পদ্মা, যমুনা, বড়াল, হুরাসাগর নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, সাঁথিয়া, সুজানগর ও বেড়া উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে প্রায় ছয় হাজার বসতবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। ছয় উপজেলায় ১৪৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছে। দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণ সামগ্রী এখনো পৌঁছায়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ও ভবনে পানি ঢুকে পড়ায় পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ২৩টি, ভাঙ্গুরা ৪০টি, ফরিদপুর ৩০টি, সাঁথিয়া ২টি, বেড়া ২৮টি এবং সুজানগরে ৯টিসহ মোট ১৩২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, জেলার ফরিদপুর ৯টি, সাঁথিয়া ২টি এবং বেড়ায় ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এসব বিদ্যালয়ে আবার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে চলনবিলের চাটমোহর উপজেলার বিলচলন, হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, নিমাইচড়া, গুনাইগাছা, মথুরাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এখন বন্যাকবলিত। নূর নগরের বড়াল নদীর ক্রস বাঁধ অপসারণ করায় পানি ঢুকে পড়েছে পৌর এলাকার বিভিন্ন মাঠে। পৌর শহরের বেশকিছু বাড়িঘরে পানি ঢোকার কারণে অনেকেই বাড়ি থেকে সরে অন্যত্র অবস্থান করছে। চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লা জানান, খুব দ্রুত বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত কয়েকদিনের বন্যায় হুরাসাগর, বড়াল ও যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বেড়া উপজেলার চরাঞ্চলসহ হাঁটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটোলা ইউনিয়নের পাঁচশতাধিক পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা, নয়নপুর, হরিরামপুর, মাছখালী, ঘিওর, রাকশার লয়লাপাড়ার মানুষের দুর্ভোগ চরমে।তবে এখন পর্যন্ত ক্ষেতের ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভুত ভূষণ সরকার। তবে এভাবে আরো দু-একদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রোপা আমনের ক্ষয়ক্ষতি হবে। এদিকে বন্যাদুর্গত অঞ্চলে এখনো কোন ধরনের সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছায়নি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকতা সিরাজুল ইসলাম জানান, সব উপজেলা থেকে লিখিতভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান আসবে। এরপর প্রয়োজনীয় ত্রাণ বরাদ্দ এবং বিতরণ করা হবে। জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো জানান, বন্যাদুর্গত এলাকার ত্রাণ সহায়তা দিতে সব উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানা হবে। তবে এখন পর্যন্ত পাবনায় বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। তবুও আমরা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তত রয়েছি। একে জামান/এএম/এবিএস
Advertisement