অর্থনীতি

২৫ শতাংশ কারখানায় এখনো বেতন বাকি

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ পোশাক কারখানায় বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তাদের মতে, তোবা গ্রুপের পাঁচটি ও এর বাইরে তিনটি বাদে অন্য কারখানাগুলোতে বেতন-বোনাস নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। ওই সব কারখানার শ্রমিকরা পাওনা নিয়ে গ্রামে যেতে শুরু করেছেন। তোবা ও বাকি তিন কারখানার সমস্যা আজ রবিবার সমাধান হতে পারে।

Advertisement

তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ২৫ শতাংশ কারখানায় বেতন ও বোনাস দেওয়া বাকি ছিল। সেগুলোতে আজ বেতন দেওয়া হতে পারে।

দেশে মোট পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এর মধ্যে এখন সাড়ে তিন হাজার উৎপাদনে আছে আর প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক সেগুলোতে কাজ করছে বলে দাবি মালিকদের। এসব কারখানার শ্রমিকরা ঈদে বাড়ি ফেরার আগে চলতি জুলাই মাসের বেতন আগাম দেওয়ার দাবি করে আসছিল। গত ১৫ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল ছিল জুলাই মাসের বেতন ও বোনাস দেওয়ার শেষ দিন। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঠেকাতে তারা রোজার শুরু থেকে ১১৩৪টি কারখানায় নজরদারি শুরু করে। এর মধ্যে ৪১টি কারখানায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৭টির সমস্যা মিটিয়ে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে। চারটি (তোবার পাঁচ কারখানাকে একটি ধরে) কারখানার শ্রমিকরা গতকাল পর্যন্ত বেতন পাননি।বিজিএমইএ কেন্দ্রীয়ভাবে যেসব কারখানায় বেতন দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয় সেগুলোর মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে মধ্যস্ততা করে থাকে। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা এলাকাভিত্তিক কাজ করে থাকেন। পুরো খাতের তথ্য আছে ও প্রত্যেকটি কারখানার শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন শ্রমিক সংগঠন নেই। ফলে কত শতাংশ কারখানায় শ্রমিকরা বেতন পেয়েছেন, কত শতাংশ কারখানায় আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কতগুলোতে ঈদের আগে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই- এমন নির্ভুল তথ্য পাওয়া দুষ্কর।বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি  বলেন, ‘যে চারটি কারখানায় সমস্যা চলছিল, তাতে প্রায় দুই হাজার ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। পোশাক খাতে মোট ৪০-৪২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। আমরা তাঁদের বড় কোনো ঝামেলা ছাড়া বেতন-বোনাস দিতে সক্ষম হয়েছি। ফলে ৯৯ শতাংশ কারখানায় কোনো সমস্যা হয়নি। বাকিদের আজ বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে বলে আশা করছি।’তিনি জানান, তোবা গ্রুপের সাতটি কারখানার মধ্যে দুটির বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচটিতে এক হাজার ৬০০ শ্রমিক কাজ করেন। কর্তৃপক্ষ কাল (আজ রবিবার) এক মাসের বেতন ও বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। গ্রুপটির মালিক দেলোয়ার হোসেন তাজরীনে আগুনের মামলায় জেলে থাকায় প্রতিষ্ঠানটি সংকটে পড়েছে। এখন তারা জমি অথবা কারখানা ভবনের কিছু অংশ বিক্রি করে বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। গতকালও দেলোয়ার হোসেনের দুই আত্মীয়কে শ্রমিকরা বাড্ডার কারখানায় আটকে রেখেছিল। পুড়ে যাওয়া তাজরীন ছিল তোবা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান।এস এম মান্নান কচি আরো জানান, কারওয়ানবাজারের এস নাহার গার্মেন্টের শ্রমিকদের (প্রায় ১৫০ জন) পাওনা দেড় মাসের বেতন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মিরপুরের জুকি গার্মেন্টের (৭০০ শ্রমিক) শ্রমিকদের বেতন আজ দেওয়া হবে বলে বিজিএমইএকে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। গাজীপুরের ট্রেডমার্ক গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি কারখানার ২০০ জন শ্রমিক বেতন পাননি। তাঁদের আজ বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে মালিকপক্ষ।বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, প্রায় ২৫ শতাংশ কারখানায় এখনো বেতন পরিশোধ করা হয়নি। তবে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কাল (আজ) বোঝা যাবে সব শ্রমিক বেতন পেলেন কি না। তিনি জানান, বিজিএমইএর সদস্য নয় এমন কিছু কারখানায় শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেন না।বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন দাবি করেন, প্রায় ৩০ শতাংশ কারখানায় এখনো বেতন হয়নি। আজ সেগুলোতে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি প্রায় ১০টি কারখানার কথা জানান, যেগুলোর মালিককে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কারখানার কর্মকর্তাদেরও খোঁজ মিলছে না। সূত্র: কালের কন্ঠ

Advertisement