২০১৪ সালে বেশকিছু বাজারে চাঙ্গাভাব পরিলক্ষিত হলেও সামগ্রিকভাবে টানা তৃতীয় বছরের মতো বিশ্বব্যাপী কমেছে পিসি বিক্রি। গার্টনারসহ অন্য আরেকটি বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক জরিপ প্রতিবেদনে এমন তথ্যই বেরিয়ে আসে।গার্টনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় গত বছরের একই সময় প্রকৃতপক্ষে পিসি বিক্রি ১ শতাংশ হারে বেড়েছে। এদিকে ভিন্ন মাপকাঠি বিবেচনায় এনে আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায়, ২০১৩ সালের তুলনায় গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে পিসি বিক্রি কমেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাকটা করপোরেশন (আইডিসি) এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী পিসি বিক্রি কমবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আগের দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিসির বাজার সর্বশেষ প্রান্তিকে আইডিসির পূর্বাভাসের তুলনায় ভালো গেছে। তবে এখনো পিসি নির্মাতাদের তাদের পণ্যের বাজার বাড়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে পিসি বিক্রি বাড়ার খবর দিলেও সম্পূর্ণ প্রতিবেদনে গার্টনার জানায়, ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী পিসি বিক্রি এর আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এ নিয়ে টানা তৃতীয় বছরের মতো কমল পিসি বিক্রি। তবে বাজারে পিসির চাহিদা বাড়ছে। এমনটাই দাবি করেন আইডিসির জ্যেষ্ঠ গবেষক জে চোউ। তিনি বলেন, ‘বাজারে পিসির চাহিদা বাড়ছে। তবে ২০১৪ ছিল পিসি নির্মাতাদের জন্য আরো একটি খারাপ বছর।’লেনোভো, হিউলেট প্যাকার্ড ও ডেলের মতো শীর্ষস্থানীয় পিসি নির্মাতাদের বিক্রি খানিকটা বেড়েছে। এ বাজারের দখল গত প্রান্তিকে পিসি নির্মাতা ছোট কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অনেকটাই শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে চলে আসে। লেনোভো এখনো বিশ্বের শীর্ষ পিসি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এইচপির বিক্রি খানিকটা বেড়েছে। এদিকে অ্যাপলের পিসি বিক্রি এ সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে এ বাজারের শীর্ষস্থান দখলে নিতে পারেনি মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।গার্টনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর বিশ্বব্যাপী পিসি নির্মাতারা মোট ৩১ কোটি ৫৯ লাখ পিসি সরবরাহ করে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ কম। প্রতিবেদনে গার্টনার আরো জানায়, এর আগের দুই বছরও পিসি বিক্রি হ্রাস পেয়েছিল।বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিকল্প সেবা বাজারে আসার কারণে পিসি বিক্রি তিন বছর ধরে কমছে। বিকল্প সেবা বলতে মূলত মোবাইল ডিভাইসগুলোকেই বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ডিভাইসগুলোর মধ্যে ট্যাবলেটের বিক্রি হ্রাস পাচ্ছে। মূলত ট্যাবলেটের কারণেই পিসি বিক্রি কমতে শুরু করে। এখনকার অনেক কম্পিউটারেই ট্যাবলেটের চেয়ে অধিক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। আর পিসির ওজনও এখন আগের তুলনায় অনেক কম। এদিকে পিসি নির্মাতারা বিক্রি বাড়াতে এর দামও কমাচ্ছে। ফলে যে কারণে গ্রাহক পিসি থেকে ট্যাবলেটের দিকে ঝুঁকেছিলেন, একই কারণে এখন ট্যাবলেট থেকে পিসির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু পিসির বাজার আগের অবস্থানে ফিরে আসতে কী পরিমাণ সময় লাগবে, তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না।আর এ বাজার আগের অবস্থায় আসবে কিনা, তাও নিশ্চিত না। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাত থেকে অর্থ রোজগারে এখনো আশাবাদী।
Advertisement