে। জঙ্গিবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক মহলেরও বাহবা পাচ্ছে। জাপান, ইতালির লোক মারা গেল। তারা তো সব গুটিয়ে নেয়নি। তারা পাশে থাকার আশ্বাসই দিয়েছে। সরকারের ওপর আস্থা রেখেই তারা সমর্থন দিচ্ছে। জাগো নিউজ : কিন্তু একটি মহল তো মনে করছে সরকার নিজেই ইসলাম প্রচারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে? নূহ-উল-আলম লেনিন : আমি তা মনে করি না। সরকার মূলত বিশেষ একটি ধর্মকে রক্ষা করছে। ইসলাম তো আক্রান্ত হচ্ছে। ইসলামের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামেরই ক্ষতি করা হচ্ছে। এখানে তো হিন্দু-খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে কোনো মৌলবাদ প্রকাশ পাচ্ছে না। এই অবস্থায় শান্তির ধর্ম ইসলামের মধ্যকার মৌলিক বিষয় যদি অক্ষুণ্ন  না থাকে, তাহলে কোনো না কোনোভাবে সমাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মধ্যপ্রাচ্যে তাই হচ্ছে।        এএসএস/এএইচ/এবিএস