বিশেষ প্রতিবেদন

নতুন কারাগারে বন্দি সাক্ষাতের শুরুতেই ভোগান্তি

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড থেকে বন্দিদের কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয় গত শুক্রবার। নতুন এই কারাগারে বন্দিদের সংশোধনের জন্য মনোরম পরিবেশ আর সুযোগ সুবিধা থাকলেও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের নানা ধরনের ভোগান্তি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে সাক্ষাৎ কক্ষে বন্দিদের কাচের আয়নার পেছনে রাখার কারণে তাদের কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে কাচও ঘোলা হয়ে যায়। ফলে একসময় বন্দিদের দেখাও যাচ্ছিল না। সোমবার সরেজমিন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে এ চিত্রই চোখে পড়ে। নতুন কারাগারে এ দিনই প্রথম বন্দিদের সঙ্গে স্বজনের দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়। তবে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চরম ভোগান্তির কথা। ফরিদুর রহমান নামে একজন জাগো নিউজকে জানান, সকালে এসে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে ১ ঘণ্টা পর সাক্ষাতের টিকিট পেলাম। ছোট একটি রুমে ২০ বন্দিকে আনা হয়। এর সঙ্গে ৬০-৭০ জন স্বজন। সব মিলে কাচের ভেতরে থাকা বন্দিদের কোনো কথাই শোনা যায় না। কথার একপর্যায়ে কাচ ঘোলা হয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর বন্দিদের চেহারাও দেখা যায় না। প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে একই চিত্র দেখেছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কেরানীগঞ্জের এই কারাগারের সাক্ষাতের কক্ষে মোটা কাচ দেয়া হয়েছে। কাচের মধ্যে ছোট ছোট ছিদ্র রয়েছে। তবে জায়গার তুলনায় বন্দি বেশি থাকার কারণে কেউ কারো কথা শুনতে পারে না। পর্যাপ্ত জানালা না থাকায় বাতাস বের হতে পারে না। সাক্ষাতের একপর্যায়ে কাচ ঘোলা হয়ে যায়।এদিকে বন্দিদের সময়মত খুঁজে না পেয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারাগারের সামনে বসে থাকতে দেখা গেছে অনেককে। শামীম আহমেদ নামে এক বন্দির চাচা জাগো নিউজকে বলেন, ভোররাতে এসেছি। চারবার টিকিট কেটে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও তারা আমার ভাতিজাকে আনতে পারে না। বলে খুঁজে পায় না। সারাদিনে আর পাবো কিনা জানি না। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারারক্ষী বলেন, নতুন কারাগারে আসার কারণে গত ৪-৫ দিন সাক্ষাৎ বন্ধ ছিল। আজকে একবারে অনেক স্বজন এসেছে। পাশাপাশি কারাগারের ভেতরে গোছগাছের অনেক কাজ এখনো বাকি। তাই আমরা আসামিদের ঠিকমতো খুঁজে বের করতে পারছি না। কারাগারের এসব ভোগান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে জায়গা স্বল্পতা। কারাগারে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বন্দি থাকলেও একসঙ্গে মোট ৪০ জন বন্দি স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পায়। এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, নতুন কারাগারে বন্দিদের দেখা করার জায়গা অনেক ছোট। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, বর্তমানে আসামিদের দেখা করার জন্য একটি দোতলা ভবন রয়েছে, যাতে একসঙ্গে মাত্র ৪০ জন আসামি তার পরিবারের লোকদের দেখা করতে পারবে। তবে আগামীতে এই ভবনকে চারতলা করা হবে এবং পাশে আরেকটি চারতলা ভবন তৈরি করা হবে, যাতে একবারে ৮০ জন আসামি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারে। এর আগে ২৯ জুলাই শুক্রবার একদিনে সব বন্দিকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এই কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ হলেও বর্তমানে মোট ৬ হাজার ৪০০ বন্দি রয়েছে। এআর/এসএইচএস/এবিএস

Advertisement